নড়াইল প্রেসক্লাবের ইফতার মাহফিল ও সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত
নড়াইল প্রেসক্লাবের ইফতার মাহফিল ও সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
"আমাকে ছাড়া আমার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নয়"—এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে নড়াইলে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে এক সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (০৭ মার্চ) নড়াইল প্রেসক্লাব হলরুমে এ সম্মেলনে নারীর অধিকার ও নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দাবী তুলে ধরা হয়।
ঢাকায় আন্তর্জাতিক নারী দিবস কমিটি এবং ঢাকার বাইরের ১৮টি জেলায় 'দুর্বার নেটওয়ার্ক' ও সহযোগী সংগঠনের মাধ্যমে একই সময়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় বলে আয়োজকরা জানান।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস কমিটি, দুর্বার নেটওয়ার্ক ও সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর সম্পূর্ণ অংশগ্রহণ ও স্বাধীন মতামত প্রদান নিশ্চিত করতে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণসহ ১১ দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়। বাংলাদেশে 'আন্তর্জাতিক নারী দিবস কমিটি'র আয়োজনে বিগত ৩৪ বছর ধরে একেকটি সুনির্দিষ্ট প্রতিপাদ্য নিয়ে দিবসটি পালন করে আসছে বলে আয়োজকরা জানান।
দাবীগুলির মধ্যে রয়েছে, নারীর উপর যেকোনো ধরনের সংঘবদ্ধ সহিংসতা বন্ধে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে; সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, দাপ্তরিক বা অধিকারভিত্তিক কমিটি, রাজনৈতিক দল ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নারীর সমান উপস্থিতি ও কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে; জুলাই অভ্যুত্থানের নারী সহযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হবে; নারী, কন্যাশিশু, আদিবাসী, প্রতিবন্ধী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও লিঙ্গবৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে জাতিগত, লিঙ্গভিত্তিক, সাম্প্রদায়িক ও গণসহিংসতা বন্ধ এবং মৌলবাদী ও উগ্রবাদী সংস্কৃতির বিস্তার রোধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে; ধর্ষণ, যৌতুক, যৌননিপীড়ন ও উত্ত্যক্তকরণ এবং নারীর প্রতি সহিংসতাবিরোধী প্রচলিত আইনসমূহ নারীর বৈচিত্র্যময় জীবন ও বাস্তব অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে সর্বোচ্চ স্বার্থ ও সম-অধিকার বিবেচনায় সংশোধন ও পরিমার্জন করতে হবে; আদিবাসী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু, প্রতিবন্ধী, গৃহকর্মী, গার্মেন্টস কর্মী এবং অন্যান্য অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত নারী ও প্রবাসী নারীদের সর্বোচ্চ স্বার্থ নিশ্চিত করতে হবে; প্রতিবন্ধী নারীর জন্য গণপরিবহন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থান ও বিচারব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ প্রবেশগম্য করতে হবে এবং বিশেষ সহায়তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে; প্রতিটি জেলায় ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার, নারীসহায়তা ও তদন্ত বিভাগ, কাউন্সেলিং, সাইবার সাপোর্ট ও পুনর্বাসন ব্যবস্থা চালু করতে হবে; সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নারীবিদ্বেষী কার্যক্রম ও প্রচার নিষিদ্ধ করতে কঠোর সাইবার আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে; নারীর প্রতি সহিংসতা বিরোধী আইন, নারীর অধিকার ও সহায়তা সংক্রান্ত সকল ব্যবস্থা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে; জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামে বয়সভিত্তিক জেন্ডার সংবেদনশীলতা ও ইতিবাচক যৌনশিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে হবে।
লিখিত বক্তব্যে দিবসটি অর্জনের পেছনের লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়, ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের সেলাই কারখানার নারীশ্রমিকরা বিপদজনক ও অমানবিক কর্মপরিবেশ, স্বল্প মজুরী এবং দৈনিক ১২ ঘন্টা শ্রমের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদমিছিল বের করেন। তাদের এই শান্তিপূর্ণ মিছিলের ওপর পুলিশ হামলা চালায়। তিন বছর পরে ১৮৬০ সালের ৮ মার্চ, নিউ ইয়র্ক শহরের পোশাকশিল্প কারখানার নারীশ্রমিকরা সংঘবদ্ধ হয়ে তাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে নিজস্ব ইউনিয়ন গঠনে সমর্থ হন। ১৯০৮ সালের ৮ মার্চ, আবারও নিউ ইয়র্ক শহরে একটি প্রতিবাদমিছিল বের হয়, যাতে পোশাকশিল্প কারখানার নারীশ্রমিকরা যোগ দেন। ৮ মার্চের এই ঘটনাধারার সম্মিলনের ফলে ১৯১০ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলনে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিন এর প্রস্তাব অনুসারে ঐ দিনটিকে 'আন্তর্জাতিক নারী দিবস' ঘোষণা করা হয়। ১৯৭৫ সালে দিবসটিকে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদান করে এবং দিবসটি পালনের জন্য রাষ্ট্রসমূহকে আহ্বান জানায়। এরপর থেকে সারা বিশ্ব জুড়েই নারীর সম-অধিকার আদায়ের প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করার জন্য দিবসটি পালিত হচ্ছে।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, আমাদের আবহমানকালের চর্চায় নারীর ব্যক্তিগত, যেমন: তার খাওয়াদাওয়া, চলাফেরা, পোশাকপরিচ্ছদ, খেলাধুলা, পড়ালেখা, চাকুরি বা পেশা, বিয়ে কিংবা বিয়েবিচ্ছেদ, আবাসনসহ তার জীবনের প্রায় সবকিছুর সিদ্ধান্তই নেয় তার অভিভাবক (অবশ্যই পুরুষ), পারিবার বা সমাজ। জাতীয় বা রাষ্ট্রীয় জীবনের সিদ্ধান্তগুলো গ্রহণের ক্ষেত্রে নারীর নিজের কার্যকর অংশগ্রহণ, মতামত প্রদান বা ভূমিকা রাখার তেমন কোন সুযোগই থাকে না, অর্থাৎ নারীর জীবনের প্রতিটি পর্যায়েই তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে অন্য কেউ। বলা যায়, তার উপরে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া হয় এবং ছলে-বলে-কৌশলে তা তাকে মানতে বাধ্য করা হয়। ধরেই নেয়া হয়, সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য যথেষ্ট যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানবুদ্ধি নারীর নেই। নারী সর্বদা, সর্বত্র পুরুষের অধস্তন, অধীনন্ত। সে নিজে বা একা কোনোভাবেই একজন পরিপূর্ণ মানুষ নয়। জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি তার জীবনের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করবে পুরুষ। এই পুরুষতান্ত্রিক চিন্তাধারা ও চর্চাপ্রসূত সিদ্ধান্ত, প্রথা, নিয়ম, আইন, বিধি-বিধান নারীর অগ্রগতি, এমনকি তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকেও ব্যাহত করে। তা কেবল নারীর নয়, সমগ্র দেশ ও জাতির অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করে।
নারীর মুক্তি, ক্ষমতায়ন ও অধিকার কেবল কাগজে, শ্লোগানে বা বক্তৃতায় থাকলে হবে না, এর প্রকৃত বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ পারিবারিক, সামাজিক এবং জাতীয় পর্যায়ের প্রতিটি ক্ষেত্রে, প্রতিটি স্তরে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণি, বয়স নির্বিশেষে সকল নারীর জন্য। নারীকে দিতে হবে একজন পরিপূর্ণ মানুষের সম্মান ও মর্যাদা। ঘরে, বাইরে, কর্মস্থলে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, যানবাহনে, পথচলায়, উন্মুক্ত অনুষ্ঠানাদিতে নারীর সার্বিক সুরক্ষা দিতে হবে। তার স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা দিতে হবে। নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। সম্পত্তির উত্তরাধিকার এবং নিজের ও সন্তানের অভিভাবকত্বে সমান অধিকার দিতে হবে। সর্বোপরি, নারীকে ছাড়া কোনভাবেই নারীর বিষয়ে কোনরকম সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না, অর্থাৎ তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রতিটি পর্যায়ে তার সম্পূর্ণ অংশগ্রহণ এবং স্বাধীন মতামত প্রদানের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন আন্তর্জাতিক নারী দিবস কমিটির নড়াইল জেলা প্রতিনিধি ও নড়াইল নারী উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক কোহিনুর আক্তার। এছাড়া নড়াইল প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক এস. এম. আব্দুল হক ও সদস্য সচিব মাহবুবুর রশিদ লাবলু ও সাংবাদিক মুন্সি আসাদুর রহমান গুরুত্বপূর্ণ মতামত ব্যক্ত করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আয়োজকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নড়াইল নারী উন্নয়ন সংস্থার সভানেত্রী সাজেদা খানম , দুর্বার নেটওয়ার্কের সদস্য ও চন্দ কানন সংস্থার প্রধান সালমা জামান, আন্তর্জাতিক নারী দিবস কমিটির সদস্য শিক্ষক লাভলী ইয়াসমিন, এনজিও কর্মী নূর নাহার পারভীন, নারী সাংবাদিক নড়াইল নারী উন্নয়ন সংস্থার সদস্য গুলশান আরা ও বৈষ্যমবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নড়াইল জেলার সদস্য লামিয়া সুলতানা। এ সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরাও উপস্থিত ছিলেন।
নড়াইল প্রেসক্লাবের ইফতার মাহফিল ও সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
স্টাফ রিপোর্টার ॥ নড়াইলে“ফ্রিল্যান্সারদের অভিমত-আমাদের করনীয়” শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। নড়াইল ডিজিটাল লাইব্রেরীর আয়োজনে মঙ্গলবার(১৮মার্চ) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালার প্রধান অতিথি ছিলেন নড়াইলের জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার জাহান।
নোয়াখালীতে অভিযান চালিয়ে ৬০৮ কার্টন অবৈধ বিদেশি সিগারেট উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় মো. তসলিম নামের এক চোরাকারবারিকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।