গোয়াইবাড়ি গ্রামে অন্তত ২০০ জেলে পরিবারের বসবাস। এরমধ্যে ৪০টি পরিবারের পাশাপাশি উপজেলার রতডাঙ্গা ও পংকবিলা গ্রামের আরো কয়েকটি জেলে পরিবার এভাবে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছে।
গোয়াইলবাড়িসহ তিনটি গ্রামের জেলেরা জানান, ভোঁদড় (আঞ্চলিক ভাষায় ধাড়িয়া বা ধেড়ে) পানিতে নেমে মাছ শিকার করে খেতে পছন্দ করে। প্রতিটি জেলে নৌকার এক প্রান্তে ভোঁদড়ের জন্য আলাদা করে খাঁচা বানানো থাকে। মাছ ধরার সময় খাঁচার ডালা খুলে দেয়া হয়। জেলেরা নৌকায় বাঁধা জাল নদীতে ফেলে ভোঁদড় ছেড়ে দেন। এ সময় লাঠির সঙ্গে তাদের শরীর এমনভাবে বাঁধা থাকে, যাতে ছুটে যেতে না পারে।
নৌকা নদীর তীরে আসতে থাকে আর ভোঁদড়ের তাড়া খেয়ে মাছ জেলেদের জালে এসে ধরা পড়ে। প্রতিটি ভোঁদড় বছরে সাত থেকে আট বার বাচ্চা দেয়। অন্তত ১০ বছর পর্যন্ত ওরা বেঁচে থাকে। পূর্ণ বয়ষ্ক একটি ভোদড় ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা বিক্রি হয়।
গোয়াইলবাড়ি গ্রামের নিমাই বিশ্বাস বলেন, নদীতে বেশি পানি থাকলে সুন্দরবন পর্যন্ত মাছ ধরতে যান। এবার জলদস্যুদের ভয়ে সুন্দরবনে না যেয়ে নড়াইলের চিত্রা, পাশের মধুমুতি, নবগঙ্গা আড়িয়াল খাঁ পাড়ি দিয়ে মাদারীপুর ও ফরিদপুর চলে যান।
সমাজ উন্নয়নকর্মী সাহেদ আলী শান্ত বলেন, আগের মত তেমন আর ভোঁদড় দেখা যায় না। ২০১২ সালের ১২ জুলাই বন্য প্রাণি সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত ৩০ নম্বর আইন পাস হয়েছে। এই আইন পাসের ১৮০ দিনের মধ্যে যেকোনো ব্যক্তির কাছে সংগৃহীত ও সংরক্ষিত কোনো বন্য প্রাণি থাকলে সেগুলো নিবন্ধন করতে হবে, আইনে নিবন্ধনের কথা উল্লেখ থাকলেও সরক্ষণের তেমন কোনো জোর দেয়া হয়নি।
তিনি বলেন, আমি মনে করি সময়োপযোগী এ আইনে বিলুপ্তপ্রায় ভোদড় ও প্রজননের জন্য অভয়াশ্রম সৃস্টির কথা উল্লেখ থাকা জরুরি ছিল। যে সব অঞ্চলের জেলেদের জীবিকার জন্য বংশ পরম্পরায় মাছ ধরার কৌশল হিসেবে ভোঁদড় ব্যবহার করে আসছে তাদের দ্রুত নিবন্ধনের আওতায় এনে বিলুপ্ত প্রায় এসব প্রাণি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া উচিত।
নড়াইল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এইচ এম বদরুজ্জামান বলেন, গোয়াইলবাড়ি গ্রামের ৪০টি পরিবার ভোঁদড় দিয়ে চিত্রা নদী থেকে মাছ শিকার করে। ভোঁদড় দিয়ে জেলেদের মাছ ধরা পেশা হলেও বিলুপ্ত প্রায় এই প্রাণী সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। কিন্তু এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের আলাদা কোনো নীতিমালা বা বরাদ্দ না থাকায় কোনো কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না।