• 19 May, 2024

নতুন বই পেয়ে আনন্দে আত্মহারা শিক্ষার্থীরা

নতুন বই পেয়ে আনন্দে আত্মহারা শিক্ষার্থীরা

নতুন বইয়ের গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশের সব বিদ্যাপীঠে। শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিন বিদ্যালয়ে এসে নতুন বই হাতে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা শিক্ষার্থীরা। তাদের উচ্ছ্বাস আর উল্লাসে মুখর হয়েছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ঝকঝকে চাররঙা নতুন বই হাতে পেয়ে প্রাথমিক স্তরের শিশুরা উল্টেপাল্টে দেখেছে কী কী আছে। নতুন পাঠ্যবই বুকে নিয়ে শিশুদের প্রাণখোলা হাসি।

রাজধানীসহ সারাদেশে গতকাল সোমবার উদযাপিত হয়েছে পাঠ্যপুস্তক উৎসব দিবস। শিক্ষাবছরের প্রথম দিন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের প্রায় ছয় কোটি ছাত্রছাত্রীর হাতে তুলে দেওয়া হলো নতুন বই। তাদের অংশগ্রহণে হাজারো স্কুল হয়ে উঠেছিল উৎসবে রঙিন।

প্রাথমিকের কোমলমতি শিশুদের জন্য গতকাল রাজধানী ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে মিরপুরে ন্যাশনাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে কেন্দ্রীয় বই উৎসবের মাধ্যমে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া হয়। এই বিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় বই উৎসবে ঢাকার ২০টি সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দেড় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এর মধ্যে ২৮ জনের হাতে বইয়ের সেট তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। এর আগে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে বই উৎসবের উদ্বোধন করেন তিনি।

নতুন বই নিতে আসা মিরপুর ন্যাশনাল সরকারি (সকাল-বিকেল) প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র তানজিল শেখ বলে, বছরের প্রথম দিন নতুন বই নিতে পেরে আমি খুবই খুশি। একসঙ্গে সব বই পেয়ে দারুণ উচ্ছ্বসিত ওয়াক আপ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী অথৈ সিংহ। সে জানায়, তৃতীয়বারের মতো ১ জানুয়ারি নতুন বই পেয়েছে। তবে বই উৎসবে এবারই প্রথম যোগ দেওয়া। সে কারণে তার খুব আনন্দ লাগছে।

মিরপুরের কেন্দ্রীয় উৎসবের সঙ্গে সঙ্গে একযোগে সারাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুষ্ঠিত হয়েছে বই উৎসব। সংসদ নির্বাচনের কারণে অন্যান্য বছরের মতো জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন এবার সেভাবে ছিল না। রাজনৈতিক নেতাদেরও এবারের বই উৎসবে রাখা হয়নি। তবে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়ার আয়োজনে চেষ্টায় কোনো ঘাটতি রাখেনি সরকার।

বই উৎসব অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেন, নতুন বই শিশুদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নতুন বছরের উপহার। নতুন বই শিশুকে উজ্জীবিত ও অনুপ্রাণিত করে। নতুন বইয়ের ঘ্রাণ শিশুকে বইয়ের প্রতি আকৃষ্ট করে তোলে। বইয়ের প্রতিটি পৃষ্ঠা শিশুর মনোজগতে বিস্ময় তৈরি করে। সময়ের পরিক্রমায় এটি এখন বই উৎসবে পরিণত হয়েছে। 

বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পুরোনো ধারার শিক্ষার খোলনলচে পাল্টে ফেলেছে সরকার। এখন এমন এক নতুন শিক্ষার বীজ বপনের কাজে হাত দিয়েছে, যা শিক্ষার্থীর মস্তিষ্ক ও পিঠ থেকে মুখস্থবিদ্যার বোঝা ঝেড়ে ফেলে তাদের কৌতূহল, জিজ্ঞাসা, অনুসন্ধান, গবেষণা ও ভাবনার শক্তি জাগাবে। গুণাবলি তৈরিতে উপযোগী করে তুলবে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির ৩০ লাখ ৯৬ হাজার ৯৩৯ জন, প্রাথমিক স্তরের ১ কোটি ৮০ লাখ ৭০ হাজার ৫৯৪ জন এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ৮৪ হাজার ৪৭৩ জন মিলিয়ে মোট ২ কোটি ১২ লাখ ৫২ হাজার ৬ জন শিক্ষার্থীর মাঝে ৯ কোটি ৩৮ লাখ ৩ হাজার ৬০৬ কপি বিনামূল্যের পাঠ্যবই এ বছর বিতরণ করা হবে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) থেকে জানা গেছে, ২০১০ সাল থেকে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যের বই তুলে দেওয়ার সরকারের এ উদ্যোগটি ব্যাপক সফলতা পেয়েছে। ১৩ বছরে সোয়া চার কোটি শিক্ষার্থীর মাঝে বিতরণ করা হয়েছে প্রায় ৪৫০ কোটি বই, যা সারা বিশ্বের মধ্যে বিরল দৃষ্টান্ত।
এদিকে, মাধ্যমিকের কোনো কেন্দ্রীয় আয়োজন না থাকলেও সারাদেশে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বই উৎসবের আয়োজন করা হয়। নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উৎসবমুখর পরিবেশে বই বিতরণ চলছে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত। 

এনসিটিবি জানিয়েছে, মাধ্যমিক স্তরে এ বছর ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ১ কোটি ৪ লাখ ৯০ হাজার ১০৭ জন, দাখিলের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ২৪ লাখ ২৩ হাজার ৩৪৮ জন, ইংরেজি ভার্সন ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ১ লাখ ৭৩ হাজার ৮৫৫ জন, কারিগরির ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ২ লাখ ৭১ হাজার ৯৫২ জন, দাখিল ভোকেশনালের ৬ হাজার ১৫ জন ও ব্রেইল পদ্ধতির ৭২৪ জন ছাত্রছাত্রী নতুন বই পাবে। মোট ৩ কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার ৩৫৪ জন শিক্ষার্থী পাবে বিনামূল্যের নতুন বই।

জানা গেছে, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে এবার নতুন কারিকুলামে বই যাবে। এই বইয়ের পাণ্ডুলিপি তৈরিতে দেরি হওয়ায় এই দুটি বইয়ের ছাপার কাজ মাত্র শুরু হয়েছে। তাই এই দুটি শ্রেণির বই পেতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। তবে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বই প্রায় শতভাগ উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিকের কোনো শিক্ষার্থী হয়তো এই দুই শ্রেণির সব বই-ই এখনই হাতে পাবে না; কিন্তু একদম খালি হাতে কেউ বিদ্যালয় থেকে ফিরে যাবে না।