ভয়াবহ ভূমিকম্পে গত ৬ ফেব্রুয়ারি কেঁপে উঠেছিল তুরস্ক ও সিরিয়া। ওই ভূমিকম্পে দুটি দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় হাজার হাজার বাড়ি-ঘর ধসে পড়েছিল। ভবনের নিচে চাপা পড়ে ও আহত হয়ে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিলেন। ভূমিকম্পের পর চারদিকে থেকে যখন শুধু হতাশা আর হতাশার খবর আসছিল। ঠিক তখন সিরিয়ার জিন্দারিসে ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছিল এক মেয়ে শিশুকে।
সেখানে পৌঁছে উদ্ধারকারীরা দেখতে পান— ধ্বংসস্তূপের নিচেই জন্ম হয়েছে ওই শিশুর। এমনকি মায়ের নাড়ির সঙ্গেও জোড়া লেগেছিল সে। তবে ভূমিকম্পে ভবন ভেঙে পড়ে শিশুটির মা-বাবা ভাই-বোন সবাই মারা যায়। অলৌকিকভাবে বেঁচে যায় শুধু সে। পরবর্তীতে শিশুটিকে দেওয়া হয় তার ফুফু হালা ও ফুফা খলিলের জিম্মায়। আর শিশুটির নাম রাখা হয় আফরা। বর্তমানে ফুফু ও ফুফার কাছেই বেড়ে ওঠছে সে।
দিন যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে ওঠতে থাকা আফরার বয়সও হয়ে গেছে ৬ মাস। এখন সে মানুষকে দেখে হাসি দিতে পারে এবং নিজের মতো খেলতে পারে।
সিরিয়ার জিন্দারিসে একটি বাড়িতে বসবাস করেন আফরার ফুফা খলিল। তিনি বলেছেন, ‘আফরা খুবই ছোট। কিন্তু সে আমাকে তার বাবা ও তার বোন নাওয়ারার কথা মনে করিয়ে দেয়, বিশেষ করে তার হাসিটা তাদের মতো। তারাও ভূমিকম্পে প্রাণ হারিয়েছে। তারা আমাদের বাড়িতে প্রায়ই আসত… আফরা আমাদের একটুও জ্বালাতন করে না।’
আফরার জন্মও হয় জিন্দারিসে। ভূমিকম্প আঘাত হানার পরপরই দুনিয়ার আলো দেখে সে। কিন্তু সেই ভূমিকম্প কেড়ে নেয় তার বাবা-মা ও চার ভাই-বোনের জীবন।
ভূমিকম্পের প্রায় সঙ্গে সঙ্গে আফরাদের বাড়ি ধসে পড়ে। তখন সেখানে দ্রুত ছুটে যায় তার ফুফু। আফরার ফুফা খলিল সেদিনকার ঘটনা বর্ণনা করে বলেছেন, ‘আমরা দেখতে পাই আফরাদের বাড়ি ধসে পড়েছে। আমার স্ত্রী— আমার ভাই, আমার ভাই বলে চিৎকার শুরু করে।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘বাড়ির ছাদটি তাদের ওপর ধসে পড়েছিল। কেউ একজন আমাকে ডাক দেয় এবং বলে তারা একজন নারীর মরদেহ পেয়েছে। আমি সেখানে যাওয়ার পরই মরদেহটি উদ্ধারে ধ্বংসস্তূপ খোড়া শুরু করি; তখনই কান্নার শব্দ শুনতে পাই। এটি ছিল আফরা, সে তখনো তার মায়ের নাড়ির সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। আমরা তাকে বাঁচাতে বদ্ধপরিকর ছিলাম। কারণ আমরা জানতাম পরিবারের একমাত্র স্মৃতি হিসেবে শুধুমাত্র সেই থেকে যাবে।’
আফরাকে ধ্বংসস্তূপ থেকে টেনে তোলার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এরমাধ্যমে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পেয়ে যায় সে।
আফরা বর্তমানে ভালো আছে বলে জানিয়েছে তার ফুফা। তিনি বলেছেন, ‘আমি তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম। তিনি বলেছেন আফরা পুরোপুরি সুস্থ আছে।’
আফরাকে উদ্ধারের পর যখন হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তখন তাকে দত্তক নিতে এগিয়ে আসেন কয়েক হাজার মানুষ। কিন্তু তার ফুফু হালা জানান আফরাকে তিনিই বড় করবেন। তবে কর্তৃপক্ষ প্রথমে বিশ্বাস করতে চায়নি হালা তার আত্মীয়, তাই তারা তাকে হালার কাছে প্রথমে দিতেও চায়নি। কিন্তু ডিএনএ পরীক্ষার পর নিশ্চিত হওয়ার পর ফুফু হালার কোলে তুলে দেওয়া হয় আফরাকে।
ধ্বংসস্তূপে আফরার জন্ম হওয়ার তিনদিন পর তার ফুফু হালার ঘর আলো করেও জন্ম হয় আরেকটি শিশুর। বর্তমানে অন্যান্য ফুফাত ভাই-বোনদের সঙ্গেই খেলাধুলা করে সময় কাটে তার।