• 03 May, 2024

'উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে' আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে মাশরাফীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র!

'উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে' আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে মাশরাফীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র!

আসন্ন জাতীয় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নড়াইল-১ ও ২ আসেনে দলীয় মনোনয়ন পেতে অনেকেই তৎপর রয়েছেন। এটাই স্বাভাবিক। কেউ কেউ হয়তো ইতিমধ্যে সবুজ সংকেতও পেয়ে গেছেন। এমন সবুজ সংকেত নিশ্চিত বুঝতে পেরে কেউ কেউ ওই ব্যক্তিদেরকে ঘায়েল করতে মাঠে নেমেছেন নানা কৌশল নিয়ে।

নড়াইলে এমনই এক মিথ্যাচারের ঘটনা সোস্যাল মিডিয়ায় এখন ভাইরাল। কে এই ঘটনার নায়ক। তা জানার আগে ঘটনার সত্যটা কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে আজকে আমাদের এ আয়োজন। ধর্য্যধরে গল্পটা শুনবেন।  

ঘটনাটি ঘটেছে কিংবদন্তি ক্রিকেটার বর্তমান নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার পরিবারকে ঘিরে। তাহলে প্রথমেই জেনে নেয়া যাক মাশরাফীর শেকড়ের গল্পটা।  

মাশরাফীর দাদা বাড়ি নড়াইল সদরের চারিখাদা গ্রামে। তার চতুর্থ পূর্বপুরুষের নাম আলহাজ পাঞ্জু মোল্যা। ওই সময় পাঞ্জু মোল্যা মাইজপাড়া ইউনিয়নের সম্মানীয় ব্যক্তি ছিলেন। পাঞ্জু মোল্যার  ছেলে হাতেম আহম্মেদ মোল্যা। তিনি ১৯৪৫ সাল হতে ২৫ বছর যাবৎ মাইজপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রেসিডেন্ট (চেয়ারম্যান) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তৎকালীন সময়ে তিনি মুনসেফ কোর্টের সম্মানীত জুরি বোর্ডের সদস্য ছিলেন। তিনি পাকিস্তান আমল থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ব্যক্তি ছিলেন। ওই সময় নড়াইলে বঙ্গবন্ধুকে আনা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেন হাতেম আহম্মেদ মোল্যা।    

পারিবারিক সূত্র থেকে জানা যায়, হাতেম আহম্মেদের পুত্র গোলাম নবী। মরহুম গোলাম নবী ছিলেন মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার দাদা। তিনি তৎকালীন সময়ে উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তি ছিলেন এবং শুল্ক বিভাগে চাকুরী করতেন। তিনি ১৯৭১ সালে ভারতে সরণাথী শিবিরে গোলাম নবী তার বাবা হাতেম আহম্মেদ মোল্যার সাথে থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসাহ দিতেন।    

গোলাম নবীর তিন কন্যা ও তিন পুত্র সন্তান। বড় মেয়ে শাহানা হকের স্বামী নূরুল হক প্রিন্সিপাল সাইন্টিক অফিসার ছিলেন, ২য় মেয়ে ফরিদা ইয়াসমিনের স্বামী এম এম কবির ১ম শ্রেণির ম্যজিস্ট্রেট, ৩য় মেয়ে ফৌজিয়া ইয়াসমিনের স্বামী সিদ্দিক হুসাইন বিমানের পাইলট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ওই সময় বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার না হওয়ায় তিনি চাকুরী থেকে পদত্যাগ করেন। গোলাম নবীর বড় ছেলে গোলাম মোর্ত্তজা স্বপন, মেজো ছেলে ফারহাদুল ইসলাম তপন এবং ছোট ছেলে সালাউদ্দিন রেজা। মেজো ছেলে ফরহাদুল ইসলাম তপন বর্তমানে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। ছোট ছেলে রেজা গ্রামের বাড়িতেই  থেকে ব্যবসা করেন। 
মাশরাফীর দাদা গোলাম নবীর বাবা        

সরেজমিনে গিয়ে খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা এমপি হওয়ার আগ থেকেই গোলাম মোর্ত্তজা স্বপন এলাকায় কৃষি খামার গড়ে তুলেছেন। তিনি বুঝতে শিখে কৃষি খামারের পাশাপাশি এলাকার শিক্ষার মানোন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে আসছেন।

মাশরাফীর বাবা গোলাম মোর্ত্তজা স্বপন ১৯৮২ সালে ১৪ ফেব্রুয়ারি নড়াইল শহরে প্রখ্যাত আইনজীবী আতাউর রহমানে একমাত্র মেয়ে হামিদা মোর্ত্তজা বলাকাকে পাবারিকভাবে বিবাহ করেন। বিবাহের ১৯ মাস ১৯ দিনের মাথায় ১৯৮৩ সালের ৫ অক্টোবর নড়াইল শহরে নানা বাড়ীতে জন্মগ্রহণ করেন কিংবদন্তি ক্রিকেটার, নড়াইল এক্সপ্রেস খ্যাত বর্তমান নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য ‘মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা কৌশিক।  

মাশরাফীর মা হামিদা মোর্ত্তজা একজন প্রাইমারী স্কুল শিক্ষক ছিলেন। মাশরাফীরা দুই ভাই। ছোটভাই মুরছালিন মোর্ত্তজা, তিনি ঢাকাতে ব্যবসা করেন।

মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা কৌশিক ২০০৬ সালের ০৭ সেপ্টেম্বর নড়াইল শহরে এক প্রাইমারি স্কুল শিক্ষক মো: সিরাজুল ইসলামের মেয়ে সুমনা হক সুমিকে পাবারিকভাবে বিবাহ করেন। তাদের এক ছেলে এক মেয়ে। মেয়ে হুমায়রা ও ছেলে সাহেল মোর্ত্তজা।  

এতোক্ষণ মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার চার পুরুষের গল্প শুনলেন। এবার শুনাবো মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা ক্রিকেট জগতে কিংবদন্তি হওয়ার পেছনে যে পরিবার সব চেয়ে বড় অবদান রেখেছেন, ৫০ দশকের শেষের দিকে প্রগতিশীল, অসম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নিরেট পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন পরিবারের কথা। প্রয়াত আইনজীবী আতাউর রহমান ও তার স্ত্রী শিক্ষক খালেদা রহমান। এনারাই হলেন মাশরাফীর নানা ও নানী। এনাদের প্রচ্ছন্ন সহযোগিতায় আজ ক্রিকেট জগতে কিংবদন্তি মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা।    

এই পরিবারের প্রয়াত আতাউর রহমান এবং নড়াইলের দুই রাজনৈতিক কর্ণধার এমএনএ শহীদ এখলাছ আহমেদ ও সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য এমএনএ খন্দকার আব্দুল হাফিজ। এই দুজন সম্মানীয় ব্যক্তিকে জড়িয়ে মাশরাফীকে নিয়ে সম্প্রতি সোস্যাল মিডিয়ায় নানান কথা চালাচালি হচ্ছে।  

নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার কলাবাড়িয়া ইউনিয়নের কালিনগর গ্রামে প্রয়াত অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান জন্মগ্রহণ করেন। আতাউর রহমানরা ৩ ভাই ২ বোন। ভাই-বোনের মধ্যে তিনিই বড় ছিলেন। তার এক ভাই আসাদুজ্জামান, তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের ডাইরেক্টর ছিলেন, ছোটভাই আজিজুর রহমান আঞ্জু মৎস্য অফিসার ছিলেন। বর্তমান তারা অবসর জীবনযাপন করছেন।

আতাউর রহমান ৫০ দশকের শেষের দিকে নড়াইল মহাকুম শহরে আসেন এবং আইন পেশায় যোগদান করেন।  তিনি কয়েকবার বার কাউন্সিলে বিনাপ্রতিদ্বন্দিতায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তিনি নড়াইল শহরে এক সম্ভান্ত মুসলিম পরিবারে বিয়ে করেন। স্ত্রী খালেদা রহমান। তিনি সরকারি প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষক ছিলেন। আতাউর রহমানের দুই ছেলে এক মেয়ে। বড় ছেলে নাহিদুর রহমান ব্যবসা করেন, ছোট ছেলে ডা: মাহমুদ এবং মেয়ে হামিদা মোর্ত্তজা বলাকা মাশরাফীর মা। আতাউর রহমান বাধ্যকজনিত কারনে ১৯৯৩ সালের ১০ আগস্টে মারা যান।     
খন্দকার মাসুদ হাসান

এ্যাডভোকোট আতাউর রহমান সম্পর্কে জানতে সরাসরি কথা হয় বাংলাদেশের সংবিধান প্রনেতার অন্যতম সদস্য এমএনএ খন্দকার আব্দুল হাফিজ এর বড় ছেলে খন্দকার মাসুদ হাসানের সাথে। তিনি মাশরাফীর নানা সম্পর্কে বলেন, আমার জানা মতে আমার বাবার সাথে মরহুম এ্যাডভোকোট আতাউর রহমানের অত্যন্ত সুসম্পর্ক ছিলো। আমাদের পরিবারের সাথে বা রাজনৈতিকভাবে কোন বিরোধ ছিলো না।

সাবেক সাংসদ শহীদ এখলাছ উদ্দিন আহমেদের পুত্র বর্তমান নড়াইল-১ আসনের সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তির নিকট এ্যাডভোকোট আতাউর রহমান সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের পরিবারের সাথে এ্যাডভোকোট আতাউর রহমানের কোন বিরোধ ছিলো না। আমি যতটুকু জানি তিনি একজন ভালো মানুষ ছিলেন।    

মাশরাফীর নানা আতাউর রহমান কেমন মানুষ ছিলেন জানতে মুঠোফোনে কথা হয় নড়াইল মহাকুমা আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা প্রথম সভাপতি, একুশ পদকপ্রাপ্ত মরহুম আফসার উদ্দিন এবং শহীদ সাঈফ মিজানুর রহমানের ভাই সাবেক সংসদ সদস্য আওয়ামীলীগ নেতা অ্যাডভোকেট সাঈফ হাফিজুর রহমান খোকন সাহেবের সাথে।

তিনি বলেন, মরহুম  এ্যাডভোকোট আতাউর রহমান ব্যক্তি জীবনে তিনি একজন নিরেট ভদ্রলোক ছিলেন। তিনি কখনও হত্যাযজ্ঞ কান্ডে লিপ্ত ছিলেন না। রাজনৈতিকভাবে তিনি ভাষানী ন্যাপ করতেন। তৎকালীন সময় তিনি নড়াইল মহাকুমার ন্যাপের সভাপতি ছিলেন।

আইন পেশায় প্রথম জুনিয়ার হিসেবে যিনি এই প্রয়াত আইনজীবী আতাউর রহমানের সহযোদ্ধা ছিলেন অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান। তিনি নড়াইলকণ্ঠকে জানান অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান নীতিতে ছিলেন অটুট, অন্যায়কে তিনি কখনও প্রশ্রয় দিতেন না।    

নড়াইল জেলা ওয়র্কার্স পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট নজরুল এ্যাডভোকোট আতাউর রহমান সম্পর্কে বলেন, অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান ছিলেন একজন অসাম্প্রদায়িক ও যুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রগতিশীল মানুষ।