স্টাফ রিপোর্টার ॥জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপে নড়াইলে কোচিং সেন্টার বন্ধ! নড়াইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অনুমোদিত বিষয়ে শিক্ষক থাকতে অন্য শিক্ষক ক্লাস নেয়ার অভিযোগ ক্ষতিয়ে দেখতে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের এ সিদ্ধান্ত জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি সরকার ঘোষিত কোচিং বা প্রাইভেট পড়ানোর নীতিমালা অমান্য করে শহরের ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক বাণিজ্যিকভাবে কোচিং সেন্টার খুলে স্টুডেন্ট পড়ানো নিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়।সংবাদ প্রকাশের পরে ওই শিক্ষক স্কুলের কমলমতি ছাত্রদের দিয়ে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিছিলে বের করে বলে অভিযোগ উঠে।
বিষয়টি জেলা প্রশাসকের দৃষ্টিগোচরে আসলে তিন তাৎক্ষণিক ওই কোচিং সেন্টারটি বন্ধ করে দেন।একই সাথে অনুমোদিত বিষয়ে শিক্ষক থাকতে অন্য শিক্ষক ক্লাস নেয়ার অভিযোগ ক্ষতিয়ে দেখার জন্য জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেন।
এ সম্পর্কে জেলা প্রশাসক এবং ওই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, ‘নড়াইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে অনাহুত যে ঘটনা ঘটেছে সে বিষয় নিয়ে গতকাল বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকালে স্কুলের সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দ, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক)দের নিয়ে আমি বসেছিলাম। আপনাদের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার নিউজগুলোও আমি দেখেছি ভালোভাবে এবং ফেসবুক লিংককে যে নিউজ এসেছে সেটিও আমি দেখেছি।এটা অপ্রত্যাশিত।গতকালকেও এটা বলেছি যে, জেলা প্রশাসকের কাছে স্টুডেন্টরা মিছিল নিয়ে ছুটে আসবে এটা কখনই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। এটা আমি স্বীকার করবো বর্তমানে বয়েজ স্কুলে ডিসিপ্লিনটা নেই।
তিনি আরও বলেন, স্কুলের শিক্ষকরা কমিটেট ছিলো যে না এ স্কুলের পরিবশে ফিরে আসবে।এখন দু’একজন টিচার যারা প্রাইভেট পড়াচ্ছেন, এটা এক্সট্রা ক্লাস নয়।গার্ডিয়ান মহলে যেটি প্রচার হয়েছে এটা এক্সট্রা ক্লাস, না এটা এক্সট্রা নয়, এটি প্রাইভেট কোচিং, এটা তারব্যক্তিগত।
এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক বলেন, খুবই দৃষ্টিকটু যে স্কুলের ১০০ মিটারের মধ্যে প্রাইভেট বা কোচিং পড়ানো বন্ধ করা হয়েছে এবং এটা চলবে না। প্রাইভেট পড়ানো সরকারি নীতিমালা অনুযায়ি সে অন্য কোথাও পড়াবে।
তিনি আরও বলেন, জেলা প্রশাসক হিসেবে আপনাদেরকে কথা দিতে চাই যে, আমি খুবই হার্ডলাইনে আছি এবং যে দু’টি ব্যবস্থা ইতিমধ্যে নেওয়া হয়েছে সেটা আমি বললাম, আর এ স্কুলের মনিটরিংটা অবশ্যই আরও বাড়িয়ে দিবো।আশাকরি ভবিষ্যতে রিজাল্ট ভালো হবে।
তিনি বলেন, ওই স্কুলের যেটি ক্লাস রুটিনের কথা বলা হয়েছে যে হিসাব বিজ্ঞান বা কমার্সের শিক্ষকদেরকে দিয়ে অংক করানো হচ্ছে সেটিও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়েছি, রুটিনটা চেঞ্জ হবে এবং সাইন্সের টিচার বা গণিত যারা পড়ান তারাই এটা পড়াবে।
এরপরও আমরা একটা মনিটরিং টীম করতেছি যাতে করে এই শিক্ষক না শুধু অন্য কোন টিচারও যাতে কোন ধরণের ইনডিসিপ্লিনের মধ্যে না চলে।
এদিকে নড়াইল জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও আব্দুল হাই সিটি কলেজের অধ্যক্ষ মো: মনিরুজ্জামান মল্লিক এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বলেন, কোচিং সম্পর্কে বলতে গেলে নেতিবাচক ধারণা শিক্ষার্থী-অভিভাবক, শিক্ষক সবার ভেতরই কাজ করে।আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সব সময় চাই শিক্ষার্থীদেরকে শ্রেণিকক্ষে রেখে তাদেরকে সঠিক পাঠদান করাতে।তাদেরকে সরকারের যে ঘোষিত শিক্ষা নীতি কোয়ালিটি এডকেশন সে দিকে আলোকপাত করতে, আমরা সেই চেষ্টাই করে যাই।কিন্তু দূর্ভাগ্যজনকভাবে কিছু কোচিং বাণিজ্য বা যত্রতত্র এধরণের একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে, বিশেষ করে দেখা যায় ক্লাসটাইমে সকাল ৯-৪টা পর্যন্ত এই সময়ে যখন শিক্ষার্থীরা কোচিং প্রতিষ্ঠানে তারা পড়া-লেখার কাজ করে তখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তারা আসে না, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতি তাদের আগ্রহ নষ্ট হয়ে যায়।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যদি কোচিংকে বন্ধ করতে চাই তাহলে সরকারের নীতিমালার আলোকে, সরকার যে বিষয়ে ক্লাসের অনুমোদন দিয়েছে সেটি যথাযথভাবে প্রতিপালিত হচ্ছে কিনা সেদিকে মনিটরিংএর ব্যবস্থা জোরদার থাকতো, বিশেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান যিনি আছেন এবং শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তা যারা আছেন তারা যদি নিবিড় পর্যবেক্ষণ করে তাহলে এই কলেজ বা স্কুল চলাকালিন সময়ে ছেলে-মেয়েরা কোচিংএর প্রতি এতো আগ্রহী হয়ে উঠতো না।’