সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ এবং হত্যাচেষ্টার মামলায় গত বছরের ১৭ আগস্ট মাহমুদুর রহমানসহ পাঁচজনকে পৃথক দুই ধারায় সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট।
মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ-মামলা
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর মাহমুদুর রহমানকে বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর ২০০৫ সালে তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন।
তিন বছর পর ২০০৮ সালে তিনি বিএনপি নেতা মোসাদ্দেক আলীর মালিকানাধীন আমার দেশ পত্রিকার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেন। সে সময় থেকেই তিনি পত্রিকাটির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্ব পালনকালে মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল।
মাহমুদুর রহমানের আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ জানিয়েছেন, মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলার মোট সংখ্যা ১৩০টির মতো, এর মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক হয়েছে মানহানির মামলা।
এছাড়া বিচারপতির কথোপকথন পত্রিকায় ফাঁস, রাষ্ট্রদ্রোহিতা, আর্থিক অনিয়ম, প্রতারণা, বিস্ফোরকদ্রব্য, পুলিশের কাজে বাধাদানসহ নানা ধরনের মামলা রয়েছে।
মাহমুদুর রহমান প্রথম আটক হয়েছিলেন ২০১০ সালের জুনে। আমার দেশ পত্রিকার প্রকাশক হাসমত আলীর করা একটি প্রতারণা মামলায় তাকে তখন গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সেই সঙ্গে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা প্রকাশনার অনুমতি বা ডিক্লারেশনও বাতিল করে দেয়া হয়।
সে সময় ঢাকার জেলা প্রশাসকের আদেশে পত্রিকার প্রকাশনা বাতিল করার পর পুলিশ আমার দেশের ছাপাখানাও বন্ধ করে দেয়।
পরে, আদালত অবমাননার একটি মামলায় ওই বছর ১৯ আগস্ট মাহমুদুর রহমানকে ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং এক লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। সে সময় নয় মাস কারাভোগের পর ছাড়া পান মাহমুদুর রহমান।
এরপর ২০১৩ সালে মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে ধর্ম ঘিরে বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগ এনে তাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানায় শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ। এ দাবিতে তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্মারক লিপিও দিয়েছিল।
ওই বছরের ১১ এপ্রিল মাহমুদুর রহমানকে ঢাকার কারওয়ান বাজারে দৈনিক আমার দেশ কার্যালয় থেকেই আটক করে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একজন বিচারপতির কথোপকথন পত্রিকায় ফাঁস করার অভিযোগ ওঠার পর মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে এবং রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে দুইটি মামলা ছিল বলে তাকে আটকের পর জানিয়েছিল পুলিশ।
সেসময় বিচারপতির কথোপকথন ফাঁস ছাড়াও হরতালের সময় গাড়ি পোড়ানো ও ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত থাকার দুটি মামলাতেও মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
প্রায় সাড়ে তিন বছর কারাভোগের পর ২০১৬ সালের নভেম্বরে জামিনে মুক্তি পান মাহমুদুর রহমান।
এরপর সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা না দেওয়ায় ২০১৫ সালের আগস্টে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা দুর্নীতির মামলায় তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাকে।
পাশাপাশি তাকে এক লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়।
এদিকে ২০১৬ সালের আগস্টে জঙ্গি বিরোধী অভিযান নিয়ে বিভ্রান্তিকর এবং উস্কানিমূলক খবর বা বক্তব্য প্রচারের অভিযোগে গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশের পরামর্শে নিউজ পোর্টালসহ ৩৫টি ওয়েবসাইট বন্ধ করা হয়েছিল।
বন্ধ করে দেয়া ওয়েবসাইটগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই ছিল অনলাইন নিউজ পোর্টাল, যার মধ্যে আমার দেশ পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ ছিল অন্যতম।
জামিনে মুক্ত হয়ে মাহমুদুর রহমান ২০১৭ সালে বিদেশে চলে যান।
সবশেষ গত ২৭ সেপ্টেম্বর সকালে তুরস্ক থেকে দেশে ফেরেন মাহমুদুর রহমান।
সূত্র : বিবিসি বাংলা।