• 01 May, 2024

‘অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার পেলেন নড়াইলের সন্তান আফরোজা পারভীন

‘অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার পেলেন নড়াইলের সন্তান আফরোজা পারভীন

সময় বদলেছে বলে মন্তব্য করেছেন ‘অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার প্রদান’ অনুষ্ঠানের বক্তারা। তারা বলেন, সঙ্গে বদলেছে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি। এরপরও আফরোজা পারভীনের মতো সাহিত্যিক প্রয়োজন। কথাসাহিত্যিক, গবেষক, শিশুসাহিত্যিক, নাট্যকার, কলাম লেখক আফরোজা পারভীন সোজা সাপ্টা একজন সাহসী লেখক। তিনি তার সহজ সরল গোছানো লেখার মাধ্যমে নিজের স্বতন্ত্র অবস্থান তৈরি করেছেন।

শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তারা এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে সাহিত্যিক আফরোজা পারভীনের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে অতিথিরা ‘অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার’-এর উত্তরীয়, ক্রেস্ট, শুভেচ্ছা পত্র ও এক লাখ টাকার চেক তুলে দেওয়া হয়।

এতে সভাপতিত্ব করেন পাক্ষিক অনন্যা ও দৈনিক ইত্তেফাক সম্পাদক তাসমিমা হোসেন। উপস্থাপনা করেন সাহিত্যিক ঝর্ণা রহমান। 

এসময় বক্তব্য রাখেন কথাসাহিত্যিক আন্দালিব রাসদিন, হামীম কামরুল হক ও নাসরীন মুস্তাফা।

অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে আফরোজা পারভীন বলেন, ‘আমি ভাগ্যবান যে আমার পরিবার সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক পরিবার। বাবা-মা আমাকে কখনোই মেয়ে হিসেবে আলাদা করেননি। আমার স্বামী আমাকে লেখার শুধু উৎসাহই দেননি, নিজের সাধ্যমতো লেখার উপকরণও কিনে দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। আমার সন্তানরা সব সময় উৎসাহ দিয়েছে। কিন্তু অনেক নারী আছেন, তাদের প্রতিভা থাকলেও আমার মতো পরিবেশ ও পরিবার পান না। লেখার খাতা পান না।’

আফরোজা পারভীন আরও বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ আমার জীবনে অনেক বড় উলট-পালট করে দেওয়ার মতো ঘটনা। যে সময় আমি কৈশরে ছিলাম বলে মা আমাকে পরিবারের সঙ্গে রাখতেন না। মুক্তিযুদ্ধের দৃশ্যপট আমাকে লেখার অনুপ্রেরণা দেয়। চারপাশের প্রত্যেকটি মানুষই একেকটি গল্প। শুধু তার ভেতরের গল্পটাকে জানতে হয়।’

তাসমিমা হোসেন বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে অনেক মানুষের অবদান আছে। যা আফরোজা পারভীনের লেখায়-কথায় আবারও প্রকাশ পেলো। অনন্যা যোগ্য নারীকে সম্মননা দিতে পেরে সন্তুষ্ট।’ তিনি বলেন, ‘আমরা এমন এক সময় অনন্যা শীর্ষ দশ ও অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার দেওয়া শুরু করি, যখন সমাজে নারীকে মূল্যায়ন করা হতো না। আমরা এখন ডিজিটাল সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। জীবন যাপনের ব্যয় দিন দিন বাড়ছে, নানা কারণে অস্থিরতা বিরাজ করছে সমাজে। সময়ের সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে অনন্যা।’

আন্দালিব রাশদী বলেন, ‘আফরোজা পারভীন তার লেখার মধ্য দিয়ে দৃশ্যপট আঁকতে পারেন। এটা তার লেখার বড় দিক। যখন তার লেখা পড়ি, তখন মনে হয় দৃশ্য আর চরিত্রগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠছে।’ তিনি বলেন, ‘সব ক্ষেত্রের মতো নারীরা সাহিত্যে দাপটের সঙ্গে বিচরণ করছেন।

হামীম কামরুল হক বলেন, ‘আমাদের মধ্যে একটা বড় ধারণা যে লেখকের বেশি বই থাকে, তারা মানসম্পন্ন লেখক নন। কিন্তু আফরোজা পারভীনের প্রকাশিত ১২৫টি গ্রন্থ প্রমাণ করেন তিনি ভালো লেখক।’ তিনি বলেন ,‘আমরা লেখকরা মৌলিক লেখার পেছনে ঘুরতে ঘুরতে পিছিয়ে যাই। কিন্তু পুরনো বিষয়ও প্রত্যেক লেখক নিজের মতো নতুন করে লিখতে পারে। আফরোজা পরভীন একজন গোছানো ধ্রুপদী লেখক। তার লেখা পড়লেই বোঝা যাবে, মুক্তিযুদ্ধ তাকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে।’

নাসরীন মুস্তফা বলেন, ‘তার লেখার মধ্য দিয়ে তাকে আলাদা করা যায়। অনন্যা আফরোজা পারভীনকে অনেক দেরিতে খুঁজে পেয়েছে। এখন বাংলা একাডেমির পালা। অনুষ্ঠানে শুরুতে শিশু ইচ্ছে নারী কবিতা আবৃত্তি করে এবং সম্মাননাপ্রাপ্ত লেখকের ওপর তাপস কুমার দত্ত পরিচালিত প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়।