মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছোট বোন শেখ রেহানা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ ৪৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোতোয়ালি আমলি আদালতে এ মামলা করেন সাজ্জাদ হোসেনের মা ময়না বেগম। আদালত মামলাটি গ্রহণ করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন বৈষম্যবিরোধী আইনজীবী আন্দোলনের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট পলাশ কান্তি নাগ।
এ মামলায় সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী এ আরাফাত, সাংবাদিক সুভাষ সিংহ রায়, সাংবাদিক নাইমুল ইসলাম খান, সাবেক সংসদ সদস্য অপু উকিল, জাকির হোসেন, আসাদুজ্জামান বাবলু, আহসানুল হক চৌধুরী ডিউক, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক রংপুর জেলা পুলিশ সুপার মো. শাহজাহানসহ ৮৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া বিপুল সংখ্যক অজ্ঞাত নামা রংপুর জেলা ও আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী ও পুলিশ-বিজিবি সদস্যদের আসামি করা হয়েছে।
এদিকে মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ১৯ জুলাই রংপুর মহানগরীর সিটি বাজার, রামমোহন মার্কেট ও কৈলাশ রঞ্জন স্কুল সড়ক এলাকায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশ-বিজিবিসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা নির্বিচারে গুলি চালিয়েছিল। ওইদিন
আন্দোলনকারী ছাত্রদের মধ্যে খাবার রুটি-কলা সরবরাহের সময় সাজ্জাদ হোসেন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। পরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাধার মুখে সাজ্জাদের মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই তড়িঘড়ি করে দাফন করে পরিবার। আদালতের নির্দেশে তদন্তের স্বার্থে গত ২ সেপ্টেম্বর কবর থেকে নিহতের মরদেহ তোলা হয়।এর আগে, সাজ্জাদ হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় গত ২০ আগস্ট তার স্ত্রী জিতু বেগম বাদী হয়ে মামলা করেন। ওই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার বোন শেখ রেহানা, সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক মন্ত্রী হাছানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন, সাংবাদিক সুভাষ সিংহ রায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাইমুল ইসলাম খান, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত ও আওয়ামী লীগ নেত্রী অপু উকিলকে হুকুমের আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া মামলায় ৫১ জন নামীয় ও অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ৩০০ জনকে।
নামীয় অন্য আসামিদের মধ্যে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার (বাধ্যতামূলক অবসর) মো. মনিরুজ্জামানসহ পুলিশ কর্মকর্তা, আইনজীবী, সাবেক জনপ্রতিনিধি, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা রয়েছেন।
এদিকে মামলা তুলে নিতে হুমকির অভিযোগ উল্লেখ করে সাজ্জাদের মা ময়না বেগম বলেন, ছেলের বউ মামলা করার পর বিভিন্ন মহল থেকে মামলা তুলে নিতে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এ কারণে আমি বাদী হয়ে আরেকটি মামলা করলাম। আমি চাই আমার সন্তানকে যারা হত্যা করেছে তাদের বিচার হোক।
সাজ্জাদ পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন বলে জানিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আন্দোলনে আমার ছেলে নিহত হয়েছে। ঢাকায় থাকার কারণে ছেলের মরদেহটাও আমি দেখতে পারিনি। শেখ হাসিনার নির্দেশে আমার ছেলেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আমার ছেলে ছাড়া পুরো সংসার অসহায়। ছেলেই ছিল সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম। এই সরকারের কাছে আমাদের চাওয়া, আমরা যেন ন্যায় বিচার পাই। সংসার চালানোর জন্য সরকার যেন একটা ব্যবস্থা করে দেন।