`আমাদের দেশের ইতিহাসের বাহক ইত্তেফাক', সমাপ্ত লাইন দিয়ে গপ্ত ২৬ ডিসেম্বর ২০২২ সালে 'ইত্তেফাকের সাথে ৬০ বছর' লেখাটি ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ছাপা হয় এতে আমি খুশি দৈনিক ইত্তেফাক সব সময়কার জন্য ইতিহাস সৃষ্টিকারী সর্বশেষ জুলাই-২০২৪ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী, তাঁওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা 'মুক্তিযোদ্ধার ছেলে-পেলেরা শিক্ষায় কোটা সুবিধা পাবে না. তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা পাবে?' এই আত্মাদ্দন্তী বক্তব্যে পরের দিন দৈনিক ইত্তেফাকের প্রথম পৃষ্ঠার সর্ববাম পাশের টপে এক কলামের শিরোনাম এবং পাশাপাশি সর্বডান পাশের টপে শেষ কলামে আওয়ামী লীগ সেক্রেটারি এবং তৎকালীন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের 'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঠেকাতে ছাত্রলীগ একাই যথেষ্ট তাদের উভয়ের ছলিসহ একই দিন এই দুটি নিউজে সারা দেশে বিস্ফোরণ ঘটে-অশান্তি আরো বৃদ্ধি পায় এর কিছুদিন পরেই জুলাই ১৬ তারিখে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত ছাত্র আবু সাঈদ 'বুক পেতে দিয়েছি, গুলি করো' এই নিউজটিও ছবিসহ ইত্তেফাকের শেষ পাতায় ছাপিয়েছে বাঙালির মনকাড়া লেখনী 'মোসাফির' তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া প্রতিষ্ঠিত দৈনিক ইত্তেফাক তার সাংবাদিক জগতে নির্ভীকতা, কালে কালে প্রবাহমান এখনো ইত্তেফাকের সব নিউজ ট্রিটমেন্টই একটা স্টাইল আছে ইত্তেফাক পাঠক ও কলামিস্ট হিসেবে এসব কারণেই ৭২ বছরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শান্তি মন্ত্রণালয় আসলেই দরকার' প্রবন্ধটি প্রকাশের জন্য পাঠালাম। আশাবাদ ব্যক্ত করছি, শত ঘটনাবহুল মাইলস্টোনের মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে এটাও ইতিহাস সৃষ্টির মিছিলে স্থান করে নেবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৯ দফা দাবির পরে এক দফায় হাসিনা সরকারের পতন হলো ৮ আগস্ট ২০২৪ নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস জঞ্জাল পরিষ্কার করে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের ফসল হিসেবে প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নিয়ে ছাত্র-জনতা কর্তৃক নিয়োজিত হলেন। গত ৪ নভেম্বর-২৪ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ঢাকায় ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স (এনডিসি) ও আর্মড ফোর্সেস ওয়ার কোর্সের (এএফডব্লিউসি) দেশি-বিদেশি অংশগ্রহণকারী প্রশিক্ষণে সমাপনী বক্তন রাখেন। তরুণদের তিনি 'মনস্থির করতে, চিন্তা করতে ও স্বপ্ন দেখতে উৎসাহিত করেন স্বপ্ন হলো পরিবর্তনের সূচনা' গরিবের ব্যাংকার ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূস বিশ্ব শান্তির কথা উল্লেখ করে বলেন, 'বেশির ভাগ সময় মানুষ শান্তির নামে একে অন্যকে হত্যা করে আমরা প্রতিদিন, আমাদের সব উচ্চারণ ও আমাদের সব দর্শনে নিজেদের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করি-তামরা শান্তি চাই। দেশের ভেতরে শান্তি, সব দেশের মধ্যে শান্তি এবং বিশ্বব্যাপী শান্তি তার কাছে অত্যন্ত হাস্যকর মনে হয় যে. 'বিশ্বের প্রতিটি সরকারেরই একটি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আছে, যা আক্ষরিক অর্থে এটি যুদ্ধ মন্ত্রণালয়, কিন্তু কোনো শান্তি মন্ত্রণালয় নেই' তিনি প্রশ্ন করেন, যদি আপনার লক্ষ্য শান্তি হয়, তাহলে আপনার কি শান্তি মন্ত্রণালয় থাকা উচিত নয় ? আক্রমণের বিরুদ্ধে জনগখকে নিজেদের রক্ষা করতে হবে-এটি পর্যবেক্ষণ করে ক্ষুদ্র ঋণের উদ্ভাবক ড. ইউনূস বিশ্বের সরকারগুলোকে শান্তি মন্ত্রণালয় ও যুদ্ধ মন্ত্রণালয় উভয় মন্ত্রণালয়ই রাখার ওপর জোর দেন। তিনি প্রতিরক্ষা অ্যাটাশেসহ বৈদেশিক সম্পর্কে শান্তি অ্যাটাশে প্রবর্তনের পরামর্শও দেন।
ড. ইউনূস আরও বলেন , এটি একটি আত্ম- ধ্বংসাত্মক গ্রহ। কেননা আমরা শুধু নিজেদের হত্যা করার জন্য প্রস্তুত, সবকিছু করেছি 'উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, মানুষ গ্রহ ধ্বংস করতে পরিবেশ ধ্বংস করছে প্রতিদিন মানুষ গ্রহকে ধ্বংস করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা একটি ভুল সভ্যতা তৈরি করেছি, আত্মবিধ্বংসী সভ্যতা'।
শান্তি মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা হলে সব ধর্ম বর্ণের শান্তির বার্তা তা ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সবার একটা শান্তির চর্চার পবিত্র স্থল স্থাপিত হবে। এতে সব পরিবেশ পরিস্থিতি সমেত সমগ্র দেশ-বিদেশের চৌহদ্দিতে শান্তির লক্ষ্যে মনের সংস্কার গঠন হবে। পজিটিভ দিকগুলো সামনে চলে আসবে। পরিবর্তনের সুবাতাস বইবে। সব ধর্ম-ভাষা-বর্ণের মধ্যেই শান্তির বাশী উচ্চস্বরে বর্ণিত আছে যা অনুশীলনও করা হয়। নোবেল কমিটিও নোবেল শান্তি প্রাপ্ত বিজয়ীদের নিয়ে সারা বিশ্বে এর নেটওয়ার্ক গড়ে বিস্তার ঘটাতে পারে। এতে এর সক্রিয়তা ও অন্তর্নিহিত শান্তির ভাবধারা রাষ্ট্র ও সাধারণ জনগণ উপলব্ধি ও ভোগ করতে পারেন। বাংলাদেশ সামরিক বাহিনী ব্যবস্থাপনায় দেশ-বিদেশে শান্তি মিশন অকৃষ্ট প্রশংসা কুড়িয়েছে। এ ব্যবস্থাপনা শান্তি মন্ত্রণালয়ের যোগসূত্রে আনলে যুদ্ধ ও যুদ্ধ ময়দানেও শান্তির লক্ষ্যে পজিটিভ ভাবনার পরিবর্তন আসবে। বিশ্ব শান্তি পরিষদ তাদের কাজের সঙ্গে প্রস্তাবিত শান্তি মন্ত্রণালয়ের জন্য আরো চিন্তার খোরাক দিতে পারে।
শান্তি ও গরিবি এক সঙ্গে হাঁটতে পারে না সুষম বণ্টনসহ প্রকৃত উন্নয়নই শান্তি আনে উন্নয়ন বিশেষ করে অর্থনৈতিক মুক্তির সঙ্গে শান্তির গভীর সম্পর্ক স্থাপন না করলে তা টেকসই হয়' না। মহাত্মা গান্ধী শান্তির বার্তা নিয়ে দেশ-বিদেশে জীবন কাটিয়েছেন। স্বনির্ভরতার জন্য চড়কা ঘুরিয়েছেন ১৯৩২ইং- এ নিখিল ভারত হরিজন সেবক সংঘ প্রতিষ্ঠা করছেন। বর্তমান এই সংঘের সভাপতিড, শংকর কুমার সান্যাল পঙ্গীবাদী একটি উচ্চ টিমসহ দিল্লি থেকে সম্প্রতি বাংলাদেশে নোয়াখালীর গাছী আশ্রমহিত চাটখিল উপজেলায় 'স্বপ্ন মা বাড়ী, মা- সংসদ' পরিভ্রমণ করেন ঢাকা ফিরে এসে লিখেন, 'স্বপ্ন মা দেখে অভিভূত। এই কর্মসূচি একটা প্রশংসনীয় উদ্যোগ শুধু নয়, এটা আদর্শ চিন্তাভাবনা যা মহাত্মা গান্ধীর আদর্শের অনুর প' গান্ধীজী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য এত কিছু করেছেন কিন্তু রাষ্ট্রীয়ভাবে কাঠামোগত টেকসই কিছু ব্যবস্থাপনা করে গেছেন কিনা আমি জানি না বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ হউনুস রাষ্ট্রীয় পর্যায় শান্তি মন্ত্রনালয় স্থাপন করার ভাবনাসহ তরুপদের হয়া দেখার আহ্বান জানিয়েছেন। যার চূড়ান্ত কথা এর বাস্তবায়ন করা। শান্তির বার্তা বহনকারী ধর্ম মন্ত্রণালয় বা অস্ত্র কেনাবেচা ও শান্তিশগুলো বজায় রাখার প্রতিষ্ঠার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালর, নাম বদলিয়ে শান্তি মন্ত্রণালয় করা যায়। তা হলেই প্রকৃতপক্ষে 'বিশ্ব শান্তি'র অনুশীলনকারী হিসেবে রূপান্তর হবে তাতে ৩৫ কোকেন একা হবে বরং শান্তি ও শাপলার দিকে মন ধাবিত হবে আাকলেই রাষ্ট্র ও বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থায় সাধারণ জনপদের জন্য টেকসই শান্তি সংস্থার প্রতিষ্ঠিত হবে। প্রসঙ্গত কত র নভেম্বর পত্রিকান্তরে জানা যায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগ জনটিনরাঙ্গ বা ও সুরক্ষা রেল বিভাগতে একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
২০২৪ বিজয় ভাষণে ৪৭তম রিপাবলিকান আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ৭৮ বছর বয়সি ডোনাল্ড ট্রাম্প 'যুদ্ধ বন্ধ করব' ঘোষণা ও অঙ্গীকার করেন। যুদ্ধ বন্ধ করার ঘোষণা অর্থই শান্তির ঘোষণা। ড. মুহাম্মদ ইউনুসও ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করতে উন্মুখ হয়ে আছেন-বার্তা দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও জনগণের উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার সঙ্গে বৈশ্বিক শান্তি কামনা করেন। ৭ নভেম্বর ইত্তেফাক পত্রিকায় দেখলাম, মার্কিন অর্থনৈতিক কৌশলবিদ, লেখক ও কলামিস্ট ডেভিড গোল্ডম্যান তাঁর লেখায় ডোলান্ড ট্রাম্পকে শান্তিকামী প্রত্যাশা করেছেন এবং এও বলেছেন, যদিও শান্তি স্থাপনের কাজটি খুব একটা সহজ নয়।
আমাদের বাংলাদেশ পরিপ্রেক্ষিতে যেখানে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় সম্প্রীতিতে সব নাগরিকের সম-অধিকার বিদ্যমান, সেখানে শান্তি মন্ত্রণালয় নামকরণে দেশ ও দুনিয়ায় আরো বৃহত্তর পরিসরে উঁচুতায় অবস্থান করতে পারি। এসডিজির মোটা দাগে ১৭ এজেন্ডার ১ নম্বর এজেন্ডায় এন্ডিং পোভার্টি 'বটম লাইনিং মা'কেন্দ্রিক দারিদ্র্য বিমোচনে 'স্বপ্ন প্যাকেজ'- স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আবাসন, কর্মসংস্থান ও পরিবেশকে মৌলিক রেখেই স্বপ্ন দেখতে হবে। এভাবে বটম-আপ এপ্রোচে স্থায়ী-টেকসই ব্যবস্থায় যেতে হবে। অপরপক্ষে রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে শান্তি মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করে টপ-ডাউন এপ্রোচে কাঠামো বানানোর ম্যাচ ম্যাকিং ভূমিকায় নামলেই নতুন বাংলাদেশ গড়ার ভিত-হাতিয়ার তৈরি হবে, 'আমাদেরও একটি স্বপ্ন আছে'-গত ১৪ নভেম্বরের ইত্তেফাকের সম্পাদকীয়টি প্রণিধানযোগ্য। আল্লাহ সহায় হোন।
লেখক: উন্নয়ন ও মানবাধিকার সংগঠক, গুসি আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কার বিজয়ী-২০১৩
লেখকের অনুরোধে আজ দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এই লেখাটি নড়াইলকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশ করা হলো।