• 01 May, 2024

প্রার্থী নিয়ে বিএনএমের তথ্যে গরমিল, দায় চাপাল গণমাধ্যমের ওপর

প্রার্থী নিয়ে বিএনএমের তথ্যে গরমিল, দায় চাপাল গণমাধ্যমের ওপর

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী কতজন তার সঠিক তথ্য নেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) মহাসচিব মো. শাহ্‌জাহানের কাছে। দলের পক্ষে ৮২ জনকে মনোনয়ন দেওয়া হলেও ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া দলটির কতজন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তা নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি।

শনিবার (২ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে দলের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন বিএনএম মহাসচিব মো. শাহ্‌জাহান। দলের প্রার্থী সংখ্যা নিয়ে তৈরি হওয়া অস্পষ্টতা দূর করতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এসময় দুজন ব্যবসায়ী দলটিতে যোগ দেন।

বিএনএম মহাসচিব শাহ্‌জাহান বলেন, ৪৭৮টি ফরম বিক্রি করলেও মাত্র ৮২ জনকে দলের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। মনোনয়ন পাওয়ার পর এলাকায় যেতে দেরি হয়েছে অনেকের। অনেকে কাগজপত্র গোছাতে পারেননি। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ব্যাংকের যে সার্ভারে ট্রেজারি চালান দিতে হয়, সেটাতে ৩ ঘণ্টায় ঢোকা যায়নি। কয়েকজন এ বিষয়ে রিট করবেন।

 


গত ৩০ নভেম্বর ছিল রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময়। ইসির হিসাব অনুযায়ী, বিভিন্ন আসনে বিএনএমের হয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ৪৯ জন। তবে সংবাদ সম্মেলনে দলের কত প্রার্থী আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছে তার কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেননি দলের মহাসচিব। তিনি বলেন, ইসির কাছ থেকে তালিকা পাইনি। আমরা ইসির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে চাইব। তারপর বলতে পারব কতজন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি।

 

সংবাদ সম্মেলনের একপর্যায়ে বিএনএম মহাসচিব দাবি করেন, তাদের দলের প্রার্থী সংখ্যা আসলে ১০২ জন। ৮২ জনের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। বাকি ২০ জন ‘হিডেন (লুকানো)’ প্রার্থী। এই ২০ জনের সবাই সাবেক সংসদ সদস্য। তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করলেও পরে তাদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হবেন।

শাহ্‌জাহান বলেন, আমরা বলেছিলাম ২০ জন সাবেক সংসদ সদস্য যোগ দেবেন। তবে ২৫ থেকে ৩০ জন পেয়েছি। এর মধ্যে ২০ জনের নাম প্রকাশ করা হয়নি। তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। নির্বাচনে বিজয়ী হলে আমাদের দলের হয়ে সংসদে যাবেন।

বিএনএম মহাসচিব শাহ্‌জাহান দাবি করেন, যে ২০ জন ‘হিডেন’ সাবেক সংসদ সদস্য স্বতন্ত্র নির্বাচন করছেন তাদের মধ্যে ১৭ জন বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য। একজন জাপা ও দুই জন স্বতন্ত্র ছিলেন।

তখন সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য ছিলেন এমন মাত্র ৫ জন আগামী নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তাহলে কোন হিসাবে ১৭ জনের কথা বলছেন? জবাবে বিএনএম মহাসচিব বলেন, আমরা ১৭ জনকে মনোনয়ন দিয়েছি। তারা মনোনয়ন দাখিল না করলে আমরা কী করতে পারব?

বিএনপি থেকে কতজন সাবেক সংসদ সদস্য বিএনএমে যোগ দিয়েছেন ও প্রার্থী হয়েছেন– এমন প্রশ্নের জবাবে একেকবার একেক তথ্য দেন বিএনএম মহাসচিব। প্রথমে তিনি বলেন, দলের প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী বিএনপি সাবেক সংসদ সদস্য ৯ জন। খানিক পরেই তিনি বলেন, বিএনপি থেকে এসেছেন সাত জন। সব দল মিলিয়ে ১০ জন সাবেক সংসদ সদস্য প্রার্থী হয়েছেন।

তখন সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল, আপনাদের প্রকাশিত দলীয় মনোনয়নের তালিকায় সাবেক সংসদ সদস্য আছেন ছয় জন। জবাবে শাহ্‌জাহান বলেন, ৬ জন না, ৭ জন আছেন। এরপর তিনি নিজেই দলের প্রার্থী তালিকায় থাকা সংসদ সদস্যদের সংখ্যা গুনতে শুরু করেন। ৬ জন গোনার পর বলেন, তালিকার শেষে আরেকজন আছে। তার নাম পরে জানাতে পারব।

আগামী নির্বাচনে দলের ৪৯ জন প্রার্থী অংশ নিলেও সরকার গঠন করার ব্যাপারে আশাবাদী শাহ্‌জাহান। এত কম প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেওয়া পর কীভাবে সরকার গঠন করবেন? জানতে চাইলে শাহ্‌জাহান বলেন, দেখা গেল যে আগামী নির্বাচনে আমাদের ৪৯ জনই জয়ী হয়ে এলো। আর স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বেশি জয়ী হলো। সরকারি দলের প্রার্থীরা পরাজিত হলো, তখন স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে জোট করে সরকার গঠন করব।

এসময় বিএনএমকে ‘কিংস পার্টি’ অ্যাখ্যা দিয়ে এবং দলটিকে নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন খবর প্রসঙ্গ তুলে ধরেন শাহ্‌জাহান। বলেন, কিছু কিছু গণমাধ্যম আমাদেরকে নিয়ে নেতিবাচক খবর প্রকাশ করেছে। আমি বলব, আমাদের এগিয়ে যেতে সাহায্য করেন।

সংবাদ সম্মেলনে কণ্ঠশিল্পী ডলি সায়ন্তনীসহ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন।