নড়াইলের বড়দিয়ায় ‘উদীচী উৎসব’ চলাকালে ‘পেট্রোল বোমা হামলা’ চালিয়ে অনুষ্ঠান পণ্ডের ষড়যন্ত্র করা হয়েছে অভিযোগ করে সংগঠনটির নেতারা বলছেন, ঘটনার দুদিন পেরিয়ে গেলেও হামলাকারীদের কাউকে চিহ্নিত এবং গ্রেফতার করতে পারেনি প্রশাসন। এক্ষেত্রে রাষ্ট্র চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
সোমবার (২০ মার্চ) বিকালে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে এক প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। সমাবেশ থেকে এ ঘট্নার প্রতিবাদ জানিয়ে জড়িতদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানানো হয়। এসময় তারা বোমাবাজ, সন্ত্রাসী, মৌলবাদী ও ধর্মান্ধদের প্রতিহত করারও প্রত্যয় জানান।
স্থানীয় শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বালিকা বিদ্যালয় চত্বরে দুইদিনব্যাপী এই অনুষ্ঠোনের আয়োজন করে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর নড়াইলের বড়দিয়া শাখা সংসদ। উৎসবে গত শনিবার (১৮ মার্চ) রাত ৮টার দিকে ‘পেট্রোল বোমা’ সদৃশ বস্তু ছুড়ে মারা হয়, এতে মঞ্চের কিছু অংশ পুড়ে যায়। তবে সেদিন শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠান চালিয়ে যান আয়োজকরা। আর বৃষ্টির কারণে পরেরদিনের অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়।
ওই ঘটনার প্রতিবাদে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান। প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশের শুরুতেই সমবেতভাবে গণসংগীত পরিবেশন করেন উদীচীর শিল্পীরা। এরপর আলোচনা পর্ব এবং সাংস্কৃতিক পরিবেশনা একসঙ্গে চলতে থাকে। এসময় বক্তব্য দেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. রতন সিদ্দিকী, উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি প্রবীর সরদার, জামসেদ আনোয়ার তপন এবং বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম নান্নুসহ আরও অনেকে।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, যশোর নেত্রকোনাসহ বিভিন্ন সময়ে বারবার উদীচীর উপর হামলা চালানো হয়েছে। কিন্তু কোনও ঘটনারই সুষ্ঠু বিচার করতে পারেনি রাষ্ট্র। প্রশাসনের ব্যর্থতার কারণে বারবারই পার পেয়ে গেছে অপরাধীরা। আর এ কারণেই প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক শক্তির উপর নতুন করে আঘাত হানতে তারা পিছপা হয়নি।
নড়াইলের হামলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত উল্লেখ করে তারা বলেন, যেসব অন্ধকারের অপশক্তি চায় না, বাংলার মাটিতে প্রগতিশীল মুক্ত চিন্তার চর্চা হোক, যারা চায় না এদেশের মানুষ অসাম্প্রদায়িক চেতনা লালন করুক তারা এসব হামলার সাথে জড়িত তারা বলেন, অবিলম্বে এ হামলার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করতে হবে। তারা যেন কোনভাবেই আইনের ফাঁকফোঁকর গলে বেরিয়ে যেতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে।
একইসঙ্গে গ্রামেগঞ্জে সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য সবধরনের পদক্ষেপ নেওয়ারও দাবি জানান তারা।
সমাবেশে একক সংগীত পরিবেশন করেন সুরাইয়া পারভীন, শিল্পী আক্তার, জয়া সেনগুপ্তা, শাওন কুমার রায়, মীর সাখাওয়াত হোসেন, উত্তম কুমার সরকার, অবিনাশ বাউল। এছাড়া, একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি বেলায়েত হোসেন, সৈয়দ ফয়সাল আহমদ, শিরিন ইসলাম। সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম।