নড়াইলে অনুমোদন ছাড়াই চলছে অধিকাংশ ইটভাটা। নিয়ম - নীতির তোয়াক্কা না করে কৃষি জমি আর লোকালয়ে গড়ে ওঠা এসব ভাটায় বেপরোয়া ভাবে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ফলে একদিকে উজাড় হচ্ছে গাছ - পালা , অন্যদিকে কমছে কৃষি জমি।অন্যদিকে ইটভাটার তপ্ত কালোধোয়া , ধুলা ময়লার কবলে হুমকির মুখে পড়েছে এলাকার ফসলি জমি , জনবসতি।এদিকে বেআইনিভাবে পরিচালিত ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেদাবি জেলা প্রশাসকের।
সরেজমিন জেলার প্রত্যন্ত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে , প্রতিটি ইটভাটায় পুরোদস্তুর ইট তৈরি চলছে।কয়লা দিয়ে ইট পোড়ানোর নির্দেশনা থাকলেও সে নিয়ম না মেনেই অধিকাংশ ভাটায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে কাঠ। প্রকাশ্যে শত শত মণ কাঠ জড়ো করে রাখা হয়েছে এসব ভাটায়।এ ছাড়া ভাটার ধোয়া নির্গমনের জন্য পরিবেশ অধিদফতরের ন্যূনতম ৬৫ থেকে ১২০ ফিট কংক্রিটের স্থায়ী চিমনি স্থাপনের নির্দেশনা থাকলেও হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া সব ভাটায় ব্যবহার করা হচ্ছে স্বল্প উচ্চতার চিমনি।
স্থানীয়দের অভিযোগ , লোকালয়ে গড়ে ওঠা এসব ইটভাটা থেকে নির্গত কালোধোয়া ও তাপে এলাকার ফসলি জমি , ফলদ গাছ - পালা জনবসতি হুমকির মুখে পড়ছে।তাছাড়া কৃষি জমির উপরিভাগের ঊর্বর মাটি ইট তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহারের ফলে ঊর্বরতা হারিয়ে চাষের অযোগ্য হয়ে পড়ছে জমি।
জানা যায় , নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত শুষ্ক মৌসুম জুড়ে সাধারণত ইট তৈরি চলে।এ সময়ে ভাটার আকার ও আয়তন ভেদে প্রতিটি ইটভাটায় ৪০ থেকে ৫০ লাখ ইট পেড়ানো হয়ে থাকে।এ জন্য প্রতি ভাটায় ৫০ থেকে ৭০ হাজার মণ কাঠের প্রয়োজন হয়।প্রতিটি সাড়ে ৯ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য , সাড়ে ৪ ইঞ্চি প্রস্থ ও পৌনে ৩ ইঞ্চি উচ্চতা বিশিষ্ট প্রচলিত আকৃতির ৮ হাজার ইটের জন্য কাঁচামাল হিসেবে ১ হাজার ঘনফুট মাটি ব্যবহার হয়।এ জন্য এক একটি ভাটায় বছরে অন্তত ৫ থেকে ৬ একর জমির উপরিভাগের মাটি ব্যবহার হয়।
জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে , নড়াইল জেলায় অর্ধশতাধিক ইটভাটা রয়েছে , যার প্রায় অর্ধেকেরই যথাযথ অনুমোদন নেই।
বেআইনিভাবে পরিচালিত ইটভাটার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান ব্যক্ত করে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন , কয়লার মূল্য বৃদ্ধির অজুহাতে কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে।এরই জেরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ইতিমধ্যেই কয়েকটি ভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন , নীতিমালা লঙ্ঘন করে ভাটা পরিচালনার প্রমাণ পেলে এ সকল ইটভাটা বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।