• 12 Oct, 2025

প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি বি. চৌধুরীর জন্ম দিন আজ

প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি বি. চৌধুরীর জন্ম দিন আজ

অধ্যাপক (ডা.) এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর আজ জন্মদিন। ১৯৩০ সালের ১১ অক্টোবর কুমিল্লা শহরে মামা বাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন।

অল্প বয়সে মাকে হারান। তিনি মায়ের অভাব সবসময় অনুভব করতেন। একজন মানুষ স্ত্রীর মত্যুর পর সন্তানদের প্রতি কতটা যত্লশীল হতে পারেন তা তাঁর পিতার কাছ থেকে শিখেছিলেন। ধৈর্য্য ধরা ও মানবিক শিক্ষাটা পিতার কাছ থেকেই শৈশবে পেয়েছিলেন। তিনি গ্রামীণ জীবন খুবই ভালোবাসতেন। তিনি নিয়ম করে নিজ গ্রাম মুন্সিগঞ্জের মজিদপুর দয়হাটাতে যেতেন। সেখানে শাক সবজির বাগান করতেন। নিজের উৎপাদিত শাক সবজি আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে পৌঁছে দিতেন। তিনি ছোটবেলায় ছিপ দিয়ে মাছ ধরতে পছন্দ করতেন।
তিনি বিশ্বাস করতেন কৃষিকে আধুনিকায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা সম্ভব। তিনি লিখেছেন ‘কেমন বাংলাদেশ চাই’ নামক গ্রন্থ। তিনি সুসাহিত্যিক ও লেখক ছিলেন। লেখালেখি তার নেশার মত ছিল। ছোটদের জন্য লিখেছেন অনেক শিক্ষামূলক বই। স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক বইয়ের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য
তাঁর ডাক নাম ছিল মন্টু। তিনি একবার ছোটবেলায় কলকাতায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। সুন্দর চঞ্চল মন্টুকে কলকাতার ভাবিরা খুবই পছন্দ করতেন। ছোট মন্টুকে তারা বলেছিলেন, “মন্টুর কপালে রাজটিকা আছে। মন্টু একদিন রাজা হবে।” সত্যি সত্যিই মন্টু একদিন দেশের রাজা (রাষ্ট্রপতি) হয়েছিলেন। তাই হয়তো অধ্যাপক (ডা.) এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী রাষ্ট্রপতির পদ থেকে হাসিমুখে পদত্যাগ করতে পেরেছিলেন। বলতে পেরেছিলেন, ‘ইজ্জতের মালিক আল্লাহ ‘
অধ্যাপক (ডা.) এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর পিতা আইনজীবী কফিলউদ্দিন চৌধুরী কৃষক প্রজা পার্টির সহ-সভাপতি, যুক্তফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক ও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন।
ডা. বি. চৌধুরী ছিলেন কৃতী ছাত্র। ১৯৪৭ সালে ঢাকার সেন্ট গ্রেগরি স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯৪৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে আইএসসি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন। তিনি ১৯৫৪-৫৫ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পরীক্ষায় প্রথম হন। ইংরেজি ভাষায় তাঁর দক্ষতা ছিল অসাধারণ
জ্ঞান পিপাসু ডা. বি. চৌধুরী যুক্তরাজ্যের তিনটি রয়েল কলেজ অব ফিজিশিয়ানস্ লন্ডন, এডিনবরা ও গ্লাসগো থেকে নির্বাচিত ফেলো, এফ.আর.সি.পি এবং বাংলাদেশের (সম্মানিত) এফ.সি.পি.এস ফেলো ছিলেন
ডা. বি. চৌধুরী আন্তর্জাতিক যক্ষ্মা ও বক্ষরোগ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে নেতৃত্ব দেন (নয়াদিল্লি ১৯৭৪; সিউল ১৯৭৬; ইস্তাম্বুল ১৯৭৭; ব্রাসেলস ১৯৭৮; ব্রাইটন ১৯৭৮)। তিনি জেনেভায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনে (১৯৭৮ ও ১৯৭৯) বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের প্রধান ছিলেন। ১৯৮১ সালে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে বিকল্প প্রধান প্রতিনিধি এবং জাতিসংঘের ৫০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য ছিলেন
তাঁর স্ত্রী হাসিনা ওয়ার্দা চৌধুরী। তিনি দুই মেয়ে এবং এক ছেলের জনক। তাঁর বড় মেয়ে ব্যারিস্টার মুনা চৌধুরী পেশায় আইনজীবী। দ্বিতীয় সন্তান মাহী বি. চৌধুরী রাজনীতিবিদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং সুবক্তা হিসাবে সারা বাংলাদেশে পরিচিত ও জনপ্রিয়। আর ছোট মেয়ে অধ্যাপক (ডা.) শায়লা সাফিয়া চৌধুরী ইন্টার্নাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
সৎ, পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হিসাবে দেশবাসীর কাছে সমাদৃত ছিলেন। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আহ্বানে তিনি রাজনীতিতে যোগ দেন এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব হয়েছিলেন। রাজনৈতিক বাস্তবতায় ২০০৪ সালে তিনি বিকল্পধারা বাংলাদেশ নামের রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী ডা. বি. চৌধুরী বিভিন্ন সময় মন্ত্রী ও সংসদে সরকারি ও বিরোধী দলের উপনেতা হিসাবে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। ধার্মিক মুসলমান হিসাবে তিনি আল্লাহর ইবাদতে নিবেদিত থাকতেন।
একজন সাংস্কৃতিক কর্মী, লেখক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার এবং খ্যাতনামা বক্তা হিসেবে তিনি ১৯৭৬ সালে জাতীয় টেলিভিশন পুরস্কার এবং ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা পদক লাভ করেন। ২০২৪ সালের ৫ অক্টোবর তিনি মৃত্যু বরণ করেন। বি. চৌধুরীর জন্মদিন উপলক্ষে বিকাল ৪টায় রাজধানীর বারিধারার বাসভবন মায়া-বি’তে আলোচনাসভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিকল্পধারার নির্বাহী প্রেসিডেন্ট মেজর (অব.) আবদুল মান্নান প্রধান অতিথি এবং বি. চৌধুরীর সহধর্মীনি হাসিনা ওয়ার্দা চৌধুরী সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।