এদিকে অধস্তন পুলিশ সদস্যরা অনড় রয়েছেন তাদের ১১ দাবিতেই। দাবি মানা না হলে দায়িত্বে ফিরবেন না বলে জানিয়েছেন পুলিশ সদস্যরা।
এসময় জিওসি মেজর জেনারেল মোহাম্মদ মাহবুবুর রশিদ পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, সেনাবাহিনী আসলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রস্তুত না। আপনাদের চোখের সামনে আইনশৃঙ্খলা ভেঙ্গে যাবে চুরি ডাকাতি রাহাজানি হত্যা ছিনতাই ধর্ষন এই সমস্ত অসামাজিক কর্মকার্যকলাপ বেড়ে যাবে .. আপনি হয়তো আজকে চুপ করে আছেন একটা সময় আপনার পরিবারের উপর আঘাত আপনার উপর আঘাত আসবে তখন আপনারই খারাপ লাগবে।”
তিনি আরও বলেন, “এখন উপলদ্ধি করতে পারছি পুলিশের প্রয়োজনীয়তা কি? পুলিশের বিশাল প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সমাজ ভেঙ্গে যাবে, যদি আইনশৃঙ্খলা না থাকে। আর আইনশৃঙ্খলা শুধু পুলিশের করতে পারে, দেশের আইনশৃঙ্খলা সেনাবাহিনী করে না, দেশ রক্ষা করে।”
এই মুহুর্তে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং সাধারণ মানুষের জীবনে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে আপনাদের প্রয়োজন। বিষয়টি আমি আপনাদের উপর ছেড়ে দিলাম।”
এ সময় উপস্থিতি ছিলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাজাহার আল কবির, লে: কর্ণেল সাফায়েত আব্দুল্লাহ নড়াইলের জেলা প্রশাসক মোহাম্ম আশফাকুল হক চৌধুরী, পুলিশ সুপার মেহেদী হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, আনসার ভিডিপি’র জেলা এ্যাডজুন্ট্র্যান্ট বিকাশ চন্দ্র দাস, সদরের ওসি, লোহাগড়ার ওসি সহ পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ।
সাম্প্রতিক সময়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পুলিশ সদস্য নিহত ও আহত হয়। গত ৫ আগষ্ট ২০২৪ তারিখ ক্ষমতাসীন সরকারের পতনের পর পুলিশ সদস্যরা তাদের স্বাভাবিক পুলিশী কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে ১১ দফা দাবিতে দেশব্যাপী কর্মবিরতি পালন শুরু করে।
১১ দফা দাবীর মধ্যে রয়েছে:
(১) চলমান ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পুলিশ হত্যাসহ সব পুলিশি স্থাপনায় ধ্বংসযজ্ঞ চালানো ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে।
(২) নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারকে এককালীন আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিয়ে আজীবন পেনশন রেশন প্রাপ্তি এবং পরিবারের একজন সদস্যের সরকারি চাকরি নিশ্চিত করা। আহত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসা এবং গুরুতর আহত পুলিশ সদস্যদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা।
(৩) পুলিশের নিয়োগ বিধিমালা বিশেষত সাব ইন্সপেক্টর এবং সার্জেন্ট নিয়োগ বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) অধীনে এবং পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের অধীনে কনস্টেবল নিয়োগে শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।
(৪) সাব ইন্সপেক্টর এবং সার্জেন্ট পদে বিদ্যমান পদোন্নতিসংক্রান্ত জটিলতা নিরসন করা। সেক্ষেত্রে পুলিশ পরিদর্শক পদ থেকে সহকারী পুলিশ কমিশনার পদে ৩০ শতাংশ সরাসরি এবং ৭০ শতাংশ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ এবং সেটি যথাসময়ে নিশ্চিত করা। সাব ইন্সপেক্টর এবং সার্জেন্ট থেকে ইন্সপেক্টর পদে পিএল হওয়ার এক বছরের মধ্যে পদোন্নতি দিতে হবে। এ ছাড়া কনস্টেবল, নায়েক, এটিএসআই, এএসআই পদোন্নতির ক্ষেত্রে পরীক্ষায় পাসকৃতদের পরবর্তী বছর পুনঃপরীক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা বাতিল এবং পদোন্নতি দেয়ার ক্ষেত্রে পাসকৃতদের সিনিয়রিটি অনুসরণ করা।
(৫) আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী পুলিশের কর্মঘণ্টা কমিয়ে আট ঘণ্টা করা এবং অতিরিক্ত কর্মঘণ্টার জন্য ওভারটাইম দেয়ার ব্যবস্থা করা অথবা বছরের দুটি বেসিকের সমপরিমাণ অর্থ দেয়া।
(৬) পুলিশের ঝুঁকি ভাতা বৃদ্ধিকরণ, টিএ-ডিএ বিল প্রতিমাসের দশ তারিখের মধ্যে দেয়া এবং প্রযোজ্য সব সেক্টরে সোর্স মানি নিশ্চিত করতে হবে।
(৭) পুলিশ সদস্যদের বাৎসরিক ২০ দিন নৈমিত্তিক ছুটি বৃদ্ধি করে অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে ষাট দিন করতে হবে। দেশ ও জনগণের স্বার্থে ছুটি ছাড়া সম্ভব না হলে অভোগকৃত ছুটির বিনিময়ে আর্থিক সুবিধা দিতে হবে।
(৮) পুলিশ বাহিনীর প্রচলিত পুলিশ আইন এবং পুলিশ রেগুলেশন অফ বেঙ্গল সংস্কার করে যুগোপযোগী এবং কার্যকরী করতে হবে, যার মাধ্যমে পুলিশ বাহিনীর মর্যাদা এবং অধস্তন কর্মকর্তার কর্মচারীদের অধিকার নিশ্চিত হয়।
(৯) পুলিশ বাহিনীকে যেন কোনো দলীয় সরকার তার রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যবহার করতে না পারে সেজন্য স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন করতে হবে।
(১০) পুলিশের সকল থানা, ফাঁড়ি এবং ট্রাফিক বক্স আধুনিকায়ন করতে হবে এবং অধস্তন অফিসারদের জন্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
(১১) নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের অধস্তন কর্মকর্তাদের জন্য আবাসিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে এবং সব ব্যারাকে বিদ্যমান আবাসন সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন করে ব্যারাকগুলোকে আধুনিকায়ন করতে হবে।