সরেজমিন শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। এদিন বিকেলে মিরপুরের পূরবী এলাকায় প্রধান সড়কে এসব রিকশা চলতে দেখা গেছে। ওই সড়কে ১০ মিনিটে ১৩টি ব্যাটারির রিকশা চলতে দেখা যায়। শুধু পূরবী এলাকাই নয়, মিরপুর ১০ নম্বরেও দেখা গেছে এমন চিত্র।
নগরীতে সড়ক পরিবহণমন্ত্রীর সেই নির্দেশের কোনো বাস্তবায়ন নেই। অন্য স্বাভাবিক দিনের মতো রাজধানীর সড়ক, অলিগলিতে ব্যাটারিচালিত রিকশা পুলিশ প্রশাসনের সামনেই চলছে।
একাধিক ব্যাটারির রিকশাচালক জানান, পুলিশ এবং এলাকার কিছু নেতাকে ম্যানেজ করেই তারা সড়কে এ যান চালাচ্ছেন। তবে বন্ধের ঘোষণা এলে বেড়ে যায় চাঁদার রেট। নানান অজুহাতে চাঁদাবাজরা তাদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে থাকে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যাটারিচালিত রিকশার জন্য প্রচুর বিদ্যুৎ খরচ হয়। বিদ্যুৎ ঘাটতির সময়ে অবৈধ এই যানবাহন চলতে দেওয়া কোনোভাবেই উচিত হচ্ছে না। এ ছাড়া বাহন নিরাপদও নয়। সাধারণ রিকশার অবকাঠামো কিছুটা পরিবর্তন করে তৈরি এসব রিকশা বেপরোয়া গতিতে চলাচল করে। এতে প্রায়ই সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে।
রূপনগরের দুয়ারীপাড়ার একটি গ্যারেজের ম্যানেজার সোলায়মান বলেন, আমরা বৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহার করি। তিনি বলেন, সরকার যে পদক্ষেপ নিচ্ছে তাতে লাখো চালক বেকার হবে।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, এসব রিকশা চলাচলে প্রতি মাসে ১৫০০ টাকার বিনিময়ে একটি কার্ড কিনতে হয়। এ কার্ডের টাকা যায় স্থানীয় কিছু নেতা এবং পুলিশের পকেটে। তাছাড়া এসব যান নিয়ন্ত্রণে আছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। ফলে এসব রিকশার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনকেও অনেক সময় হিমশিম খেতে হয়।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নিষিদ্ধ ব্যাটারিচালিত রিকশা দখল করে আছে রাজধানীর মূল সড়ক। অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করতে দেখলেই পুলিশ আটক করলেও বাহনগুলোর চলাচল অব্যাহত রয়েছে।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, প্যাডেল রিকশায় মোটর ও ব্যাটারি লাগিয়ে চলাচল করছে। এলাকায় মোড় দখল করে নিয়েছে ওই বাহনটি। রাতে অন্যান্য গাড়ির চাপ কমে গেলে ব্যাটারিচালিত এসব গাড়ি নামতে থাকে সব রুটেই। কোনো রুটেই বাধা নেই তাদের যেতে। বিভিন্ন এলাকার অলি-গলিতে অবাধে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও অটোরিকশা চলতে দেখা যায়। অনেক এলাকায় পুলিশের সামনেই এসব যান দাপট নিয়ে চলছে। এমনকি অলি-গলি ছাড়িয়ে অটোরিকশাগুলো মূল সড়কে চলে আসায় সৃষ্টি হচ্ছে যানজটও।
রিকশাচালক কামাল হোসেন বলেন, সরকার যখন বন্ধের ঘোষণা দেয়, এ সুযোগে যারা এসব নিয়ন্ত্রণ করে তারা প্রথমে কয়দিন বন্ধ রাখতে বলে। পরে চাঁদার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। তাছাড়া এ অটো চালিয়ে সংসার চলে। যদি না চালাতে পারি তাহলে সমস্যায় পড়ে যাব।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক, এডমিন অ্যান্ড রিসার্চ) মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মূল সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ব্যবহার রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য একটি বড় সমস্যা। এসব যানবাহন হুটহাট সড়কে চলে আসছে। সঙ্গে আছে ফিটনেসবিহীন যানবাহনের দৌরাত্ম্য। ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি মূল সড়কে যেন অযান্ত্রিক যান চলাচল করতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।
ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের নির্দেশিত ছক অনুযায়ী আটটি ট্রাফিক বিভাগ থেকে ব্যাটারিচালিত অবৈধ রিকশা, অবৈধ যানবাহন, মাটি ও বালি বহনকারী ট্রাক ও হকারদের তালিকা সংগ্রহ করা হচ্ছে। সেই তালিকা পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমরা পর্যবেক্ষণ ও চালকদের সচেতন করছি। পরবর্তী সময়ে ঢাকা মহানগরীর মূল সড়কে অটোরিকশা পেলেই আটক করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, হাইকোর্ট যেখানে এই ব্যাটারিচালিত যান নিষিদ্ধ করেছে, সেখানে সড়কে কীভাবে চলছে? মূলত এ অবৈধ ব্যাটারিচালিত যান দিয়ে প্রতিনিয়ত লাখো টাকার চাঁদাবাজি হয়। সেজন্যই এটি বন্ধ হচ্ছে না।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক পরিচালক ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ড. হাদিউজ্জামান বলেন, ২০১০ সালের পর থেকেই এ ব্যাটারিচালিত রিকশা সড়কে বাড়ছে। এগুলো নিয়ন্ত্রণ না করায় সড়কে বেড়েই চলেছে ব্যাটারিচালিত যান। ব্যাটারি, মোটর আমদানি করার নিষেধাজ্ঞা না থাকায় দেশে এসব যান ঢুকে গেছে। কোনোভাবেই সিটিতে চালানো যাবে না।