রাতভর মাদকতাময় সুবাস ছড়িয়ে ভোরের মৃদু বাতাসে ঝরে পড়া শিউলির সমারোহ, নদীর ধারে কাশবনের সারি আর দিনের শুরুতে দূর্বাঘাসের ওপর জমে থাকা মুক্তোদানার মতো শিশির বিন্দু প্রকৃতিতে শরতের আগমনী বার্তা জানাচ্ছে।প্রকৃতির এই পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ভক্তদের জন্য আঁচলভর্তি মমতা আর আশীর্বাদ নিয়ে এ সময়েই স্বর্গ থেকে মর্ত্যলোকে নেমে আসেন দেবী দুর্গা। বছর ঘুরে আবারও এসেছে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ।তাই তো প্রিয় দেবীকে স্বাগত জানাতে এরই মধ্যে সব রকম প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন নড়াইলের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জেলা নড়াইলে চলতি বছর ৫৮৪টি মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হচ্ছে শারদীয় দুর্গাপূজা।পূজা শুরু হতে বাকি আর মাত্র কয়েক দিন, তাই তো মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে প্রতিমা তৈরি, সাজসজ্জার মহাযজ্ঞ।দুর্গোৎসব নির্বিঘ্ন করতে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকেও ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়ার কথা জানানো হয়েছে।উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা উদ্যাপনের আশাবাদ হিন্দু নেতারাসহ সংশ্লিষ্ট সবার।
জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মণ্ডপে মণ্ডপে দুর্গাপ্রতিমা প্রস্তুত করায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা।প্রতিমাশিল্পীরা নিজেদের সাধ্যের সবটুকু উজাড় করে রং-তুলির আঁচড়ে তাদের পরম আরাধ্য দেবীকে দৃষ্টিনন্দন করে তুলতে কাজ করছেন।
সময় সংবাদের কথা হয় কয়েকজন প্রতিমাশিল্পীর সঙ্গে। তারা জানান, বেশ আগেই প্রতিমা গড়া শেষ হয়েছে।এখন রঙের কাজ চলছে। পূজা শুরুর শুভক্ষণ যত ঘনিয়ে আসছে, তাদের ব্যস্ততা ততই বাড়ছে।যথাসময়ে প্রতিমাকে বর্ণিল সাজে সাজিয়ে তুলতে নাওয়া-খাওয়া ভুলে তারা দিনরাত খেটে চলেছেন।
দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি সম্পর্কে জেলা পুলিশ সুপার মোসা. সাদিরা খাতুন সময় সংবাদকে জানান, দুর্গাপূজার উৎসবমুখর পরিবেশ নিশ্চিতে নড়াইল জেলা পুলিশ বদ্ধপরিকর।এ লক্ষ্যে প্রতিমা তৈরি থেকে শুরু করে বিসর্জন পর্যন্ত পূজার সকল আয়োজনের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। হিন্দু নেতারা ছাড়াও ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সুধীজনের পরামর্শ ও মতামতের আলোকে পরিকল্পনা সাজাতে এরই মধ্যে জেলা সদরসহ প্রত্যন্ত এলাকায় মতবিনিময় ও সভা-সমাবেশ চলমান রয়েছে।তা ছাড়া যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে প্রতিটি মণ্ডপে সিসি ক্যামেরা, পর্যাপ্ত আলো ও যথাযথ বেষ্টনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জেলা পুলিশসহ সবার আন্তরিক প্রচেষ্টা ও সহযোগিতায় উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা উদ্যাপনের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।
অন্যদিকে দুর্গোৎসবের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ নড়াইল জেলা শাখার সহসভাপতি সঞ্জিব কুমার বসু বলেন, ‘পহেলা অক্টোবর ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে ৫ অক্টোবর বিজয়া দশমী শেষে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে।এ বছর জেলায় ৫৮৪টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।সরকারি সহায়তা হিসেবে প্রতিটি মণ্ডপে ৫০০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিসহ সবার সহযোগিতায় সুন্দরভাবে পূজা উদ্যাপনের ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।’