• 06 May, 2024

সত্যিই কী ইরানে সরাসরি আক্রমণের সক্ষমতা ইসরায়েলের আছে?

সত্যিই কী ইরানে সরাসরি আক্রমণের সক্ষমতা ইসরায়েলের আছে?

ইরান-ইসরায়েলের হামলা-পাল্টা হামলায় উত্তেজনা মধ্যপ্রাচ্যে। বৈশ্বিক রাজনীতিতেও এর আঁচ লেগেছে ভালোভাবেই। শনিবার (১৩ এপ্রিল) ইসরায়েলে সরাসরি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান।

 এতে একটি ইসরায়েলি সামরিক ঘাঁটি খানিকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে গত শুক্রবার (২০ এপ্রিল) ইরানে ড্রোন হামলা চালানোর চেষ্টা করে ইসরায়েল। যদিও এ বিষয়ে তেলআবিব আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ঘোষণা দেয়নি আর ইরানও হামলার বিষয়টি সরাসরি স্বীকার করেনি।

এর মাঝেই প্রশ্ন উঠছে এতোটা দূরের পথ ডিঙিয়ে আদৌ কী ইসরায়েলের ইরানে হামলা চালানোর সক্ষমতা আছে? 

সবচেয়ে কাছের সীমান্ত এলাকা থেকেও ইসরায়েল-ইরানের দূরত্ব অন্তত ৯০০ কিলোমিটার। আর তেহরানের অধিকাংশ সামরিক ঘাঁটি ও পারমাণবিক স্থাপনা ইসরায়েল সীমান্ত থেকে অন্তত দুই হাজার কিলোমিটার দূরে। যে কারণে ইরানি ভূখণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা চালাতে ইসরায়েলি এফ-১৫ ও এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানকে পাড়ি দিতে হবে লম্বা পথ। প্রতিপক্ষের রাডার ফাঁকি দিতে সক্ষম এসব যুদ্ধবিমানকেও তাই বেশ ঝক্কিই পোহাতে হবে। দিতে হবে অগ্নি পরীক্ষা। 

 

সীমান্তবর্তী ইরানের স্থাপনায় হামলা চালানোর জন্য সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত পথে যেতে না পারলে এসব ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানকেও যাত্রাপথে জ্বালানিও নিতে হবে। দরকার পড়বে বিশেষ কৌশলের।

আবার ইরানে হামলার জন্য সৌদি আরব ও জর্ডান তাদের আকাশসীমা ইসরায়েলকে ব্যবহারও করতে দেবে না। 

ফলে বিকল্প পথ হিসেবে ইসরায়েলকে লোহিত সাগর এবং ইয়েমেন ও ওমানের আকাশসীমা দিয়ে ইরানের দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালাতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে ইরান উপকূলে পৌঁছাতে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানকে ৪ হাজার ৭০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হবে।

ইরানের উত্তরাঞ্চলে ইসরায়েল যদি হামলা করতে চায় ইসরায়েল। তবে সহজ পথ হবে সিরিয়া ও ইরাকের আকাশসীমা। এ ক্ষেত্রে কারিগরি গোলযোগ ও সাইবার হামলা করে সিরিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে হবে ইসরায়েলের বিমানবাহিনীকে।

এ ক্ষেত্রে ইসরায়েলের জন্য আরেকটি উপায় হতে পারে যুদ্ধবিমানে বাড়তি জ্বালানি ট্যাংক যুক্ত করা। এটি করা হলে যুদ্ধবিমানের পথ পাড়ি দেওয়ার সক্ষমতা অনেকটাই বেড়ে যায়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আবার প্রতিপক্ষের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার রাডারে যুদ্ধবিমানের ধরা পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

নৌপথে ইরানে হামলা করাও ইসরায়েলের জন্য মোটেও সহজ নয়। যদিও ইসরায়েলের কাছে আছে ডলফিন শ্রেণির পাঁচটি সাবমেরিন। জার্মানির তৈরি ডিজেল ও বিদ্যুত-চালিত এসব সাবমেরিন চলে নীরবে, নৌপথে অভিযান চালানোর জন্য যা আদর্শ।

ইসরায়েলের জন্য তৈরি করা সর্বশেষ দুই সাবমেরিনে আছে এআইপি বা এয়ার ইনডিপেনডেন্ট প্রোপালশন ব্যবস্থা। এআইপি থাকা মানে এসব সাবমেরিন কয়েক সপ্তাহ ধরে ডুবন্ত অবস্থায় থাকতে পারে।

ইসরায়েল যদি নৌপথে হামলা চালায়, তাহলে তাদের প্রথম নিশানা হতে পারে বেহশাদ। এটি হলো ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) একটি যুদ্ধজাহাজ। এই যুদ্ধজাহাজ মূলত গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের কাজ করে থাকে। 

ডলফিন শ্রেণির সাবমেরিনে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, যেগুলো ২০০ থেকে ৩৫০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। ডুবন্ত অবস্থায় সাবমেরিন থেকে এসব ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া যায়।


তবে বড় কথা হলো ইসরায়েল বর্তমানে আরেকটি ফ্রন্টে লড়াই করতে আসলে কতোটা সক্ষম। কারণ ইতোমধ্যেই তারা সরাসরি ফিলিস্তিনের গাজা ও লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর বিপক্ষে লড়ছে। সেই সাথে ইয়েমেনের হুথি ও ইরাকের প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোকেও মোকাবেলা করতে হচ্ছে তেলআবিবকে। সাথে আছে অস্ত্র সংকটও।