এই গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার অধ্যাপক ড্যানিয়েল লিডার। এতে প্রমাণিত হয়েছে যে কোয়ান্টাম অ্যানিলিং প্রযুক্তি এমন জটিল সমস্যাগুলোর দ্রুত ও প্রায় নিখুঁত সমাধান দিতে পারে, যেখানে শতভাগ নির্ভুলতা প্রয়োজন হয় না—যেমন লজিস্টিকস, ফিনান্স এবং বৈজ্ঞানিক মডেলিংয়ে। এই ফলাফল প্রমাণ করে যে কোয়ান্টাম মেশিনগুলো যেই বাস্তব সুবিধার প্রতিশ্রুতি এতদিন দিয়ে এসেছে, এবার তা বড় পরিসরে কার্যকরভাবে প্রমাণিত হলো।
কোয়ান্টাম কম্পিউটার অনেক দ্রুতগতির সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিলেও, বাস্তবে তার প্রমাণ পাওয়া ছিল কঠিন। এবার একটি নতুন গবেষণায় প্রথমবারের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের সুস্পষ্ট সাফল্য তুলে ধরা হয়েছে, বিশেষ করে ‘প্রায়-অপ্টিমাইজড’ বা প্রায় নিখুঁত সমাধানে।
এই প্রকল্পের নেতৃত্ব দিয়েছেন ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার (USC) বিজ্ঞানী ড্যানিয়েল লিডার। গবেষণাটি দেখিয়েছে, সমস্যার আকার যত বাড়ে, কোয়ান্টাম যন্ত্রপাতি তত ভালো স্কেল করে এবং নির্ভুল সমাধান না লাগলেও দ্রুত ভালো ফল দিতে পারে।
কোয়ান্টাম অ্যানিলিংয়ে যুগান্তকারী অগ্রগতি:
বিজ্ঞানীরা বহুদিন ধরেই ধারণা করছিলেন যে, কোয়ান্টাম অ্যানিলিং ব্যবহার করে জটিল সমস্যাগুলোর ভালো সমাধান দ্রুত পাওয়া সম্ভব। কোয়ান্টাম অ্যানিলিং বলতে বোঝানো হয় এমন একটি পদ্ধতি, যেখানে কোয়ান্টাম বিট (কিউবিট) ব্যবহার করে একাধিক সম্ভাব্য সমাধান একসাথে অনুসন্ধান করা যায়।
গবেষণাটি স্পিন-গ্লাস নামক জটিল চ্যালেঞ্জ ব্যবহার করে পরীক্ষা করেছে, যা পদার্থবিজ্ঞানে এমন অবস্থা বোঝায় যেখানে চৌম্বকীয় স্পিনগুলো একে অপরের সঙ্গে দ্বন্দ্বে থাকে। এগুলো বাস্তব জীবনের বিভিন্ন জটিল সমস্যা উপস্থাপন করে।
আনুমানিক সমাধানের দ্রুততা:
আর্থিক, লজিস্টিকস ও বৈজ্ঞানিক নানা কাজে শতভাগ নিখুঁত ফলের চেয়ে দ্রুত ভালো সমাধান বেশি দরকার হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, কোয়ান্টাম কম্পিউটার এই ধরণের আনুমানিক কাজগুলো অনেক দ্রুত করতে পারে। এতে সময় ও খরচ—উভয়ই বাঁচে।
কিউবিট সুরক্ষায় নতুন পদ্ধতি:
কোয়ান্টাম মেশিনগুলো সহজেই গোলযোগে ভেঙে পড়ে, তাই গবেষকরা ব্যবহার করেছেন ‘কোয়ান্টাম অ্যানিলিং কারেকশন’ নামক এক ধরণের ত্রুটি সংশোধন পদ্ধতি। এতে বিশেষভাবে কিউবিটগুলো গুচ্ছ আকারে গঠিত হয়, যা সঠিক তথ্য রক্ষা করে।
গবেষণার জন্য USC-তে স্থাপিত D-Wave Advantage কোয়ান্টাম অ্যানিলার ব্যবহার করা হয়েছে। এটি সুপারকন্ডাক্টিং সার্কিটে গঠিত, যা কোয়ান্টাম ইন্টারঅ্যাকশন কার্যকর করে।
বাস্তবজীবনে ব্যবহারিক সম্ভাবনা:
সরবরাহ ব্যবস্থাপনা, বিনিয়োগ পরিকল্পনা বা সময়সূচী নির্ধারণের মতো কাজে যদি কোয়ান্টাম সিস্টেম কম সময়ে ভালো ফল দিতে পারে, তবে তা বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। বহু কোম্পানি ইতোমধ্যেই নজর রাখছে এই প্রযুক্তির দিকে।
যদিও এখনও কোয়ান্টাম কম্পিউটারের খরচ ও স্থায়িত্ব নিয়ে চ্যালেঞ্জ আছে, গবেষকরা আশা করছেন ভবিষ্যতে এই ব্যবধান আরও কমে আসবে। গবেষণাটির সবচেয়ে বড় সফলতা হলো—জটিলতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কোয়ান্টাম সিস্টেমের কার্যক্ষমতাও বেড়েছে।
গবেষক দল আরও বলছেন, ভবিষ্যতে আরও জটিল চ্যালেঞ্জে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেখা হবে। এই ধরণের পরীক্ষা কোয়ান্টাম প্রযুক্তির বাস্তব প্রয়োগে দিকনির্দেশনা দিতে পারে।