• 19 May, 2024

নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে : শেখ হাসিনা

নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে : শেখ হাসিনা

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে যাঁকে মনোনয়ন দেব তাঁর জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে সবাইকে কাজ করতে হবে। যেন আবার আমরা এই দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারি। এখনো অনেক উন্নয়ন কাজ বাকি।

গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর আরামবাগে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকার প্রথম মেট্রো রেল এমআরটি লাইন-৬-এর দ্বিতীয় অংশ মতিঝিল পর্যন্ত ট্রেন চলাচল উদ্বোধন ও এমআরটি লাইন-৫ উত্তরের নির্মাণকাজের উদ্বোধন উপলক্ষে সমাবেশের আয়োজন করা হয়।  

সমাবেশে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাকি কাজগুলো যেন সম্পন্ন করতে পারি। কারণ ওই অগ্নিসন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদী, এরা যদি (ক্ষমতায়) আসে এই দেশকে আর টিকতে দেবে না।


সে জন্যই জনগণের স্বার্থে, জনগণের কল্যাণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। নৌকা মার্কায়ই পারে স্বাধীনতা দিতে। নৌকা মার্কায়ই পারে উন্নয়ন দিতে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঢাকাবাসীকে বলছি, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছি বলেই আজ এত উন্নয়ন পেয়েছি।


সেই কথাটা যেন তাঁরা মনে রাখেন। সেটা মনে রেখেই সকলের কাছে আহবান করি, আগামী নির্বাচনের তফসিল হয়তো যেকোনো সময় ঘোষণা হবে। নির্বাচনে যাঁকেই প্রার্থী দিই তাঁকেই (নৌকা মার্কা) ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন। বিজয়ী করবেন কি না হাত তুলে ওয়াদা করেন। এবার নৌকা জিতবে।


শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণের ভোট চুরি, হত্যা, নির্যাতন, দুর্নীতি করাই হলো বিএনপির কাজ। আওয়ামী লীগ যখন দেশের উন্নয়নে কাজ করছে, বিএনপি তখন মানুষ পুড়িয়ে আন্দোলন করে। জ্বালাও-পোড়াও ধ্বংস করাই বিএনপির চরিত্র। তারা কথায় কথায় আগুন দেয়। বাসে আগুন দেয়। তাদের আন্দোলন অগ্নিসন্ত্রাস। তাদের আন্দোলন মানুষ খুন করা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা করা, ধ্বংস করা। তাদের আন্দোলন বন্ধ করতে হবে। যদি বন্ধ না করে তাহলে কিভাবে বন্ধ করতে হয় তা আমাদের জানা আছে।’

 

পুলিশ যথেষ্ট সহনশীলতা দেখিয়েছে

গত ২৮ অক্টোবরের ঘটনা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা উন্নয়ন করি আর বিএনপি ধ্বংস করে। মানুষের ওপর অত্যাচার করে, হত্যা করে। এই ২৮ অক্টোবর কী ঘটনা তারা ঘটাল আপনারা বর্ণনা করেন। কোনো মানুষ, যার ভেতর এতটুকু মনুষ্যত্ব আছে তারা কি পারে? ওই পুলিশ কী দোষ করেছে, আমি তো পুলিশকে ধন্যবাদ জানাব, তারা সেদিন যথেষ্ট সহনশীলতা দেখিয়েছে। তারা সহনশীলতা দেখিয়েছে অথচ ওই পুলিশের ওপর তারা আক্রমণ করেছে। পুলিশ পিছু হটে গেছে, তার পরও এক পুলিশকে ধরে মাটিতে ফেলে যেভাবে লাঠিপেটা করেছে, মাথায় কুপিয়েছে, হেলমেট পরা ছিল, সেটা ফেলে দিয়ে তারপর মাথায় কুপিয়েছে। পুলিশের হাসপাতালে ঢুকে অ্যাম্বুল্যান্স পুড়িয়েছে। আনসারদের ওপর আক্রমণ করেছে।’

 

বিএনপির কাজই হচ্ছে অগ্নিসন্ত্রাস

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, বিশেষ করে আমাদের মহিলা নেতাকর্মীদের ওপর অকথ্য নির্যাতন করা হয়েছে। তারা মিছিল নিয়ে আসছিল আমাদের শান্তি সমাবেশে। সেখানে বিএনপির গুণ্ডারা, গুণ্ডারাই বলব, সন্ত্রাসীরাই বলব, হামলা করেছে। আজকে না, ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫ সালে ২৯ জন পুলিশ হত্যা করেছিল ওই বিএনপি-জামায়াত। কথায় কথায় আগুন দেয়। সেই ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫ সালে প্রায় তিন হাজার ৮০০ মানুষকে তারা পুড়িয়েছে। তার ওপর ৫০০ মানুষকে হত্যা করেছে। তারা স্কুল ৫২৫টি, ৩০ হাজার গাড়ি, ২৯টি রেল, সরকারি অফিস, ভূমি অফিস পুড়িয়েছে। জ্বালাও-পোড়াও, ধ্বংস করা তাদের যেন উৎসব, এই হলো বিএনপির চরিত্র।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের (বিএনপি) কাজই হচ্ছে অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষ খুন করা। আর সব কিছু ধ্বংস করা। কেন ধ্বংস করবে এভাবে, তাদের কে অধিকার দিয়েছে। তারা তো অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীর হাতে সৃষ্টি, কাজেই এই ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করতে হবে। এটা যদি বন্ধ করতে না পারে, কিভাবে বন্ধ করাতে হয় সেটাও আমাদের জানা আছে। আমরা ছাড়ব না। ঢাকাবাসীসহ আমি দেশবাসীকে আহবান করব, যারা এভাবে পোড়াবে, এই আগুন দিয়ে যারা পোড়াবে, তাদের প্রতিরোধ করতে হবে। দরকার হলে তাদের ধরে ওই আগুনের মধ্যে ফেলতে হবে। যে হাত দিয়ে আগুন দেবে সেই হাত আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিতে হবে, তবেই তাদের শিক্ষা হবে।’

 

এখন ধৈর্য ধরে আছে দেশের মানুষ

সমাবেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা ভুলে গেছে, তারা বাসে আগুন দেয়, সাধারণ মানুষের গাড়িতে আগুন দেয়। তাদের গাড়ি নেই? তারা কি গাড়িতে চড়ে না? তাদের জিনিসপত্র নেই? জনগণ যদি সেগুলো পোড়াতে শুরু করে, তখন তারা কোথায় যাবে, কী করবে? সেটাও তাদের ভাবা উচিত। আসলে ওসব বিশ্বাস করি না বলে এখনো ধৈর্য ধরে আছি, দেশের মানুষ ধৈর্য ধরে আছে। কিন্তু কত দিন? আজকে কোনো জিনিসপত্র আসতে দেয় না, কোনো খাদ্যপণ্য আসতে দেয় না, সেখানেও বাধা দেয়। কাজেই আমি তাদের সাবধান করে দিচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এই চার চারবার ক্ষমতায় আছে। ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতেও জনগণ নৌকায় ভোট দেবে এবং জনগণের সেবা আমরা করে যাব। ষড়যন্ত্র তারা চালিয়ে যাচ্ছে, ষড়যন্ত্রের রাজনীতিই তারা বোঝে। আপনাদের কাছে একটা অনুরোধ, আপনারা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। ওই ঘাতকের দল, সন্ত্রাসী দল বিএনপি, যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াত এরা যেন এ দেশের মানুষকে আর জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে মারতে না পারে, সজাগ থাকতে হবে।’

 

কারখানা রুটি-রুজি দেয়, ধৈর্য ধরতে হবে

পোশাক শ্রমিকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অন্যের কথায় নেচে কারখানায় হামলা করে, কারখানা ভেঙে, সেখানে অস্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টি করে দেশের ক্ষতি করলে নিজেরই ক্ষতি হবে। আর কারখানা বন্ধ করলে ওই গ্রামেই ফিরে যেতে হবে। বিনা কাজে জীবন যাপন করতে হবে।

আওয়ামী লীগ সরকারের ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে পোশাক শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো হয়েছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পরও বেতন বাড়ানো হয়েছে। যে কারখানা আপনাদের রুটি-রুজি দেয়, শ্রম দিয়ে পয়সা কামাই করেন, সেই কারখানা ভাঙচুর করলে আল্লাহও নারাজ হবে।’

কারখানায় শ্রমিকদের নিরাপত্তার জন্য সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন তো কিছু করেনি। যা করেছে আওয়ামী লীগ সরকারই। আওয়ামী লীগ জানে মানুষের কষ্ট দূর করতে। মজুরি কমিশন বসেছে। ধৈর্য ধরতে হবে।