বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোট আয়োজিত ‘দেশব্যাপী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘন : সিগারেট কোম্পানি বেপরোয়া’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব দাবি জানান।
মূল প্রবন্ধ পাঠে গ্রামবাংলা উন্নয়ন কমিটির নির্বাহী পরিচালক এ কে এম মাকসুদ বলেন, দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৫ সালে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন প্রণয়ন এবং এর কাঙ্ক্ষিত সুফল নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট বিধি জারি করা হয়। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের ধারা-৫ এ তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন, প্রচারণা ও পৃষ্ঠপোষকতা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, দেশের তামাক কোম্পানিগুলো আইন ভঙ্গ করে নানা অপকৌশলের আশ্রয় নিয়ে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে এবং বিক্রেতাদের উৎসাহিত করছে। সম্প্রতি দেশের ৫টি সিটি কর্পোরেশন, ১৬টি জেলা ৩২টি পৌরসভায় পরিচালিত জরিপে ২২,৭২৩টি বিক্রয়কেন্দ্রে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা কার্যক্রমের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এই বিজ্ঞাপনগুলোতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রায় সাড়ে ২৭ হাজার লঙ্ঘন চিহ্নিত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, জরিপে দেখা গেছে, বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশেপাশে ও জনবহুল এলাকায় তামাকের বিজ্ঞাপন, প্রচারণার হার বেশি। বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতে ব্রান্ডিং কালার ও লোগো ব্যবহার, স্টিকার প্রদর্শন বিতরণ, মূল্য তালিকা প্রদর্শন, সিগারেটের ডামি প্যাকেট ও খালি প্যাকেট সাজিয়ে রাখাসহ নানা অভিনব ও আকর্ষণীয় উপায়ে প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি আইনে তামাকজাত দ্রব্যের কার্টনে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তারা সিগারেটের কার্টনে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী দিচ্ছে না। এছাড়াও ক্রেতা ও বিক্রেতাকে টি-শার্ট, লাইটার, ব্যাগ, মানিব্যাগ, ব্রেসলেট, টিভি, ফ্রিজ, মোটরসাইকেল, তৈজসপত্র ইত্যাদি সামগ্রী উপহার হিসেবে দিচ্ছে।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিএলপিএ ট্রাস্টের সেক্রেটারি সৈয়দ মাহবুবুল আলম, ডাসের টিম লিডার আমিনুল ইসলাম বকুল, টিসিআরসির প্রকল্প পরিচালক বজলুর রহমান, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের হেড অব প্রোগ্রাম সৈয়দা অনন্যা রহমান প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে যেসব সুপারিশ করা হয়-
১. দ্রুততম সময়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনী চূড়ান্ত করা।
২. তামাক কোম্পানির প্রভাব থেকে নীতি সুরক্ষার এফসিটিসির অনুচ্ছেদ ৫.৩ অনুসারে ‘কোড অব কন্টাক্ট গ্রহণ’।
৩. জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি দ্রুত চূড়ান্ত এবং দেশব্যাপী যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণ করা।
৪. টাস্কফোর্স কমিটিগুলো সক্রিয় করা, কমিটির ত্রৈমাসিক সভা নিয়মিতকরণ সভার সিদ্ধান্তগুলো বাধ্যভাবে বাস্তবায়ন করা।
৫. আইন লক্ষণের দায়ে তামাক কোম্পানি/প্রতিনিধিকে আর্থিক জরিমানার পাশাপাশি জেল দেওয়া।
৬. আইন লঙ্ঘনকারী তামাক কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
৭. তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন মনিটরিং কার্যক্রমের সঙ্গে বেসরকারি সংস্থাগুলোকে সম্পৃক্ত করা।
৮. প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুসারে একটি শক্তিশালী তামাক নীতি প্রণয়ন বাস্তবায়ন করা।