বেশ কিছুদিন ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকার সামগ্রিক উন্নয়ন সমূহ দেখে আসার চেষ্টা করেছি। এমন কি নিজ এলাকার সরকারি, বেসরকারি, ব্যক্তি মালিকানা প্রতিষ্ঠান সমূহের গেটাপ-মেকাপও দেখেছি। কমবেশি ওইসব প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের সাথে একত্রে বসা, কথা-বার্তা বলারও সুযোগ হয়েছে এবং বিভিন্ন সভা-সেমিনারে তাদের বক্তব্যের সাথে তেমন মিল খুজে পেতে কষ্ট হইছে। অর্থাৎ রিজাল্টবেইজ কোন কাজেরই দৃশ্যমান অগ্রগতি চোখে পড়েনি বরং ৩০/৭০ ফারাক বলে মনে হয়েছে। এতে পাঠক যাই ভাবুন না কেন বাস্তবতা খতিয়ে দেখার দায়িত্ব কিন্তু নাগরিক হিসেবে আপনারও রয়েছে। কেউ কেউ ভাবচ্ছেন এই ব্যক্তিটি সরকারের উন্নয়ন বিরুদ্ধে কথা বলচ্ছেন না তো। হ্যা এমনটিই পাঠক মনে আসাই স্বাভাবিক! তবে দয়া যারা এমনটি ভাবছেন তারা পুরা লেখাটা পড়–ন তারপর আপনি আপনার মন্তব্য করেন তাতে কোন সমস্যা নেই।
এবার ফিরে আসি মুল কথায়, আপনারা নিশ্চিয় জানেন ২০৩০ সালের মধ্যে এদেশের উন্নয়ন অগ্রগতি এসডিজি’র আলোকে হতে হবে। এসডিজি কি তাও হয়তো আপনি জানেন। তারপরও একটু বলে রাখি-টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (ঝউএং) বা বৈশ্বিক লক্ষ্যগুলি হলো ১৭টি আন্তঃসংযুক্ত বৈশ্বিক লক্ষ্যগুলির একটি সংগ্রহ যা "সকলের জন্য একটি ভালো এবং আরও টেকসই ভবিষ্যৎ অর্জনের পরিকল্পনা হিসাবে তৈরি করা হয়েছে। জাতিসংঘ লক্ষ্যগুলো প্রণয়ন করেছে এবং “টেকসই উন্নয়নের জন্য বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রা” হিসেবে লক্ষ্যগুলোকে প্রচার করেছে। বাংলাদেশে এসডিজি অর্জনে ও উন্নয়নের প্রভাব জোরদারে সহযোগিতা করতে টেকসই উন্নয়নের অ্যাজেন্ডা ২০৩০ ও ইউএন ডেভেলপমেন্ট সিস্টেম রিফর্ম (ইউএনডিএস)-এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জাতিসংঘ সংস্থাগুলো নতুন ও সুসঙ্গত এক পদ্ধতিতে একযোগে কাজ করে যাচ্ছে।
টেকসই উন্নয়নে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, দারিদ্র্য দূরীকরণ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, শান্তি, সুশাসন, পুলিশ সংস্কার, মানবাধিকার, পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রজনন স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা, জনসংখ্যা, শিশু ও মাতৃ উন্নয়ন, টিকা কর্মসূচি, মাতৃ ও শিশু পুষ্টি, খাদ্য নিরাপত্তা, কিশোর ও তরুণ উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা, সাক্ষরতা, সংস্কৃতি, যোগাযোগ, ঐতিহ্য, শ্রম মানদণ্ড ও কর্মসংস্থান, অভিবাসন, শরণার্থী, মাদক ও অপরাধ, শিল্পোন্নয়ন, সক্ষমতা উন্নয়ন, প্রকল্প সেবা, শান্তিরক্ষা, স্বেচ্ছাশ্রম, সন্ত্রাস দমন, কৃষি উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা ও গবেষণা, এইচআইভি-এইডস, বাণিজ্য, আনবিক শক্তি, অন্তর্ভূক্তিমূলক আর্থিক রূপান্তর, অবকাঠামো ও পুনরুদ্ধার, মানব বসতি ও যোগাযোগ এবং প্রচারণা কার্যক্রমসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশে জাতিসংঘ সরকারকে সহযোগিতা করে চলেছে।
এবার এই এসডিজি’র আলোকে এই দেশে হাজার হাজার কোটি টাকায় বিভিন্ন সেক্টরাল উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান। চলমান এসব উন্নয়ন কার্যক্রমগুলি কি ‘সাসটেইনএবল ডেভেল্পমেন্ট গ্লো’ অর্থাৎ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার আলোকে বাস্তবায়ন হচ্ছে কি? যদি না হয় তাহলে এ উন্নয়নের ভবিষ্যৎ কি হবে? হয়তো অচিরেই ভেস্তে যাবে? এতে করে সরকার ও ক্ষমতাশীন দলের সুনাম হবে না দুর্নাম হবে? একটু ভেবে দেখার সময় এখনই! অন্যদিকে এসডিজি’র আলোকে উন্নয়ন হলে ক্ষতিটা কার হবে আর লাভটা কার হবে তারও হিসাব মেলাবার সময় এখনই??
এই সব হিসাব নিকাশ মিলাতে গিয়ে অনেক সময় আপনি দেখে থাকবেন যে কোন অবোকাঠামো উন্নয়ন বলুন বা অন্যান্য কার্যক্রমসমূহ বলুন তা একটি পক্ষ বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান অপর পক্ষ কাজটি এসডিজি’র আলোকে বুঝে নেয়ার জন্য দায়িত্বে থাকেন। আর ওই জেলার উর্দ্ধতন কর্তা ব্যক্তিরা থাকেন সারপ্রাইজ মনিটরিংএ। এভাবে বাস্তবায়ন হয়ে আসছে টেকসই উন্নয়ন কার্যক্রম সমূহ। আপনারা প্রায়স বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় দেখতে ও শুনতে পান যে ওমুক কাজের গুণগত মান ভালো হয়নি, কাজের ৩ মাসের মধ্যে ওমুক ফেটে গেছে, ধসে গেছে, তমুক হয়নি, ওমুককে দুর্নীতির দায়ে দুদক তলব করেছে, তমুকের বাসায় আয়ের সাথে অসংগতি, অঢেল অর্থ-সম্পদ পাওয়ায় ওমুককে গ্রেফতার করেছে দুদক ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমরা যদি সত্যিকারে টেকসই উন্নয়ন চাই তাহলে বাস্তবায়নধীন উন্নয়ন এলাকার সচেতন নাগরিক নিজের কাজ হিসেবে পজিটিভ পর্যবেক্ষণের মধ্যদিয়ে ওই কাজটি আদায় করে নিতে হবে। নাগরিকের অধিকার কাগুজে-কলমে থাকলেও তা বাস্তবে কখনও দেখা মেলে না। যার ফলে যে কোন উন্নয়ন কার্যক্রম অল্প বয়সে মৃত্যু বরণ করে। ভোগান্তি পোহাতে হয় নাগরিকদেরই।
এই হিসাবটা আপনাকেই মিলাতে হবে। কারন আপনিই এই দেশের নাগরিক। আর নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার সবধরণের কাজের পজিটিভ সুপারভিসনের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন আদায় করে নেয়া।