নড়াইলকণ্ঠ ॥ নানা আয়োজনে ১০ ডিসেম্বর নড়াইল হানাদারমুক্ত দিবস পালিত হয়েছে।১৯৭১ সালের এ দিনে মিত্র বাহিনীর কোনো প্রকার অংশগ্রহণ ছাড়াই নড়াইলের বীর মুক্তিযোদ্ধারা এ জেলাকে সম্পূর্ণভাবে শত্রুমুক্ত করতে সক্ষম হন।সামগ্রিক মুক্তিযুদ্ধের বিশাল ক্যানভাসে নড়াইল দেশের একটি ক্ষুদ্র এলাকা হলেও মুক্তিযুদ্ধে নড়াইলের রয়েছে গৌরবউজ্জ্বল ইতিহাস।শোষন বঞ্চনাহীন সুখী সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ার মুক্তি সংগ্রামের সেই চেতনা সঠিক বাস্তবায়নের প্রত্যাশায় আজওদিন গুনছেন এখানকার সেই সব বীর সেনারা।হত্যা,ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের নানা ঘটনার পর নড়াইলকে হানাদারমুক্ত করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন মুক্তিযোদ্ধারা।সে মোতাবেক মুক্তিযোদ্ধারা ৯ ডিসেম্বর তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলেন নড়াইল শহরকে।১০ ডিসেম্বর পানি উন্নয়ন বোর্ডের পাক ক্যাম্পের ওপর হামলা চালালে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে তুমূল সংঘর্ষ শুরু হয়।এসময় বাগডাঙ্গা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর ও মতিয়ার রহমান শহীদ হন।পরে মুক্তিবাহিনীর হাতে পাক ক্যাম্পের দুই সেন্ট্রি নিহত হলে বেলা ১১টার দিকে ক্যাম্প অধিনায়ক বেলুচ কালা খান বিপুল অস্ত্রসহ সারেন্ডার করেন। তখন জয় বাংলা শ্লোগানে শ্লোগানে প্রকম্পিত হয় নড়াইল মহাকুমা শহর।

প্রতিবারের ন্যায় এবারও শনিবার(১০ ডিসেম্বর) দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে পালন করা হয় নড়াইলমুক্ত দিবস।জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল, জেলা প্রশাসন ও চিত্রা থিয়েটারসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে সকালে জাতীয় ও মুক্তিযোদ্ধা পতাকা উত্তোলন, র্যালি ,মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ, বদ্ধভূমি, গণকবর ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুর্যাল ও প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ বিশেষ মোনাজাত, আলোচনা সভা, এনভায়রনমেন্টাল থিয়েটার(মুক্তিযুদ্ধের মহড়া) এবং জারী গান অনুষ্ঠিত হয় ।

সকাল ৯টায় নড়াইল শহরের রুপগঞ্জ বাজারে পানি উন্নয়ন বোর্ড এর গনকবরে পুস্পস্তবক অর্পন শেষে একটি র্যালি থেকে শুরু হয়ে বঙ্গবন্ধুর মুর্যাল,৭১ এর বধ্য ভূমি, মুক্তিযুদ্ভোর স্মৃতি স্তম্ভে পুস্পমাল্যা অর্পন শেষে, জেলা শিল্পকলা একাডেমি অডিটোরিয়ামে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
র্যালি শুরু আগে নড়াইল মুক্ত দিবস এর উপর মুক্তিযুদ্ধের এনভায়রনমেন্টাল থিয়েটার অনুষ্ঠিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের এনভায়রনন্টোল থিয়েটারটি নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের সুলতান মঞ্চ চত্বর থেকে শুরু হয়ে যুদ্ধের মহড়া করতে করতে শহরের রূপগঞ্জ বাজার হয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডে এসে পাকহানাদার বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে তুমুল যুদ্ধের পর পাকবাহিনী আত্মসর্মপন করে। পরে আত্মসমর্পনকারী পাকহানাদার বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে র্যালীটি শহর প্রদক্ষিণ শেষে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে গিয়ে শেষ হয়।

গৃহিত কর্মসূচিতে জাতীয় সংসদ সদস্য মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার পক্ষে, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কামান্ড কাউন্সিল, পানি উন্নয়ন বোর্ড. গণপূর্ত বিভাগ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, চিত্রা থিয়েটার, নড়াইল প্রেসক্লাবসহ সরকারি-বে-সরকারি দফতর, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ, বদ্ধভূমি, গণকবর ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুর্যালে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
এসব অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, পুলিশ সুপার সাদিরা খাতুন ,অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ফকরুল হাসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( রাজস্ব) শ্বাশ্বতীশীল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রিয়াজুল ইসলাম, নড়াইল পৌরসভার মেয়র আঞ্জুমান আরা, সদরের নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া ইসলাম, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা জেলা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম কবির, বীরমুক্তিযোদ্ধা এসএম বাকী, অ্যাডভোকেট এস এ মতিন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, আইনজীবী, সাংস্কৃতিক কর্মিসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।