• 06 May, 2024

অকালে ঝরেপড়া মেধাবী মাসুমের জীবনযুদ্ধের গল্প!

অকালে ঝরেপড়া মেধাবী মাসুমের জীবনযুদ্ধের গল্প!

দারিদ্রতা, সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন, রাষ্ট্রীয় সার্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন না হওয়ায় এবং পরিবারের অযত্নে অবহেলায় ওই পরিবারের মেধাবী ও লুকিয়ে থাকা অসাধারণ প্রতিভা অকালেই ঝরে পড়ে এবং চিতরে নষ্ট হয়ে যায়। অবশেষে সেই সব সুপ্ত প্রতিভার জীবনে নেমে আসে চরম পরিনতি। এমন একজন মানুষের সুপ্ত জীবন কাহিনী ও তার জীবনযুদ্ধের কিছু কথা নিয়ে আজকে কিছু লেখার চেষ্টা করলাম।

যাইহোক কথা না বাড়িয়ে এবার জানি সেই সুপ্ত প্রতিভার মানুষটি কে? কোথায় তার বাড়ি? কি করেন তিনি? কেমনই বা আছেন তিনি? 

তিনি নড়াইলের কালিয়া পৌর এলাকার বাসিন্দা মো: মাসুম শেখ (২৩), পিতা মহশিন শেখ, মা মোসাৎ রাশেদা বেগম। দুই ভাই এক বোন। তিনি ছোট বেলা থেকেই লেখা-পড়ায় খুব ভালো ছিলেন। তিনি এখন রাজমিস্ত্রীর কাজ করেন। গান গাওয়া তার সখ। কণ্ঠও ভালো। সহযোগিতার অভাবে এগুতে পারছেন না। 

তার পরিবার ও প্রতিবেশির সাথে কথা বলে জানতে পারি, সে ক্লাস ফাইভে ট্যালেনপুলে বৃত্তি পায়। ক্লাস এইটে ফাইনাল পরীক্ষায় প্রথম দিনে পরীক্ষায় বসলে বরিশাল থেকে খবর আসে তার বাবা মারাত্মক অসুস্থ। ওইদিন পরীক্ষা শেষে ছুটে যায় বরিশাল বাবাকে দেখতে। বরিশাল থেকে ফিরে এসে ক্লাস এইটের ফাইনাল পরীক্ষা আর তার দেয়া হয়নি। সেই থেকে তার পড়া-লেখা বন্ধ হয়ে যায়। ধরতে হয় তাকে অভাব-অনাটনের সংসারে হাল। সেই হতে বন্ধ হয়ে যায় চিরতরে তার লেখা-পড়া।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, এরমধ্যে মাসুমের নড়াইলের পরিবার জানতে পারে তার মহসিন অন্য একজনকে বিয়ে করে বরিশালে আলাদা সংসার পেতেছেন। তার কালিয়ায় রেখে যাওয়া পরিবারের লোকজনের কোন ধার-ধারেন না! বাবার অবর্তমানে ৮ম শ্রেণি পড়া-শুনা শেষ না করেই এই মেধাবী ব্যতিক্রমি প্রতিভা সম্পন্ন মাসুম শিশুবয়সেই অভাব-অনাটনের কালিয়ার সংসারের হাল ধরতে হয় তার।  

জানা গেছে, মাসুমের বড়ই ইচ্ছা ছিলো পড়া-লেখা শিখে সে অনেক বড় একটা কিছু হবে। রোজগারের জন্য শুরু করেন তিনি রাজমিস্ত্রির যোগাইলের কাজ। এখন সে একজন পরিপূর্ণ রাজমিস্ত্রী। এরমধ্যে দেখতে দেখতে ১০টি বছর কেটে গেছে। বিয়েও করেছেন মাসুম। বিয়ের তিন বছর কেটে গেলেও হয়নি তাদের কোন সন্তানাদি।

ঘটনার পিছনের ঘটনা:  
মাসুমের বাবা মহশিন শেখ ও মা মোসাৎ রাশেদা বেগম। চাকুরির খোঁজে ভারতের বোম্বাইয়ে অবস্থান করেন তার বাবা ও মা। বোম্বাইয়ে অবস্থানকালে তাদের দুইজনের মধ্যে পরিচয়। পরে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয় তারা। এক সময় দেশে ফিরে এসে বেশ কিছুদিন ভালোই চলছিলো তাদের সংসার জীবন। মাসুমের বাবা মহশিন শেখ একজন কাঠমিস্ত্রি। তিনি বরিশালে ফিরে গিয়ে আবার বিয়ে করেন। এবং সেখানেই সংসার চালাতে শুরু করেন। আর ফিরে আসেনি কালিয়াতে। মায়ের কেনা কালিয়া পৌর এলাকায় ’৪ শতক জমির উপর ঝুপড়ি ঘরে মাকে নিয়ে ভাই বোন নিয়ে একটি ভাঙ্গাচুরা ঘরের মধ্যে বসবাস করেন তারা সবাই।