• 03 May, 2024

সংবিধানে বর্ণিত অধিকার ও আসন্ন সংসদ নির্বাচন!

সংবিধানে বর্ণিত অধিকার ও আসন্ন সংসদ নির্বাচন!

'আমার ভোট আমি দেবো যাকে খুশি তাকে দেবো' 'না কি আমার ভোট আমি দেবে যেনে বুঝে যোগ্য ব্যক্তিকে দেবো'? গণতন্ত্র পূনরোদ্ধারের সময়ে এ শ্লোগানটি এক সময় হরহামেসা সকলের মুখে মুখে উচ্চারিত হতো। এখন হয়তো এ শ্লোগান বেমান হয়ে দাড়িয়েছে কি?

সম্প্রতি ০৪ নভেম্বর উদযাপন হয়ে গেলো জাতীয় সংবিধান দিবস । দেশের সকল ধর্ম-বর্ণের একমাত্র রক্ষাকবজ এই ‘সংবিধান’। সংবিধানে বর্ণিত সকল অধিকার দেশের সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষ কতটুকু পেয়ে আসছেন সেটা কি কখনও আমরা খতিয়ে দেখেছি?  আমরা একবার একটু চোখবুলিয়ে নিবো আমাদের দেশের দলিলে রাষ্ট্র পরিচালনার মুলনীতি সমূহ কি কি রয়েছে।

 বাংলাদেশের সংবিধানের ৮-২৫ নং অনুচ্ছেদ বর্ণিত রয়েছে: ৮. মূলনীতিসমূহ ৯. জাতীয়তাবাদ ১০. সমাজতন্ত্র ও শোষণমুক্তি ১১. গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ১২. ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা ১৩. মালিকানার নীতি ১৪. কৃষক ও শ্রমিকের মুক্তি ১৫. মৌলিক প্রয়োজনের ব্যবস্থা ১৬.  গ্রামীণ উন্নয়ন ও কৃষি বিপ্লব ১৭. অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা ১৮. জনস্বাস্থ্য ও নৈতিকতা ১৮ক. পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উন্নয়ন ১৯. সুযোগের সমতা ২০. অধিকার ও কর্তব্যরূপে কর্ম ২১. নাগরিক ও সরকারী কর্মচারীদের কর্তব্য ২২. নির্বাহী বিভাগ হইতে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ ২৩. জাতীয় সংস্কৃতি ২৩ক. উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি ২৪. জাতীয় স্মৃতিনিদর্শন, প্রভৃতি ২৫. আন্তর্জাতিক শান্তি, নিরাপত্তা ও সংহতির উনয়ন।

এবার আমরা দেখবো সংবিধানে নাগরিকের মৌলিক অধিকার সমূহ কি কি রয়েছে : সংবিধানের ২৬-৪৭ নং অনুচ্ছেদ বর্ণিত রয়েছে,  ২৬। মৌলিক অধিকারের সহিত অসমঞ্জস আইন বাতিল ২৭। আইনের দৃষ্টিতে সমতা ২৮। ধর্ম, প্রভৃতি কারণে বৈষম্য ২৯। সরকারী নিয়োগ-লাভে সুযোগের সমতা ৩০। বিদেশী, খেতাব, প্রভৃতি গ্রহণ নিষিদ্ধকরণ ৩১। আইনের আশ্রয়-লাভের অধিকার ৩২। জীবন ও ব্যক্তি-স্বাধীনতার অধিকাররক্ষণ ৩৩। গ্রেপ্তার ও আটক সম্পর্কে রক্ষাকবচ ৩৪। জবরদস্তি-শ্রম নিষিদ্ধকরণ ৩৫। বিচার ও দন্ড সম্পর্কে রক্ষণ ৩৬। চলাফেরার স্বাধীনতা ৩৭। সমাবেশের স্বাধীনতা ৩৮। সংগঠনের স্বাধীনতা ৩৯। চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাক্-স্বাধীনতা ৪০। পেশা বা বৃত্তির স্বাধীনতা ৪১। ধর্মীয় স্বাধীনতা ৪২। সম্পত্তির অধিকার ৪৩। গৃহ ও যোগাযোগের রক্ষণ ৪৪। মৌলিক অধিকার বলবৎকরণ ৪৫। শৃঙ্খলামূলক আইনের ক্ষেত্রে অধিকারের পরিবর্তন ৪৬। দায়মুক্তি-বিধানের ক্ষমতা ৪৭। কতিপয় আইনের হেফাজত ৪৭ক। সংবিধানের কতিপয় বিধানের অপ্রযোজ্যতা।

এবার আসি অন্য প্রসঙ্গে, ধর্মীয় উৎসব বলি, যে কোন উৎসব বা দেশে প্রচলিত অন্যান্য সকল উৎসবকে হার মানিয়ে দেয় নির্বাচনকে ঘিরে। নির্বাচন আসলেই সব বয়সী মানুষের মধ্যে একটা উৎসব উৎসব ভাব সৃষ্টি হয়। হোক সে কোন ক্লাব, সমিতি, ইউনিয়ন, উপজেলা,  জেলা পরিষদ বা সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন মানেই পাউয়ার বা ক্ষমতা বা কর্তৃত্ব। আর ক্ষমতা বা কর্তৃত্ব মানে কি দায়িত্বহীনতার পরিচয় দেয়া? না কি অন্যায়কে সমর্থন করা? না কি সমাজ রাষ্ট্রের ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠায় নিজের উপর অর্পিত দায়িত্বটুকু পালন করা? এই মূহুর্তে এ যে কয়েকটি শব্দের সাথে যারা পরিচিত হলেন তারা একটু বলেন তো এর কোনটা আপনি বা আমি পালন করছি! বা এর কোন বাক্যটা আমাদের সংবিধানের যায়।

তারপরও, নির্বাচন আসলে আমাদের দেশে চলে মাসব্যাপী মহাউৎসব। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিগত দিনের যত ভালো-মন্দ বাদ বিচার শুরু হয়। আলোচনায় ভরে উঠে চায়ের দোকান, ক্লাব, রেস্তোরাঁয়, বাস্ট্যান্ড, কোট-কাচারীসহ সর্বত্রই। এসব আলোচনায় নির্মল বিনোদন উপভোগ করেন সব শ্রেণিপেশার মানুষ। পরিশেষে যিনি মনোনয়ন পান তার সমর্থক গোষ্ঠী ভোট সংগ্রহে মাঠে নেমে পড়েন। বাড়ি বাড়ি যেয়ে সালাম বিনিময়। চলে প্রতিশ্রুতি দেয়াও। সামনের বার নির্বাচিত হলে আপনাদের এটা করে দেবো ওটা করে দেবো নানান প্রতিশ্রুতি। নির্বাচিত হওয়ার পর অনেকেরই আচারণ, ব্যবহার পুরাটা পাল্টায় যায়। এর কোনটাই উপরোল্লেখিত সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মুলনীতি ও নাগরিকের মৌলিক অধিকারে সাথে যায় কি? 

এ সময় ভোটারা হিসাব নিকাশ করতে শুরু করেন। আর বার বার পিছনের দিনের কথা তুলে ধরে বলতে থাকেন ওমুকের সময় এটা হয়নি ওটা হয়নি ইত্যাদি।  এবার আমরা নতুন মুখ দেখতে চাই। কিন্তুু আমরা যারা ভোটার তারা কি একবারও ভেবে দেখেছি যে ওমুকের আমলে কি কি উন্নয়নমুলক কাজ হইছে বা তার আমলের আগের আমলে যিনি ক্ষমতায় ছিলেন তার আমলেই বা কি কি উন্নয়ন হইছে? আমরা সাধারণ মানুষ সেব মুল্যায়ণ করতে শিখি নাই। এভাবে চলতে থাকলে সাংবিধানিক অধিকার শত বছরেও অর্জন হবে কি?