• 05 May, 2024

জামিনেও ৯ মাস ঘরছাড়া ২০০ পরিবার, ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ কমিশনের

জামিনেও ৯ মাস ঘরছাড়া ২০০ পরিবার, ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ কমিশনের

একটি হত্যাকাণ্ডের জেরে নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পিরোলী গ্রামের নিরীহ মানুষদের মামলার আসামি করা হয়েছে। তাদের কেউ কৃষিকাজ করে, কেউ-বা দিনমজুর।

আসামি হয়ে হাজত খেটে জামিনে বের হয়ে এলেও ঘরে ফেরার ভাগ্য হয়নি ভুক্তভোগী সেসব মানুষের। এছাড়া, হামলার ভয়ে বাড়িঘর ফেলে পথে পথে ঘুরছে একই গ্রামের প্রায় ২০০ পরিবারের সদস্যরা। ঘটনাটি দৃষ্টিগোচরের পর সুয়োমোটো গ্রহণ করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।

নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পিরোলী গ্রামে আজাদ শেখ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে উদ্ভূত অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় নিবর্তনমূলক ব্যবস্থা কেন গ্রহণ করা হয়নি, সুয়োমোটোতে তার ব্যাখ্যা দিতে নড়াইল পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। পাশাপাশি আদেশের অনুলিপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে।

রোববার(২১ এপ্রিল) জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা ইউশা রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

তাতে বলা হয়েছে, ‘২০০ পরিবার ৯ মাস ঘরছাড়া’ শীর্ষক প্রকাশিত সংবাদ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নজরে এসেছে। ঘটনাটি নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পিরোলী গ্রামের। 

একটি হত্যাকাণ্ডের জেরে মামলার আসামি হয় এলাকার নিরীহ মানুষ। তাদের কেউ কৃষিকাজ করে, কেউ-বা দিনমজুর। আসামি হয়ে হাজত খেটে জামিনে বের হয়ে এলেও ঘরে ফেরার ভাগ্য হয়নি ভুক্তভোগী সেসব মানুষের। এছাড়া, হামলার ভয়ে বাড়িঘর ফেলে পথে পথে ঘুরছে একই গ্রামের প্রায় ২০০ পরিবারের সদস্যরা। এ ঘটনায় আজ জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সুয়োমোটো গ্রহণ করেছে।

সংবাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ২০ জুলাই গ্রামটিতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে খুন হন যুবলীগ কর্মী আজাদ শেখ (৩০)।  

হত্যাকাণ্ডের পর থেকে মানুষগুলো গ্রামের ভিটা-মাটি ছাড়া। গত ১৫ এপ্রিল পুলিশ সুপারের কাছে বাড়িঘরে ফেরার আকুতি নিয়ে তার কার্যালয়ে যান ভুক্তভোগীরা। তারা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করেন। পরে পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত আবেদন করেন।

প্রতিবেদনে পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে উল্লেখ করা হয়, পিরোলী গ্রামে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বাবু শেখ ও শহীদুল মোল্যা গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্বের জেরে খুন হন যুবলীগ কর্মী আজাদ শেখ। তিনি বাবু শেখ গ্রুপের একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। ওই ঘটনায় ২০ জনকে আসামি করে মামলা করেন আজাদের বড় ভাই সাজ্জাদ শেখ। আজাদ হত্যা মামলার ছয় আসামি ছাড়া বাকি সবাই আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। তবে জামিনের পরও তারা ঘরে ফিরতে পারছেন না। 

এ হত্যাকাণ্ডের জেরে নিহতের দলীয় প্রতিপক্ষ ২০ জন আসামি হলেও গ্রামের প্রায় ২০০ পরিবারের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে পরিবারগুলোর সদস্যদের গ্রামছাড়া করা হয়। সেই থেকে বাড়ি ঘরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে না পেরে দীর্ঘ নয় মাস ধরে পরিবার-পরিজনসহ পথে পথে মানবেতর দিন পার করছে। 

প্রকাশিত সংবাদের বরাতে মানবাধিকার কমিশন কর্তৃক গৃহীত সুয়োমোটোতে উল্লেখ রয়েছে, পিরোলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জারজীদ মোল্যা বলেন, ২০০ মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছে। জমি-জমাও চাষ করতে পারছে না। আমরা চেষ্টা করছি তাদের বাড়িতে তুলে দেওয়া যায় কিনা।  পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি এক সপ্তাহের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে নড়াইলের পুলিশ সুপার মো. মেহেদী হাসান বলেন, এটি নয় মাস আগের একটি খুনের ঘটনা। নড়াইলের দীর্ঘদিনের রীতি হলো, আসামিপক্ষের বাড়িঘর ভাঙচুর করা। আদালতে মামলা চলমান। আদালত যে রায় দেবেন, সেটাই চূড়ান্ত হবে।

সুয়োমোটোতে আরও উল্লেখ রয়েছে, বাসস্থান একজন মানুষের মৌলিক প্রয়োজন। উল্লিখিত সংবাদে বর্ণিত ভুক্তভোগী প্রায় ২০০ মানুষ বাসস্থান থাকার পরও নিজ নিজ বাসস্থানে নিরাপদে বসবাস করতে না পারার বিষয়টি বাংলাদেশের সংবিধানের ১৫ অনুচ্ছেদের পরিপন্থি।

অন্যদিকে, সংশ্লিষ্ট পুলিশ সুপারের ভাষ্য মতে, নড়াইলের দীর্ঘদিনের রীতি হলো, আসামিপক্ষের বাড়িঘর ভাঙচুর করা। এক্ষেত্রে, খুনের ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যথাযথ নিবর্তনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি তা কমিশনের বোধগম্য নয়। তাছাড়া মানুষের নিজ নিজ বাসস্থানে নিরাপত্তার সঙ্গে বসবাস করার ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। 

গৃহীত সুয়োমোটোতে নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পিরোলী গ্রামে আজাদ শেখ খুনের ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে উদ্ভূত অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় নিবর্তনমূলক ব্যবস্থা কেন গ্রহণ করা হয়নি, তার ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য নড়াইলের পুলিশ সুপারকে বলা হয়েছে। 

ভুক্তভোগী প্রায় ২০০ মানুষকে নিজ নিজ বাসস্থানে বসবাস করার এবং চাষাবাদ করার উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করে আগামী ১৮ মের মধ্যে কমিশনকে অবহিত করতে নড়াইলের পুলিশ সুপারকে বলা হয়েছে। আদেশের অনুলিপি সিনিয়র সচিব, জননিরাপত্তা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে।