• 06 May, 2024

সময়মতোই নির্বাচন হবে : প্রধানমন্ত্রী

সময়মতোই নির্বাচন হবে : প্রধানমন্ত্রী

খুনিদের সঙ্গে কিসের সংলাপ, সে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, সময়মতোই নির্বাচন হবে। কে চোখ রাঙাল আর কে চোখ বাঁকাল, তা নিয়ে পরোয়া করি না।

ব্রাসেলসে ‘গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরাম’ সম্মেলনে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা জানাতে মঙ্গলবার বিকালে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নোত্তরে তিনি এসব কথা বলেন। এ সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত শর্তহীন সংলাপের আশা প্রকাশ করেছেন। একে কীভাবে দেখছেন? সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুনিদের সঙ্গে আবার কিসের বৈঠক। খুনিদের সঙ্গে আবার কিসের আলোচনা? যারা মানুষের সম্পদ নষ্ট করেছে, যারা আমাদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নষ্ট করেছে। তিনি (মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস) বসে বসে ডিনার খান, ডায়ালগ করুন। এটা আমাদের দেশ, আমরা স্বাধীনতা এনেছি রক্ত দিয়ে।

তিনি আরও বলেন, তারা খুন করার পরও বলে ডায়ালগ করতে হবে। কার সঙ্গে ডায়ালগ করতে হবে? ট্রাম্প সাহেবের সঙ্গে কি বাইডেন ডায়ালগ করছেন? যেদিন ট্রাম্পের সঙ্গে বাইডেন ডায়ালগ করবেন, সেদিন আমি করব।

কোন শক্তি চোখ রাঙাচ্ছে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কে রাঙাচ্ছে এটা আপনারা বোঝেন না? আমার বলতে হবে কেন? প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন উত্থাপন করে আরও বলেন, কার সঙ্গে সংলাপ? বিরোধী দলটা কে? বিরোধী দল হচ্ছে, যাদের সংসদে আসন আছে। এর বাইরেরগুলো আমেরিকায়ও বিরোধী দল হিসাবে দেখে না। ট্রাম্পকে তারা কী বলবে? তারা তো তাদের বিরোধী দল।

ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সহিংসতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে শেখ হাসিনা বলেন, এই যে মানুষগুলো হত্যা করা হলো, তখন তাকে (মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস) প্রশ্ন করা হলো না কেন? যখন একটা উপনির্বাচনে হিরো আলমকে কেউ মেরেছে, তখন তারা বিচার দাবি করেছে। এখন যখন পুলিশ হত্যা করল, সাংবাদিকদের ওপর হামলা করল তখন বিচার দাবি করল না কেন?

দেশের উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শুধু ঢাকার উন্নয়ন নয়, গ্রামেও অনেক উন্নয়ন হয়েছে। দেশের মানুষের ভোট ও ভাতের জন্য অনেক সংগ্রাম করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি। আর গণতন্ত্র থাকলে, নির্বাচিত সরকার থাকলে বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলে যে উন্নতি হয় এটা তো আপনারা বিশ্বাস করেন।

গাজীপুরে গার্মেন্ট শ্রমিকদের তাণ্ডব প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গার্মেন্ট শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর আলোচনা চলছে। যে কারখানা রুটি-রুজির ব্যবস্থা করে তা ভাঙলে তাদের বাড়ি ফিরে যেতে হবে।

রাজধানীতে ২৮ অক্টোবরের সহিংসতার জন্য বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি যে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন এসব ঘটনায় তা আবার প্রমাণ হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, কানাডার কোর্ট বারবার বলেছে বিএনপি-জামায়াত জোট সন্ত্রাসী জোট, তারা (বিএনপি) আবার সেটি প্রমাণ করল। মাঝে কিছুটা রাজনৈতিক কর্মসূচি তারা পালন করেছে। আমাদের সরকারও কোনো বাধা দেয়নি। ধীরে ধীরে আস্থা অর্জন শুরু করেছিল। তবে ২৮ অক্টোবরের সহিংসতার ঘটনায় ধিক্কার ছাড়া আর কিছুই তাদের জুটবে না।

প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, বিএনপি ২০১৩ সালে অগ্নিসন্ত্রাস করেছে। ২০১৩-১৪ ও ১৫ এই ৩ বছর তাদের অগ্নিসন্ত্রাসের আক্রমণ চলেছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাস মালিকদের আমরা আর্থিকভাবে সহায়তা দিয়েছিলাম। যেন তারা ব্যবসা চালাতে পারেন। এবারও যাদের বাস পুড়েছে তাদের সহায়তা দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, তারা (বিএনপি) পুলিশকে বারবার আঘাত করে। সারা দেশে ২৯ পুলিশ সদস্যকে মেরেছিল। ৫০০-এর উপর স্কুলঘর পুড়িয়ে দিয়েছিল। এদের মধ্যে কোনো মনুষ্যত্ববোধ নেই। এদের সঙ্গে আমরা যতই ভালো ব্যবহার করি না কেন, এদের স্বভাব কখনো বদলাবে না। এরা সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদে বিশ্বাস করে। অবৈধ অস্ত্র হাতে এদের জন্ম, এরা নির্বাচন চায় না।

বিএনপির ডাকা ৩ দিনের অবরোধ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কীসের অবরোধ, কার জন্য অবরোধ। যখন দেশের উন্নয়ন হচ্ছে, সারা বিশ্ব প্রশংসা করছে, তাদের কাজটাই হলো উন্নয়ন নস্যাৎ করা। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে নিজেরাই পালাল, পালিয়ে গিয়ে এখন আবার অবরোধের ডাক। যখন সারা বিশ্ব বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে প্রশংসা করছে, তখন তাদের কাজ হলো বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করা। বাংলাদেশের এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করা, দেখাবে বাংলাদেশে কিছুই হয়নি।

সরকারপ্রধান বলেন, তাদের হামলার শিকার একদিকে পুলিশ, আর হচ্ছে সাংবাদিক। শুধু তাই নয়, তারা লালমনিরহাটে যুবলীগের একজনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। এভাবে হত্যা করা আর মানুষের সম্পদ নষ্ট করা, আর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করাই তাদের চরিত্র। শেখ হাসিনা প্রশ্ন উত্থাপন করে আরও বলেন, হঠাৎ কেন সাংবাদিকদের ওপর তারা চড়াও হলো? সাংবাদিকরা তাদের পক্ষে ভালো ভালো নিউজ দিচ্ছিল, টকশোতে ভালো ভালো কথা, বরং সরকারের দোষটাই সাংবাদিকরা বেশি দেখে। তাহলে তাদের রাগটা কেন সাংবাদিকদের ওপর হলো? সেটাই বুঝতে পারলাম না!

তিনি বলেন, মাত্র ১৪ বছরে দেশের অভূতপূর্ব যে উন্নয়ন ও পরিবর্তন হয়েছে তা দৃশ্যমান। এ উন্নয়ন যে শুধু রাজধানী ঢাকা শহরের মেট্রোরেল বা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে তা নয়, উন্নয়ন ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে, তৃণমূলে। আমরা প্রত্যেকটি উন্নয়ন পরিকল্পনামাফিক করেছি। তৃণমূলের যে পরিবর্তন হয়েছে তা আপনারা নিজেরা দেখে আসুন।

ইসরাইলের সঙ্গে বিএনপির তফাত নেই : ফিলিস্তিনে ইসরাইল যেভাবে হামলা করছে ২৮ অক্টোবর ঢাকায় হওয়া হামলার সঙ্গে তার মিল রয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি ফিলিস্তিন নিয়ে বিএনপি কেন কথা বলে না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, গাজায় যেমন ইসরাইল হাসপাতালে হামলা করল বিএনপি একই কায়দায় ঢাকায় পুলিশ হাসপাতালে হামলা করেছে। মনে হয়, ইসরাইল আর ওদের মধ্যে ভালো একটা সমঝোতা আছে।