ভুক্তভোগী ইমাম মুফতি এম হেদায়েত হোসাইন নড়াইল পৌরসভার উজিরপুর দক্ষিণপাড়া জামে মসজিদে ইমামতির দায়িত্বে ছিলেন। একই সঙ্গে উজিরপুর ইসলামিয়া নূরানী মাদরাসার শিক্ষক ছিলেন।
রোববার (০১ সেপ্টেম্বর) তাকে বরখাস্তের পর ভুক্তভোগী ইমামকে মসজিদ থেকে বের করে দেওয়া হয়। উজিরপুর মসজিদ কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও উজিরপুর ইসলামিয়া নূরানী মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমানের নির্দেশে তাকে চাকুরিচ্যুত করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
অভিযুক্ত আনিচুর রহমান নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন খান নিলুর ব্যক্তিগত সহকারী।
এছাড়াও তিনি আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন। বরখাস্তের পর ঈমাম মুফতি এম.হেদায়েত হোসাইন তার ফেসবুক আইডিতে স্ট্যাটাস দেন, ‘জুময়ার খুতবায় হক কথা বলার অপরাধে ভিসার মেয়াদ শেষ।’
জানা গেছে, ভুক্তভোগী ইমাম মুফতি এম হেদায়েত হোসাইন নড়াইল জেলা সদরের হবখালী ইউনিয়নের কাগজীপাড়া গ্রামের আব্দুল গফফার মোল্যার ছেলে। তিনি বিভিন্ন সময় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে ইসলামি অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে আলোচন করেন। পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন পত্রিকায় ইসলামি কলাম ও কয়েকটি ইসলামি পুস্তিকার লেখালেখি করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মুফতি এম. হেদায়েত হোসাইন নড়াইলে ছাত্র আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসার জন্য অর্থ সংগ্রহ করেন। তখন থেকেই তাকে চাপ দিতে থাকে মসজিদ কমিটির লোকজন। এরপর আওয়ামী লীগ সরকার পতনের দিন গত ৫ আগস্ট মসজিদের মুসল্লিদের মিষ্টিমুখ করান তিনি।
সর্বশেষ গত শুক্রবার (৩০ আগস্ট) জুমার খুতবায় দুর্নীতিবাজ মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে বিশেষত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিল্প ও বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও বিতর্কিত সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের সমালোচনা করেন। এতে ক্ষিপ্ত হন মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন খান নিলুর ব্যক্তিগত সহকারী আনিসুর রহমান।
এ ঘটনার প্রেক্ষিতে রোববার (১ সেপ্টেম্বর) ইমাম হেদায়েত হোসাইনকে মসজিদ ও মাদরাসার দায়িত্ব থেকে বরখাস্ত করেন কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান। এরপর তাকে সকাল ১০টার দিকে মসজিদ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করা হয়।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ইমাম মুফতি হেদায়েত হোসাইন বলেন, আমার ওপর অর্পিত ইমামতি ও মাদরাসার শিক্ষকতার দায়িত্ব আমি যথাযথভাবে পালন করেছি। ছুটি ছাড়া একদিনও একটা ক্লাস বাদ দেইনি। নিয়মিত নামাজ পড়িয়েছি। কিন্তু বিচারপতি মানিক ও সালমান এফ রহমানের সমালোচনা করে জুমার খুতবায় বক্তব্য রাখায় আমাকে চাকুরিচ্যুত করা হলো।
তিনি আরো বলেন, ‘ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আহত হওয়া শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার জন্য আমি অর্থ সংগ্রহ করেছিলাম। তখন থেকেই মসজিদ কমিটির আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হই। আমি এই ঘটনার বিচার চাই।’
আনিসুর রহমান বলেন, আমাদের মসজিদে চার বছর ধরে আব্দুল গাফফার নামে একজন ইমামতি করতেন। তিনি চলে যাওয়ার পর মুফতি এম হেদায়েত হোসাইনকে ইমাম ও নূরানী মাদরাসার শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় কমিটির সম্মতিক্রমে। ঈমাম হিসেবে ভালো আলোচনা করলেও নূরানী মাদরাসায় পাঠদানের ক্ষেত্রে অভিভাবকরা সন্তষ্ট নয়। সে কারণে কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক ১৫ আগস্ট ওই শিক্ষককে রাখা হবে না বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছেন তা সঠিক নয়।