• 03 May, 2024

সংসদ সদস্যের দায়িত্ব, সংবিধান, ভোট ও নির্বচান

সংসদ সদস্যের দায়িত্ব, সংবিধান, ভোট ও নির্বচান

ধর্ম-বর্ণ জাতি ভেদে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের পারিবারিক, সামাজিক পর্যায় বাংলাদেশের মানুষ যতগুলো উৎসব পালন করে থাকে তার চেয়ে বোধকরি অধিকতর উৎসমূখর পরিবেশে দীর্ঘসময় ধরে নির্বাচন উপভোগ করেন। বিষয়টি আপনিও হয়তো আমার সাথে একমত হবেন।

তবে যে কোন নির্বাচনের চেয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আমজনতা অতিউৎসভরে উপভোগ করেন। আর এ নির্বাচনটি মূলত: দলীয় নির্বাচন। নির্বাচনে যে দল সংখ্যা গরিষ্টতা অর্জন করবে সেই দলের নেতৃত্বেই রাষ্ট্র পরিচালনা হবে এবং তাদের নিয়ন্ত্রণে দেশ চলে। এটা হলো মোটা দাগের কথা।

এবার আসি একজন সংসদ সদস্য দায়িত্ব ও কার্যপরিধি নিয়ে আমাদের সংবিধানে কি বলা হয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী একজন সংসদ সদস্য আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্যে যথাযথ পদ্ধতি অবলম্বনপূর্বক বিল উত্থাপন করতে পারবেন এবং তিনি অন্য কোন সংসদ সদস্য কর্তৃক উত্থাপিত বিলের ওপর ভোট দিতে পরবেন। ১৫ দিনের নোটিশ সাপেক্ষে তিনি জাতীয় সংসদের অধিবেশনে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারবেন।

বাংলাদেশে একজন সংসদ সদস্য বেতন-ভাতাসহ নানা ধরণের সুযোগ সুবিধা ভোগ করেন। সংসদ এর কমিটি এবং এর সদস্যরা কিছু সুবিধা এবং অনাক্রম্যতা ভোগ করে। সংসদে কার্যক্রমের বৈধতা কোনো আদালতে প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে না। একজন সংসদ সদস্য বা তার কোনো কমিটিতে তার বা তার দ্বারা বলা কোনো কথা, বা প্রদত্ত কোনো ভোটের বিষয়ে কোনো আদালতে কার্যক্রম চালাতে দায়বদ্ধ নন। সংসদের একজন সদস্য বা কর্মকর্তা যাঁর হাতে কার্যপ্রণালী নিয়ন্ত্রণের জন্য ক্ষমতা ন্যস্ত থাকে, সংসদে ব্যবসা পরিচালনা বা শৃঙ্খলা রক্ষণাবেক্ষণ তার কোনো ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য কোনো আদালতের এখতিয়ারের অধীন নয়। সংসদ একটি আইন দ্বারা নিজের, তার কমিটি এবং সদস্যদের জন্য অন্যান্য বিশেষাধিকারও নির্ধারণ করতে পারে। তবে এ ধরনের কোনো আইন এখনো পাস হয়নি। যাইহোক, সংসদের অধিবেশনের আগে এবং পরে এবং তিনি যে কমিটির সদস্য হন তার একটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফৌজদারি অপরাধ ব্যতীত অন্য কোনো অপরাধে সংসদ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা যাবে না। স্পিকারের অনুমতি ব্যতিরেকে কোনো গ্রেপ্তার করা যাবে না বা কোনো দেওয়ানি বা ফৌজদারি প্রক্রিয়া হাউসের আশেপাশে পরিবেশন করা যাবে না।

যতটুকু জানাগেছে একজন সংসদ সদস্য প্রতিবছর চার কোটি টাকার মতো থোক বরাদ্দ পাবেন। এই থোক বরাদ্দের পরিমাণ আগে ছিল দুই কোটি টাকা। থোক বরাদ্দের টাকা একজন সংসদ সদস্য তাঁর নিজের পছন্দ মতো উন্নয়ন প্রকল্পে খরচ করতে পারেন। তিনি কোন প্রকল্পে এ টাকা খরচ করবেন সেটি সম্পূর্ণ তাঁর এখতিয়ার।

স্থানীয় পর্যায়ে কাজের বিনিময়ে খাদ্য, বয়স্ক ভাতা, নানা ধরণের সামাজিক নিরাপত্তা-বেষ্টনী সহ প্রায় ৪০ ধরণের প্রকল্প আছে। এসব প্রকল্প থেকে কারা সুবিধা পাবেন সেটি স্থানীয় সংসদ সদস্যের পরামর্শ দেওয়ার সুযোগ আছে। এলাকার শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য সহ নানা ধরণের প্রতিষ্ঠানে সংসদ সদস্যদের সম্পৃক্ততা থাকে।

এছাড়া জেলা পরিষদ আইন এবং উপজেলা পরিষদ আইন অনুযায়ী সংসদ সদস্যদের নিম্নোক্ত ক্ষমতা চর্চা করতে পারেন:
জেলা পরিষদে সংসদ সদস্যদের অবস্থান জেনে নেয়া যাক: 
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদের অধীন নির্বাচিত কোন জেলার সংসদ-সদস্যগণ উক্ত জেলার পরিষদের উপদেষ্টা হইবেন এবং তাঁহারা পরিষদকে উহার কার্যাবলী সম্পাদনে পরামর্শদান করিতে পারিবেন। 

উপজেলা পরিষদ আইন ১৯৯৮ (১৯৯৮ সনের ২৪ নং আইন ):
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬৫ এর অধীন একক আঞ্চলিক এলাকা হইতে নির্বাচিত সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্য পরিষদের উপদেষ্টা হইবেন এবং পরিষদ উপদেষ্টার পরামর্শ গ্রহণ করিবে। সরকারের সহিত কোন বিষয়ে পরিষদের যোগাযোগের ক্ষেত্রে পরিষদকে উক্ত বিষয়টি সংশ্লিষ্ট এলাকার সংসদ সদস্যকে অবহিত রাখিতে হইবে। পরিষদ উহার প্রতিটি উন্নয়ন পরিকল্পনার একটি অনুলিপি সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্যের সুপারিশ গ্রহণপূর্বক উহার বাস্তবায়নের পূর্বে সরকারের নিকট প্রেরণ করিবে এবং জনসাধারণের অবগতির জন্য পরিষদের বিবেচনায় যথাযথ পদ্ধতিতে প্রকাশ করিতে বা ক্ষেত্র বিশেষে তাঁহাদের মতামত বা পরামর্শ বিবেচনাক্রমে উক্ত পরিকল্পনা সম্পর্কে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারিবে।

সংবিধানে একজন সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্যতা-অযোগত্য সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক:  
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান (১৯৭২ সনের নং আইন ) উল্লেখ করা হয়েছে, 
৬৬। (১) কোন ব্যক্তি বাংলাদেশের নাগরিক হইলে এবং তাঁহার বয়স পঁচিশ বৎসর পূর্ণ হইলে এই অনুচ্ছেদের (২) দফায় বর্ণিত বিধান-সাপেক্ষে তিনি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হইবার এবং সংসদ-সদস্য থাকিবার যোগ্য হইবেন।
(২) কোন ব্যক্তি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হইবার এবং সংসদ-সদস্য থাকিবার যোগ্য হইবেন না, যদি
(ক) কোন উপযুক্ত আদালত তাঁহাকে অপ্রকৃতিস্থ বলিয়া ঘোষণা করেন;
(খ) তিনি দেউলিয়া ঘোষিত হইবার পর দায় হইতে অব্যাহতি লাভ না করিয়া থাকেন;
(গ) তিনি কোন বিদেশী রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করেন কিংবা কোন বিদেশী রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করেন;
(ঘ) তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোন ফৌজদারী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হইয়া অন্যূন দুই বৎসরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তাঁহার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বৎসরকাল অতিবাহিত না হইয়া থাকে;
৪[(ঙ) তিনি ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ যোগসাজশকারী (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আদেশের অধীন কোন অপরাধের জন্য দণ্ডিত হইয়া থাকেন;
(চ) আইনের দ্বারা পদাধিকারীকে অযোগ্য ঘোষণা করিতেছে না, এমন পদ ব্যতীত তিনি প্রজাতন্ত্রের কর্মে কোন লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকেন; অথবা]
(ছ) তিনি কোন আইনের দ্বারা বা অধীন অনুরূপ নির্বাচনের জন্য অযোগ্য হন।
৫[(২ক) এই অনুচ্ছেদের (২) দফার (গ) উপ-দফা তে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোন ব্যক্তি জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক হইয়া কোন বিদেশী রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করিলে এবং পরবর্তীতে উক্ত ব্যক্তি-
(ক) দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণের ক্ষেত্রে, বিদেশী রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ত্যাগ করিলে; কিংবা
(খ) অন্য ক্ষেত্রে, পুনরায় বাংলাদেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করিলে-
এই অনুচ্ছেদের উদ্দেশ্য সাধনকল্পে তিনি বিদেশী রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন না।]
৬[(৩) এই অনুচেছদের উদ্দেশ্য সাধনকল্পে কোন ব্যক্তি কেবল রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পীকার, ডেপুটি স্পীকার, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপ-মন্ত্রী হইবার কারণে প্রজাতন্ত্রের কর্মে কোন লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত বলিয়া গণ্য হইবেন না।]
(৪) কোন সংসদ-সদস্য তাঁহার নির্বাচনের পর এই অনুচ্ছেদের (২) দফায় বর্ণিত অযোগ্যতার অধীন হইয়াছেন কি না কিংবা এই সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুসারে কোন সংসদ-সদস্যের আসন শূন্য হইবে কি না, সে সম্পর্কে কোন বিতর্ক দেখা দিলে শুনানী ও নিষ্পত্তির জন্য প্রশ্নটি নির্বাচন কমিশনের নিকট প্রেরিত হইবে এবং অনুরূপ ক্ষেত্রে কমিশনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হইবে।
(৫) এই অনুচ্ছেদের (৪) দফার বিধানাবলী যাহাতে পূর্ণ কার্যকরতা লাভ করিতে পারে, সেই উদ্দেশ্যে নির্বাচন কমিশনকে ক্ষমতাদানের জন্য সংসদ যেরূপ প্রয়োজন বোধ করিবেন, আইনের দ্বারা সেইরূপ বিধান করিতে পারিবেন।

বি:দ্র: লেখাটি বাংলাদেশ সংবিধান থেকে নেয়া যা জনসচেনতার জন্য প্রকাশ করা। বানান বা এর কোন শব্দ চয়নে ত্রুটি হলে নিজ গুণে ক্ষমা করবেন- সম্পাদক, নড়াইলকণ্ঠ।