• 19 Apr, 2024

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মসজিদে খুৎবা পড়ার সময় জঙ্গিবাদ, মাদক, দুর্নীতি এবং নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে কথা বলতে দেশের আলেম, উলেমা এবং খতিবদের প্রতি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মসজিদে খুৎবা পড়ার সময় জঙ্গিবাদ, মাদক, দুর্নীতি এবং নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে কথা বলতে দেশের আলেম, উলেমা এবং খতিবদের প্রতি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মসজিদে খুৎবা পড়ার সময় জঙ্গিবাদ, মাদক, দুর্নীতি এবং নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে কথা বলতে দেশের আলেম, উলেমা এবং খতিবদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

ডেস্ক রিপোর্ট : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মসজিদে খুৎবা পড়ার সময় জঙ্গিবাদ, মাদক, দুর্নীতি এবং নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে কথা বলতে দেশের আলেম, উলেমা এবং খতিবদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।


তিনি বলেন, ‘ দেশের মানুষ আলেম, উলেমা, খতিব এবং ইমামদের শ্রদ্ধা করে। তাই আপনাদের কথাবার্তা বা আলাপ-আলোচনা তাদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’
প্রধানমন্ত্রী আজ তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে চতুর্থ ধাপে দেশজুড়ে ৫০টি মডেল মাদ্রাসা ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্ধোধনকালে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আপনারা যদি মসজিদে বয়ানের সময় নারীর প্রতি সহিংসতা দূরীকরন, জঙ্গিবাদ, মিথ্যা গুজবের অপপ্রচার, গৃহকর্মীদের প্রতি অমানবিক আচরণ এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে বেশি বেশি আলোচনা করেন জনগন তা গ্রহণ করবে।’
শেখ হাসিনা বিশেষ করে জুমা’র নামাজের পূর্বে খুৎবা পাঠে এসব বিষয়গুলো আলোচনা করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

প্রধানমন্ত্রী আলেমদেরকে ইসলামের মর্মবাণী সম্পর্কে খুতবা প্রচার করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, কখনও কখনও স্বার্থান্বেষী মহল কোমল হৃদয়ের শিশুদের বিভ্রান্তির পথে নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, ‘ইসলাম যে শান্তির ধর্ম এই শিশুদের তা সঠিকভাবে শেখানো হলে তারা অবশ্যই সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত হবে না।’
পাশাপাশি তিনি আলেম ও ওলামাসহ সকল ধর্মপ্রাণ মানুষকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান যাতে কেউ পবিত্র ইসলামকে কলুষিত করতে না পারে।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন উপায়ে আমাদের পবিত্র ধর্মকে অবমাননা করা চলবে না। আলেম, ওলামা ও ধর্মপ্রাণ মানুষকে বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি রাখতে হবে।’
ইসলাম শান্তির ধর্ম উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদে লিপ্ত কিছু লোক এই শান্তির ধর্মের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করছে।
‘তারা ভুল পথ নিয়েছে। আমাদের সবাইকে এই বিষয়ে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে,’ তিনি বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শেষ বিচারের রায় মহান আল্লাহ দেবেন।
তিনি বলেন, কে ইসলামে বিশ্বাস করে আর কে করে না, আমরা তা বলতে পারি না। এটা খুবই দুঃখজনক যে মাঝে মাঝে আমরা দেখি, কিছু লোক অকারণে অন্য ধর্ম বা ইসলামের বিভিন্ন মাজহাবকে আঘাত করে। এটি ইসলামের শিক্ষা এবং নবীর আদর্শের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
তিনি বলেন, ‘এ ধরনের মনোভাব কারো কাছ থেকে গ্রহণযোগ্য নয়। আল্লাহর ওপর বিশ্বাস হারাবেন না। আল্লাহ সবকিছুর বিচার করবেন; আমাদের এই বিশ্বাস নিয়েই চলতে হবে। আল্লাহ ঠিক করবেন কে বেহেশতে যাবে এবং  কে দোজখে যাবে।’
প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, আল্লাহর ওপর বিশ্বাস হারানোর কারণ কী?
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ইসলাম শান্তির ধর্ম। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। ইসলামও আমাদের শিক্ষা দেয়- অন্য ধর্মের প্রতি আমাদের সহনশীল হতে হবে।
প্রত্যেকে নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে এবং এটা বাংলাদেশের সংবিধানেও বলা আছে।
 শেখ হাসিনা বলেন, মানুষকে হত্যা করে কেউ বেহেশতে যেতে পারে না। নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করলে তাকে জাহান্নামের আগুনে যেতে হবে। এ ব্যাপারে মানুষকে সতর্ক থাকতে হবে।
সরকারপ্রধান বলেন, দেশের স্বাধীনতা অর্জনে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই রক্ত দিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে প্রত্যেকে তাদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করবে। আমরা আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রেখে আমাদেও দেশ চালাই। সবার সমান অধিকার আছে এবং আমরা তা বিশ্বাস করি।’
জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদকে সমাজের হুমকি হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এগুলো মানুষের জীবন কেড়ে নেয়, বিভ্রান্ত করে। মানুষকে এইসব বিপদ থেকে দূরে রাখতে পদক্ষেপ নিতে হবে, তিনি বলেন।
 কেউ যাতে মাদকে আসক্ত না হয় সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘পরিবারে মাদকাসক্ত শিশু থাকলে তা ধ্বংসের পথে চলে যায়। তাই কেউ যেন মাদকে আসক্ত না হয়।’
মডেল মসজিদ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ যাতে ইসলামের সঠিক পথ অনুসরণ করতে পারে এবং ইসলামের মর্মবাণী সঠিকভাবে জানতে ও বুঝতে পারে সেজন্য তাঁর সরকার মসজিদগুলো নির্মাণ করেছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধর্মের জন্য নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন উল্লেখ করে তিনি ইসলামের জন্য তাঁর বিভিন্ন কর্মকা- যেমন ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা, হজযাত্রীদের পরিবহনের জন্য একটি জাহাজ সংগ্রহ, বাংলাদেশে বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং এর টঙ্গীতে ভূমি বরাদ্দ, কাকরাইল মসজিদ ও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের জন্য জমি প্রদান, বিটিভি ও বেতারে কোরআন তেলওয়াত প্রবর্তন, ঈদ-ই-মিলাদুন্নবীতে ছুটি ঘোষণা ইত্যাদি বিষয়ে আলোকপাত করেন।


ইসলামের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে ৫৬৪টি মডেল মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছেন।


প্রকল্পের উদ্দেশ্য হল ইসলামী ভ্রাতৃত্ব এবং এর মূল্যবোধকে প্রচার করা এবং সেইসাথে চরমপন্থা ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ইসলামের মর্মবাণী প্রচার করা, কারণ, ধর্ম কখনই এগুলোকে সমর্থন করে না।


এই মসজিদগুলো সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড প্রচারের পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদ ও নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টিতেও ভূমিকা রাখবে।
সারাদেশে এই নতুন ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এ পর্যন্ত সারা দেশে ৯ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৫৬৪টির মধ্যে ২০০টি মসজিদ উদ্বোধন করলেন।
তিনি এর আগে ১০ জুন, ২০২১ তারিখে  প্রথম ধাপে, চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপে এবং গত ১৬ মার্চ তৃতীয় ধাপে ৫০টি করে মসজিদ উদ্বোধন করেন।
অবশিষ্ট মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান ও মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী এনামুল হাসান।


অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া।


 গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া উপজেলা ও সিলেট জেলার বিশ্বনাথ উপজেলার স্থানীয় সংসদ সদস্য, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সরকারি কর্মকর্তা, আলেম-ওলামাসহ সাধারণ মানুষ এ কর্মসূচিতে যুক্ত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ওপর একটি ভিডিও-ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।


এর আগে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় মোট ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট ও মডেল মসজিদের ছবি সম্বলিত একটি উদ্বোধনী খাম অবমুক্ত করেন।
মডেল মসজিদ এবং ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের মধ্যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাসহ ওজু ও নামাজের জন্য আলাদা জায়গা রয়েছে।


এছাড়া, হজযাত্রীদের নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, গবেষণা কেন্দ্র ও ইসলামিক লাইব্রেরি, অটিজম কর্নার, দাফনের আগের আনুষ্ঠানিকতা, গাড়ি পার্কিং সুবিধা, হিফজাখানা, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ও কোরআন শিক্ষার ব্যবস্থা, ইসলামিক কনফারেন্স রুম, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড এবং ইসলামী দাওয়াত, ইসলামী বই বিক্রয় কেন্দ্র, মসজিদের সাথে দেশী-বিদেশী অতিথিদের জন্য বোর্ডিং সুবিধা থাকবে।


দেশের ৬৪টি জেলা ও সিটি কর্পোরেশন এলাকায় এ ক্যাটাগরির ৬৯টি মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। চারতলা বিশিষ্ট এসব মসজিদে লিফট সুবিধাসহ প্রতিটির মেঝের আয়তন ২,৩৬০.০৯ বর্গ মিটার।
বি ক্যাটাগরির ৪৭৫টি মসজিদ তৈরি করা হচ্ছে প্রতিটির মেঝের আয়তন ১৬৮০.১৪ বর্গ মিটার। উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য সি ক্যাটাগরির ১৬টি মসজিদের প্রতিটির মেঝের আয়তন ২,০৫২.১২ বর্গ মিটার।