• 05 May, 2024

শারদীয় দুর্গাপূজায় কড়া নিরাপত্তার আশ্বাস প্রধানমন্ত্রীর

শারদীয় দুর্গাপূজায় কড়া নিরাপত্তার আশ্বাস প্রধানমন্ত্রীর

আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজায় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার সময়কালে পূজার সংখ্যা বাড়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে সংবিধান অনুযায়ী সব নাগরিকের সমান অধিকার রয়েছে। তবে তিনি সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইনের বিষয়ে স্পষ্ট কিছু না বললেও পুরো বিষয়টি শুনেছেন।

বুধবার ওয়াশিংটন ডিসির পাশে ভার্জিনিয়ায় একটি হোটেলে যুক্তরাষ্ট্র হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।


সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, প্রায় ত্রিশ মিনিট স্থায়ী এই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত ইতিবাচকভাবে সব কথা শুনেছেন। গত ১৫ বছরে সংখ্যালঘুদের জন্য কি কি করেছেন তার একটি পরিসংখ্যানও বৈঠকে তুলে ধরেছেন। বৈঠকে সংগঠনটির পক্ষে অধ্যাপক নবেন্দু দত্ত, শিতাংশু গুহ, রুপ কুমার ভৌমিক, ড. দিলীপ কুমার নাথ, শ্যামল চক্রবর্তী ও শুভ রায় অংশ নিয়েছেন।

জানতে চাইলে অধ্যাপক নবেন্দু দত্ত ভোরের কাগজকে বলেন, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইনের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীকে ইতিবাচক মনে হয়েছে। তিনি আমাদের সঙ্গে প্রায় ৩০ মিনিট কথা বলেছেন।

শিতাংশু গুহ বলেন, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইনের বিষয়ে স্পষ্ট কিছু না বললেও আগামী শারদীয় দুর্গাপূজায় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে বলে তিনি জানিয়েছেন। আলোচনার পুরোটা সময়জুড়ে তিনি আমাদের দাবিগুলো শুনলেন।

ড. দিলীপ নাথ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রতিনিধিরা আবারো প্রধানমন্ত্রীর কাছে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন পাশের দাবি জানিয়েছেন।


রুপ কুমার ভৌমিক বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিএনপি-জামাতের অত্যাচারে অনেকেই দেশ ছেড়েছিল। আমরা চেষ্টা করছি পূর্ণ নিরাপত্তা দিতে। এজন্য বহুজন ফিরে এসেছে। একইসঙ্গে দেশে পূজার সংখ্যাও বেড়েছে।

এর আগে একই সংগঠনের পক্ষ থেকে নিউইয়র্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের কাছে স্মারকলিপি হস্তান্তর করেন নেতারা।

তারা পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন এবং জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করা হবে বলে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা ২০১৯ সালে সংসদের প্রথম অধিবেশনে পূরণ করা হলে ধর্মীয় মৌলবাদী ও উগ্রপন্থীরা ২০২০ সালে মুরাদনগরে কিংবা ২০২১ সালে কুমিল্লায় শারদোৎসবে নারকীয় তান্ডব চালানোর দু:সাহস তো করতই না।

এতদিনে হয়তো সম্পূর্ণভাবে বন্ধই হয়ে যেত সংখ্যালঘু নির্যাতন, যেমন বন্ধ হয়ে গেছে এ্যাসিড সন্ত্রাস। প্রতিশ্রুতি দেয়ার পাঁচ বছর পরও আইনটি পাশ না করা এবং ২০১১ সালে কয়েক হাজার সংখ্যালঘু নির্যাতককে সনাক্ত করে জজ সাহাবুদ্দীন কমিশন যে তালিকা সরকারের কাছে হস্তান্তর করেছিল তাদের বিচার এখনও শুরু না করায় গভীর হতাশা ও বিষ্ময় প্রকাশ করে নেতারা বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে জেতার পর থেকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার রাষ্ট্রধর্ম আইন পাশ করাসহ ধর্মীয় মৌলবাদীদের সব দাবি মেনে নিয়েছে। বরং সরকার থেকে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে কোনো সংখ্যালঘু নেই, সকলেরই সেখানে সমান অধিকার রয়েছে, কিন্তু বাস্তবতা এর উল্টো।

সংখ্যালঘু নাগরিকদের প্রতি সরকারের এই বৈষম্যমূলক আচরণে উৎসাহিত হয়ে এবং সংখ্যালঘু নির্যাতকদের কোনো বিচার না হওয়ায় প্রশ্রয় পেয়ে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীরা সংখ্যালঘুদের ভূসম্পত্তি ও বাড়িঘর দখল করে নিয়ে, দেবালয়-দেবদেবীর মূর্তি ধ্বংস করে দিয়ে, উচ্ছেদ, ধর্ষণ, বিভিন্নভাবে ধর্মান্তরিত করাসহ বর্বর অত্যাচার করে দেশত্যাগ করতে বাধ্য করছে সংখ্যালঘু নাগরিকদের।

তারা পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেন, এই সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধানের একমাত্র পথ একটি কঠোর সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন অবিলম্বে পাশ করে এর প্রয়োগ শুরু করা। বিচার এবং কঠোর শাস্তির ভয় থাকলে, সরকার সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শূন্য-সহনশীলতার নীতি অবলম্বন করলে এই মানবতা বিরোধী অশুভ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাবে দাবি করে, নেতৃবৃন্দ সংসদে সরকারী দলের নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতার সদ্ব্যবহার করে বর্তমান সংসদের এই শেষ অধিবেশনেই সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইনটি পাশ করে দেশের সংখ্যালঘু নাগরিকদের সুরক্ষার স্থায়ী ব্যবস্থা করতে অনুরোধ জানান।

নেতারা জানান, পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে যেসব কথা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও তারা একই কথা বলেছেন। কিন্তু সংখ্যালঘুদের জন্য প্রধানমন্ত্রী আগামী অধিবেশনেই সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন করবেন কি না -এ নিয়ে স্পষ্ট কোনো মন্তব্য করেননি।