• 08 May, 2024

গাজা নিয়ে জাতিসংঘে ভোটাভুটি ফের পেছাল, শুক্রবার হবে তো?

গাজা নিয়ে জাতিসংঘে ভোটাভুটি ফের পেছাল, শুক্রবার হবে তো?

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় সহায়তা বাড়ানোর বিষয়ে একটি প্রস্তাবের ওপর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ভোট আবারও পিছিয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) এই ভোটাভুটি হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা আরও বিলম্বিত হয়।

অবশ্য শুক্রবার (২২ ডিসেম্বর) এই প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি হতে পারে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র এই প্রস্তাবে যে পরিবর্তনগুলোর কথা বলেছিল সেটা তারা আদায় করে নিয়েছে এবং এখন প্রস্তাবটিকে সমর্থন করা যেতে পারে বলে জানিয়েছে।

শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকায় সহায়তা বাড়ানোর জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি প্রস্তাবের ওপর ভোট আরও বিলম্বিত হয়ে শুক্রবারে গড়িয়েছে। যদিও ইসরায়েলের কট্টর মিত্র এবং ভেটো ক্ষমতার অধিকারী যুক্তরাষ্ট্র এই প্রস্তাবে যে পরিবর্তনগুলো চেয়েছিল তা তারা আদায় করে নিয়েছে এবং বলেছে, তারা এখন প্রস্তাবটিকে সমর্থন করতে পারে।

রয়টার্স বলছে, হামাসকে নির্মূল করার লক্ষ্যে ১০ সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান চালাচ্ছে এবং সংশোধিত এই রেজুলেশনটি গাজার ২৩ লাখ মানুষের কাছে সাহায্য বিতরণের বিষয়ে ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণকে দুর্বল করে দিচ্ছে না।

মূলত মিসর থেকে রাফাহ ক্রসিং এবং ইসরায়েল নিয়ন্ত্রিত কেরেম শালোম ক্রসিংয়ের মাধ্যমে গাজায় সীমিত ত্রাণ বিতরণ পর্যবেক্ষণ করে থাকে ইসরায়েল।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের উত্থাপিত এই প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, ‘গাজায় তাৎক্ষণিকভাবে সব হামলা বন্ধ করতে হবে, বন্দিদের বিনা শর্তে মুক্তি দিতে হবে এবং গাজার সাধারণ মানুষের কাছে বিপুল ত্রাণ পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে।’

আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে সংঘাতের সকল পক্ষকে অবশ্যই তাদের বাধ্যবাধকতা মেনে চলার কথা উল্লেখ করে এই প্রস্তাবে জাতিসংঘের একটি পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা দ্রুত কার্যকর করারও অনুরোধ করা হয়।

গত সোমবার এই প্রস্তাবের ওপর ভোট প্রথমবার স্থগিত করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র যেন নতুন করে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ভেটো না দেয়— সেজন্য নিরাপত্তা পরিষদের অন্যান্য দেশগুলোর কূটনীতিকরা সেদিন মার্কিন কূটনীতিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন।

আর মঙ্গলবারও দ্বিতীয়বারের মতো এই ভোটাভুটি স্থগিত করা হয়। বুধবার ভোট হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। পরে ভোটাভুটি শুক্রবার পর্যন্ত বিলম্বিত করা হয় বৃহস্পতিবারও। মূলত যুক্তরাষ্ট্র এতোদিন এই খসড়া রেজোলিউশনের বিষয়ে আশ্বস্ত হতে পারেনি।

রয়টার্স বলছে, প্রায় দুই সপ্তাহের আলোচনার পর এবং ভোটাভুটিতে ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকদিনের বিলম্বের পরে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে একটি চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। এতে করে সংযুক্ত আরব আমিরাতের খসড়া রেজুলেশনটি এখন গৃহীত হতে পারে।

জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘এই রেজুলেশনটিকে এখন আমরা সমর্থন করতে পারি’। তবে যুক্তরাষ্ট্র এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেবে বা নাকি ভোটদান থেকে বিরত থেকে রেজুলেশনটি গৃহীত হওয়ার সুযোগ দেবে তা উল্লেখ করতে অস্বীকার করেন তিনি।

কূটনীতিকরা বলেছেন, ভোটাভুটি শুক্রবার পর্যন্ত বিলম্বিত হওয়ার আগে ভেটো-ক্ষমতাধারী রাশিয়া ও অন্য কিছু কাউন্সিল সদস্য ওয়াশিংটনকে সন্তুষ্ট করার জন্য করার জন্য প্রস্তাবে সংশোধনী আনা হয়েছে বলে রুদ্ধদ্বার আলোচনার সময় অভিযোগ করেন। জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া অবশ্য বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।

রয়টার্স বলছে, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে গাজায় একটি মনিটরিং মেকানিজম প্রতিষ্ঠা করার বিষয়টি প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং এটিই ছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান আপত্তি। এর মাধ্যমে স্থল, সমুদ্র এবং আকাশপথের মাধ্যমে গাজায় সরবরাহ করা সকল মানবিক ত্রাণের চালান মহাসচিব এককভাবে নিরীক্ষণ করার ক্ষমতা পেতেন।

এর পরিবর্তে সংশোধিত খসড়া প্রস্তাবে গুতেরেসকে সংঘাতের অংশ নয় এমন দেশগুলোর মাধ্যমে গাজায় সহায়তা ত্বরান্বিত করার জন্য জাতিসংঘের একটি মেকানিজম প্রতিষ্ঠার জন্য একজন সিনিয়র মানবিক ও পুনর্গঠন সমন্বয়কারী নিয়োগ করতে বলা হয়েছে।

গাজায় পাঠানো সকল ধরনের সাহায্যের মানবিক প্রকৃতির ‘সুবিধা, সমন্বয়, পর্যবেক্ষণ এবং যাচাই করার বিষয়টিও সমন্বয়কারীর দায়িত্ব থাকবে’ বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এরপর থেকে টানা আড়াই মাস ধরে গাজায় আগ্রাসন চালাচ্ছে ইসরায়েল।

ইসরায়েলি এই আগ্রাসনের নিহত হয়েছেন ২০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। নিহত এসব ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ১৪ হাজারেরও বেশি নারী ও শিশু। এছাড়া হামলায় আহত হয়েছেন আরও ৫২ হাজারের বেশি মানুষ।

ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।

টিএম