নড়াইলকন্ঠ ॥ নড়াইলে নানা আয়োজনে বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের ৩১তম প্রয়াণ দিবস পালিত হয়েছে। শুক্রবার (১০ অক্টোবর) সকালে জেলা প্রশাসন ও এস এম সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালার আয়োজনে দিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্য দিয়ে স্মরণ করা হয় এই কিংবদন্তি শিল্পীকে।
সকালে শিল্পীর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্যদিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার জাহান, জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আছাদুজ্জামান, পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম, স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক জুলিয়া সুকায়না, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) লিংকন বিশ্বাস, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মনিরুল ইসলাম, এস এম সুলতান ফাউন্ডেশনের সাবেক সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট ইকবাল হোসেন সিকদার, জামায়াত নেতা হেমায়েতুল হক, এনপিপি নড়াইলের সভাপতি শরীফ মুনির হোসেনসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।
পরে অনুষ্ঠিত হয় পবিত্র কোরআন খতম, শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, বিশেষ দোয়া মাহফিল, শিশুস্বর্গের শিশুদের আঁকা চিত্রকর্ম প্রদর্শনী ও আলোচনা সভা। দিনব্যাপী এই কর্মসূচিতে সুলতানপ্রেমীরা অংশগ্রহণ করেন শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়।
চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান তাঁর তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তুলেছিলেন বাংলার কৃষক, শ্রমজীবী ও মেহনতি মানুষের প্রাণচাঞ্চল্য ও শক্তি। তাঁর বিখ্যাত চিত্রকর্মগুলোর মধ্যে রয়েছে— ‘মহাপৃথিবী’, ‘কৃষকের কাজ’, ‘ধলেশ্বরী’, ‘নারী’, ‘কৃষাণী’, ‘দ্য লোডারস’, ‘ডেভেলপমেন্ট অব বাংলাদেশ’, প্রভৃতি। তাঁর ছবিতে দেহের গঠন ছিল পৌরাণিক শক্তির প্রতীক, যেখানে কৃষক ও শ্রমিককে তিনি তুলে ধরেছিলেন বীরের মর্যাদায়- বাংলাদেশের মাটির মানুষকে করে তুলেছিলেন বিশ্বমানবতার প্রতীক।
সুলতানের জন্ম ১৯২৩ সালে নড়াইলের মাছিমদিয়া গ্রামে। তাঁর প্রতিষ্ঠিত ‘শিশুস্বর্গ’ আজও শিশুদের শিল্প ও সংস্কৃতি চর্চার এক অনন্য কেন্দ্র। তিনি শুধু চিত্রশিল্পীই নন, ছিলেন প্রকৃতি ও প্রাণপ্রেমী-ঘরে পুষতেন বিড়াল, সাপ, ভল্লুক, বেজি, বানর, খরগোশ, মদনটাক, ময়না, গিনিপিক, মুনিয়াসহ নানা প্রাণি। এমনকি বাড়িতে গড়ে তুলেছিলেন একটি ক্ষুদ্র ‘মিনি জ্যু’।
চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান ১৯৮২ সালে একুশে পদক, ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা পদক, ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সরকারের রেসিডেন্ট আর্টিস্ট এবং ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ চারুশিল্পী সম্মাননা অর্জন করেন।
১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর অসাম্প্রদায়িক চেতনার এই শিল্পী শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগে যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁকে সমাহিত করা হয় নড়াইলের স্মৃতি সংগ্রহশালা প্রাঙ্গণে। আজও তাঁর সৃষ্টি, ভাবনা ও চেতনা বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতির অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে আছে।