• 05 May, 2024

রপ্তানি আয় দেশে আনছেন না ব্যবসায়ীরা

রপ্তানি আয় দেশে আনছেন না ব্যবসায়ীরা

যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে সেই পরিমাণ আয় দেশে আসেনি। আবার অনেক ক্ষেত্রে রপ্তানির পণ্যমূল্য পরিশোধের জন্য ইচ্ছা করে সময় বাড়িয়ে দিচ্ছেন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা।

ফলে বৈদেশিক বাণিজ্যের আর্থিক হিসাবে বড় ঘাটতি তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে বর্তমানে বড় সমস্যা ডলার সংকট ও মূল্যস্ফীতি। এ দুটির চাপ কমাতে যেকোনো পদক্ষেপ বাস্তবায়নে প্রস্তুত থাকতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি।

বুধবার (১৮ অক্টোবর) বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি)’ সঙ্গে বৈঠকে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়।

বৈঠকে ডলার মার্কেটে অস্থিরতা, এক্সচেঞ্জ রেট, মূল্যস্ফীতি এবং ব্যাংক ঋণের সুদ হার নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে সম্প্রতি সময়ে নীতিগত যেসব পরিবর্তন আনা হয়েছে তা তুলে ধরা হয় এবং সেগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়নের পরামর্শ দেওয়া হয়।

এবিবির নেতাদের বলা হয়, আগামী নির্বাচনের আগ পর্যন্ত ডলারের দাম বর্তমান অবস্থায় ধরে রাখতে হবে। মূল্যস্ফীতির চ্যালেঞ্জ যে কোনো উপায় মোকাবিলা করতে হবে। প্রয়োজনে মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য সুদহার বাড়াতে হবে এবং বাজারে টাকার প্রবাহ কমাতে হবে।

বৈঠক প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, দেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এটা নিয়ন্ত্রণের জন্য বেশ কিছু নীতিগত পরিবর্তন আনা হয়েছে; যার অনেক বিষয় পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। তবে আশা করা হচ্ছে, আগামী তিন-চার মাসের মধ্যে পুরোপুরি বাস্তবায়ন হবে এবং একটা ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।

 

দেশের ডলার সংকটের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের অনেকেই রপ্তানি মূল্য দেশে আনছেন না। উল্টো বিদেশি ক্রেতাদের পণ্যমূল্য পরিশোধের মেয়াদ বাড়িয়ে দিচ্ছেন। ফলে দেশ থেকে আমদানি মূল্য পরিশোধ বাবদ ডলার চলে গেলেও রপ্তানির বিপরীতে তুলনামূলক ডলার কম আসছে। এতে করে আর্থিক হিসাবে বড় ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। এ বিষয়গুলো আমরা নজরে এনেছি এবং তা সমাধানের চেষ্টা করছি।

মুখপাত্র আরও বলেন, বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে ৫৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে। কিন্তু দেশে এসেছে ৪৬ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এখানে ৯ বিলিয়ন ডলারের একটি ঘাটতি তৈরি হয়েছে।

এক প্রশ্নের উত্তরে মুখপাত্র বলেন, বেশি মূল্যে ডলার কেনার জন্য ১০ ব্যাংকের ট্রেজারি কর্মকর্তাকে জরিমানা করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী, তারা জরিমানা মওকুফের আবেদন করেছেন। মওকুফ হবে কি না, সেটি বিবেচনা করবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ।

তিনি বলেন, হুন্ডি বন্ধের জন্য ইতিমধ্যে আমরা বেশ কিছু পদক্ষেপ হাতে নিয়েছি। ৫০টিরও বেশি অনলাইন সাইট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের এ সমস্ত কার্যক্রম চলমান।

বৈঠক প্রসঙ্গে এবিবি এর চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসাইন বলেন, বৈঠকে মূলত দুটি বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে ‌। এর মধ্যে একটি হলো সিআইবি। এটা নিয়ে আমাদের মধ্যে কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে। কিছু কৌশল আমরা হাতে নিয়েছি। আশা করি, দ্রুত বিষয়টি সমাধান হয়ে যাবে। দ্বিতীয়টি হলো, ঋণের সুদ হার। কারণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে, আস্তে আস্তে ঋণের সুদ বাড়ছে, এ কারণে অন্যের ওপর একটি চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। এটি কিন্তু স্বাভাবিক। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য এটা বাংলাদেশ ব্যাংকের একান্ত সিদ্ধান্ত। ঋণের পাশাপাশি আমানতের সুদ হারও আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পাবে, তবে এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।

হুন্ডির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা অবৈধ পয়সা দিয়ে ডলার ব্যবসা করেন তাদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। কারণ আমরা যদি এখন ১৩০ টাকা ডলার রেট অফার করি তারা ১৪০ টাকা দিয়ে কিনবে। তাদের কাছে যেহেতু অবৈধ টাকা রয়েছে তাই যেভাবেই হোক তারা টাকা পাচার করবেই। এখানে ডলারের দাম ১৪০ বা ১৫০ টাকা কোনো গুরুত্ব রাখে না। হঠাৎ হুন্ডির সঙ্গে ডলারের ফরমাল রেট মিলানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই। তাছাড়া কার্ব মার্কেটে প্রতি বছরে ৩০ থেকে ৪০ মিলিয়ন ডলার লেনদেন হয়। যেটা বাংলাদেশের ওভারঅল লেনদেনের তুলনায় অতি নগণ্য।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী দেশে সার্বিক ডলারের লেনদেন হয় ২৫৭ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, গত জুন ও জুলাই মাসে দেশে মূল্যস্ফীতি সামান্য কমার পর আগস্ট মাসে তা আবার বেড়েছে। আগস্টে মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। এই সময় দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হঠাৎ অনেকটা বেড়ে গেছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার উঠেছিল ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশে। যা বিগত বছরে কখনও হয়নি। এর আগের মাসে এই খাতে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৭৬ শতাংশ। অর্থাৎ আগস্টে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ২.৭৮ শতাংশ।