• 07 Feb, 2025

তথ্য গোপন করার অপরাধে নড়াইল পৌর মেয়রের নামে দুদকের মামলা

তথ্য গোপন করার অপরাধে নড়াইল পৌর মেয়রের নামে দুদকের মামলা

স্টাফ রিপোর্টার: সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করার অপরাধে নড়াইল পৌর মেয়র আঞ্জুমান আরার নামে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। গতকাল ২৯ জুলাই ২০২৪ তারিখ যশোর স্পেশাল জজ আদালতে এ মামলা দায়ের করা হয়।

আজ (৩০ জুলাই) ওই মামলার এজাহারসহ প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয় যশোরের উপ-পরিচালক মো: আল আমিন নড়াইল জজ আদালতের বিচারকের নিকট হস্তান্ত করেন। এ মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা হিসেবে রয়েছেন দুদকের সহাকারি পরিচালক মো: জালাল উদ্দিন। তদন্ত নং-০৫, তারিখ: ২৯/০৭/২০২৪ খ্রি। এসব তথ্য  নিশ্চিত করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয় যশোরের উপ-পরিচালক মো: আল আমিন।

মামলার এজাহারের উল্লেখ করা হয়, দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ৩২ লক্ষ ১৮ হাজার ৯৯৯ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করে মিথ্যা ও ভিতিহীন তথ্য প্রদান এবং অবৈধভাবে ১৪ লক্ষ ৬৮ হাজার ৫০০ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনপূর্বক নিজ ভোগ দখলে রাখায় দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬(২) ও (২৭(১) ধারার শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।  

অভিযোগ সংশ্লিষ্ট আঞ্জুমান আরা ১৯৮৭ সালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে চাকুরি লাভ করে ধারাবাহিকভাবে ২০০০ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি প্রাপ্ত হন এবং ডিসেম্বর/২০১৫ সালে স্বেচ্ছায় অবসরে গমন করেন।

পরবর্তীতে তিনি ৩০/০১/২০২১ খ্রি. তারিখে নড়াইল পৌরসভার মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং অদ্যাবদি দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ১৯৮১ সালে এ্যাডভোকেট সিদ্দিক আহমেদ এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এ্যাডভোকেট সিদ্দিক আহমেদ নড়াইল জজ কোর্টে আইন প্রাকটিসরত অবস্থায় ১৬/০৮/২০২০ তারিখে মৃত্যুবরণ করেন। দুর্নীতি দমন কমিশন হতে ২৫/০১/২০২৩ খ্রি. তারিখে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট আঞ্জুমান আরা'র প্রতি সম্পদ বিবরণী নোটিশ ফরম নং০০০৪২৬৮ জারী করা হয়। উক্ত সম্পদ বিবরণী ফরম পূরণ করত: তিনি ১৯/০৩/২০২৩ খ্রি. তারিখে দুদকে দাখিল করেন। দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে আঞ্জুমান আরা নিজ নামে ০৪ টি দলিলমূলে ক্রয়কৃত নড়াইল সদর উপজেলা এলাকায় মোট ১২৭.৫ শতক ডাঙ্গা/ধানী জমি, ১২০০ বর্গফুটের দ্বিতল বাড়িসহ মোট ৫৩ লক্ষ ৩৯ হাজার ৫০০ টাকার স্থাবর সম্পদ থাকার তথ্য এবং অস্থাবর সম্পদ হিসেবে ৫টি ব্যাংক একাউন্টে গচ্ছিত ৭ লক্ষ ১৭ হাজার ৭১২ টাকা ও সঞ্চয়পত্র ২৩ লক্ষ টাকা মোট ৩০ লক্ষ ১৭ হাজার ৭১২ টাকার অস্থাবরসহ সর্বমোট (৫৩,৩৯,৫০০+৩০,১৭৭০২) ৮৩,৫৭,২১২৯/- টাকার সম্পদ থাকার তথা ঘোষণা করেন। অভিযোগটি যাচাইকালে তার নামে ৫৩,৩২,৫০০/- টাকার স্থাবর সম্পদ ও ৬২,৩৯,৪০০/- টাকায় অস্থাবর সম্পদসহ সর্বমোট ১ কোটি ১৫ লক্ষ ৭৫ হাজার ৯১০ টাকার সম্পদ থাকার তথ্য পায় দুদক।

দুদক অনুসন্ধানে দেখা যায়, দুর্নীতি দমন কমিশন হতে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট আজুমান আরা'র নামে সম্পদ বিবরণী নোটিশ জারীর দিনই অর্থাৎ ২৫/০১/২০২৩ খ্রি. তারিখে তিনি ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, নড়াইল শাখায় পরিচালিত তার নামীয় হিসাব নং ২০৪১২২০০০০০৮৮৯ হতে চেক নং-১৫৬৯৬১১ এর মাধ্যমে নিজে ২৯,৫০,০০০ টাকা নগদে উত্তোলন করেন এবং ২০২২-২০২৩ করবর্ষে দাখিলকৃত আয়কর রিটার্নে ব্যবসা বহির্ভুত অর্থ সম্পদ হিসেবে ৩৩,০১,৬০০০/- টাকা প্রদর্শন করেছেন। উক্ত টাকার মধ্যে তিনি ২০২৩-২০১৪ করবর্ষে দাখিলকৃত আয়কর রিটার্নে ব্যবসার পুঁজি ২৭,৬২,৫৯৭ টাকা প্রদর্শন করে দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে গোপন করেন। এছাড়া আঞ্জুমান আরা তার দুইটি ব্যাংক হিসাবে ১,২৬,১০১ টাকা ও আসবাবপত্র-ইলেক্ট্রনিক্স বাবদ ৩,৩০,০০০/- টাকা সর্বমোট ২৭,৬২,৫৭+১,৯৬১০১+৩,০০,০০০-৩২,১৮,৯৯০/- টাকার তথা দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে গোপন করেন। অর্থাৎ আঞ্জুমান আরা দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিষয়ণিীতে (১,১৫,৭৫,৯১৮- ৮৩, ৫৭, ২১২)= ৩২, ১৮, ৬৯৮ টাকার সম্পদ থাকার তথ্য গোপন করে মিথ্যা ও ভিতিহীন তথ্য প্রদান করে দুনীতি দমন কমিশন আইন,২০০৪ এর ২৬(২) ধারায় শাস্তিযাগ্য অপরাধ করেছেন।

দুদক মামলার এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট আঞ্জুমান আরা’র নামীয় আয়কর নথি (২০২১-২০২২ করবর্ষ হতে ২০২৩-২০২৪ করবর্ষ পর্যন্ত) পর্যালোচনায় তার পৌর নির্বাচনী ব্যয়সহ পাওয়া যায় ১৩ লক্ষ ২০ হাজার চটাকা। উক্ত পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয়সহ তার মোট অর্জিত সম্পদের মূল্য (১,১৫,৭৫,৯১০ + ১৩,২০,০০০)= ১, ২৮,৯৫ ৯১০/- টাকা। আয়কর নথি ও অন্যান্য রের্কডপত্র অনুযায়ি আঞ্জুমান আরা এর মোট গ্রহণযোগ্য আয়ের পরিমান ১,১৪,০৭,৩৭৬/- টাকা। সে মোতাবেক অভিযুক্ত আঞ্জুমান আরা’র জ্ঞাত আয়ের সাথে অসংগতিপূর্ণ সম্পদের পমিান (১,২৮,৯৫,৯১০ - ১,১৪,০৭৩৭৬)= ১৪, ৮৮,৫৩৪/- টাকা।

এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, তদন্তকালে তার অপরাধের সাথে অন্য কেউ জড়িত বা সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকেও আমলে নিবে দুদক।