• 12 Sep, 2024

নড়াইলে ভূমিদস্যুতার শিকার অসহায় নাসিমা বেগমের পাশে দাঁড়ালেন জেলা প্রশাসক

নড়াইলে ভূমিদস্যুতার শিকার অসহায় নাসিমা বেগমের পাশে দাঁড়ালেন জেলা প্রশাসক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নড়াইলে ভূমিদস্যু বাহিনীর অমানবিক নির্যানের শিকার অসহায় নাসিমা বেগমের পাশে দাঁড়িয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী। দীর্ঘ সাত-আট মাস আগে ভূমিদস্যু মোহাম্মদ উল্লাহ ও তার বাহিনী কর্তৃক অসহায় নাসিমা বেগমের বসতবাড়ি সম্পূর্ণ ভেঙ্গে মাটিতে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।

তারপর থেকে অসহায় নাসিমা অসুস্থ স্বামী ও পরিবার পরিজন নিয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বিচারের আশায় ঘুরছেন দ্বারে দ্বারে। থানায় অভিযোগ দিয়েও লাভ হয়নি। আমলে নেওয়া হয়নি তার অভিযোগ।  

সরেজমিনে জানা গেছে, বিগত সাত-আট মাস আগে নড়াইল সদরের আউড়িয়া গ্রামের কুখ্যাত ভূমিদস্যু মোহাম্মদ উল্লাহ ও তার বাহিনী নড়াইল পৌরসভার ধোপাখোলা এলাকার নাসিমা বেগমের পাকা বসতবাড়িটি তার নিজের দাবি করে সম্পূর্ণ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। ঘটনাটি তখন বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলে কিছুটা পিছু হটে মোহাম্মদ উল্লাহ। তখন থেকেই অসহায় নাসিমা বেগম তার পরিবার পরিজন নিয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করতে থাকে। বিচারের আশায় নানা জায়গায় ধর্না দিয়েছেন। থানায় অভিযোগ করেও লাভ হয়নি। তার অভিযোগ গ্রহন করা হয়নি। তারপর থেকে একইভাবে চলছিল নাসিমার জীবন সংগ্রাম।

nrailknth-jun-06.jpgসম্প্রতি ভূমি সেবা সপ্তাহ উপলক্ষে জেলা প্রশাসকের উপস্থিতিতে এক আলোচনায় একজন সাংবাদিক বিষয়টি তুলে ধরেন। এছাড়া একটি ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম রিপোর্টও প্রকাশ করে। ফলে বিষয়টি নিয়ে নিয়ে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। তারই ধারাবাহিকতায় গত শনিবার (৮ জুন) জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) মো. মেহেদী হাসান ভুক্তভোগীর বাড়িতে গিয়ে তাদের খোঁজ-খবর নেন এবং ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দেন।    

img-20240609-wa0022.jpgএছাড়া একই দিন (শনিবার ৮ই জুন) বিকালে মেয়র আঞ্জুমান আরা নাসিমা বেগমের বাড়িতে যান এবং নড়াইল পৌর পরিষদের পক্ষ থেকে তিনি অসহায় নাসিমা বেগমের পরিবারের ভরণপোষণ ও মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসাবে একটি টিনের ঘর করে দেওয়ার ঘোষণা দেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নড়াইল পৌরসভার প্যানেল মেয়র কাজী জহিরুল হক, কাউন্সিলর রাজু আহমেদ, ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

মেয়র আঞ্জুমান আরা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নাসিমা বেগমের উপর যে অত্যাচার  নির্যাতন হচ্ছে সেটা আমাকে কেউ জানায়নি। এমনকি নাসিমার পরিবারের কেউ যোগাযোগ করেনি। এখন আমি জানতে পেরে সরাসরি এসেছি। এবং নাসিমার পরিবার যাতে সঠিক বিচার পায় তার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করব। এছাড়া খোলা আকাশের নিচে থাকা নাসিমার পরিবারের জন্য টিনের ঘর করে দেয়ার ব্যবস্থা করব এবং ভরণপোষণের জন্য চাল ডাল তেল লবণসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দিব।

02-14.jpgএ বিষয়ে অসহায় নাসিমা বেগম বলেন, দীর্ঘ সাত-আট মাস মোহাম্মদ উল্লাহর নির্যাতনে আমি দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম। কার কাছে যাব কিভাবে কি করব বুঝতে পারছিলাম না। থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও আমার মামলা এখন পর্যন্ত নেয়নি। এখন মেয়র আপা এসে আমার রুটি রুজির ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। এজন্য  আল্লাহর কাছে দোয়া করি তিনি যেন ভালো থাকেন। এছাড়া ডিসি, এসপি স্যার এসেছিলেন। তাঁরা সঠিক বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন। আমি ভূমিদস্যু মোহাম্মাদ উল্লাহর বিচারের দাবিতে আগামী মঙ্গলবার কোর্ট চত্বরে মানববন্ধন করব। আপনারা আমার পরিবারের পাশে থাকবেন এই আশা করি।

এদিকে শুক্রবার (০৭ জুন) বিকালে নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য হুইপ মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান মোহাম্মদ উল্লাহ ও অজ্ঞাত আরো ১০/১২ জনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নড়াইল সদর থানার ওসি বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেন। পরে ওই রাতেই মোহাম্মদ উল্লাহকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু খুব দ্রুতম সময়ের মধ্যে ছুটির দিনেই জামিন পেয়ে যান তিনি।

থানায় জাহিদুর রহমানের লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, ধোপাখোলা মোড়সংলগ্ন নাসিমা বেগমের সঙ্গে মোহাম্মদ উল্লাহর জমি নিয়ে বিরোধ আছে। এ নিয়ে মামলা চলমান। কিন্তু মোহাম্মদ উল্লাহ কয়েক মাস আগে তার লোকজন নিয়ে জমিতে থাকা গাছপালা কেটে ক্ষতিসাধন এবং ঘর-বাড়ি ভাঙচুর করে। এ সময় নাসিমা বেগম বাধা দিতে গেলে তারা নিজেদের মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা এমপির লোক বলে পরিচয় দেয়। ঘটনাটি সম্প্রতি ঢাকার একটি টিভি চ্যানেলের রিপোর্টে প্রকাশ হয়। প্রকৃতপক্ষে হুইপ মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা এমপি মোহাম্মদ উল্লাহ ও তার লোকজন এবং উক্ত ঘটনা সম্পর্কে অবগত নন।

05-6.jpgএ বিষয়ে হুইপ মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান বলেন, সম্প্রতি নড়াইল পৌরসভার ধোপাখোলা এলাকায় নাসিমা বেগম নামে এক নারীর বাড়ি ভাঙচুর এবং গাছ কাটার ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়টি ও অপরাধীদের সম্পর্কে এমপি অবগত নন। যারা তার নাম ভাঙিয়ে এসব অপকর্ম করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে নড়াইল সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।

এ বিষয়ে নড়াইল সদর থানার ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন, মোহাম্মদ উল্লাহকে গ্রেফতার করে চালান করে দেয়া হয়েছে।