• 05 May, 2024

খুলনা-৩ আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কারা লড়বেন এমপি পদে?

খুলনা-৩ আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কারা লড়বেন এমপি পদে?

আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান অনেক নেতা। এমনকি নির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপিতেও প্রার্থিতা নিয়ে লড়াই হবে একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকার কারণে।

শিল্পাঞ্চলখ্যাত এলাকা হিসেবে পরিচিত খুলনা-৩ সংসদীয় আসন। ভৈরব নদের তীর ঘেঁষা খালিশপুর, দৌলতপুর ও খানজাহান আলী থানা এলাকা নিয়ে গঠিত হয়েছে এ সংসদীয় আসন। রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলসহ বিভিন্ন বন্ধ মিল চালু ও বকেয়া মজুরি পরিশোধসহ শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি আদায়ের আন্দোলনে প্রায়ই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এ অঞ্চল। এই সংসদীয় এলাকায় যেকোনো নির্বাচন বা রাজনীতিতে শ্রমিকরা সবসময়ই বড় ফ্যাক্টর।

১৯৭৯, ১৯৯১ এবং ২০০১ সালে এ আসন থেকে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আশরাফ হোসেন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এরপর থেকে আসনটি আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। সবশেষ তিন সংসদ নির্বাচনে আসনটিতে রাজত্ব করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী মন্নুজান সুফিয়ান। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর ও বর্তমানে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বও পালন করছেন তিনি।

 

খুলনা সিটি করপোরেশনের ১ থেকে ১৫ নম্বর ওয়ার্ড এবং দীঘলিয়া উপজেলার আড়ংঘাটা ও যোগীপোল ইউনিয়ন নিয়ে বিস্তৃত এই আসন। এটি জাতীয় সংসদের ১০১তম আসন। এই আসনে ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৭ হাজার ৮২২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৬ হাজার ৫৮২ ও নারী ভোটার ১ লাখ ১ হাজার ৩০০ জন।

স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে এ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের মীর সাখাওয়াত আলী। ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে বিজয়ী হন জাতীয় পার্টির প্রার্থী যথাক্রমে হাসিন বানু শিরিন এবং আবদুল গফফার বিশ্বাস। ১৯৯১ সালে এবং ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিজয়ী হন বিএনপি নেতা আশরাফ হোসেন। তবে ১৯৯৬ সালের জুনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে বিজয়ী হন বিএনপির দলছুট নেতা সেকেন্দার আলী ডালিম। আর ২০০১ সালের নির্বাচনে আসনটি আবার দখল করেন বিএনপি নেতা আশরাফ হোসেন।

খুলনার অন্যান্য আসনের মতো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এখানেও নির্বাচনি হাওয়া বইতে শুরু করেছে। ক্ষমতসীন আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ব্যানার-ফেস্টুন ঝুলছে প্রায় সর্বত্র।

প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা শহিদ আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিসেবে বর্তমান এমপি মুন্নুজান সুফিয়ান সর্বজন গ্রহণযোগ্য। সাধারণ শ্রমিকদের কাছে নেতা নয়, ‘ভাবি’ বা ‘বুবু’ হিসেবে তিনি সর্বাধিক জনপ্রিয়। অনেকে তাকে শুধু ‘বু’ বলতেও পছন্দ করেন। তবে বর্তমান সময়ে গত চার বছর মন্ত্রী থাকায় সাধারণ মানুষের সঙ্গে তার দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। বেশিরভাগ সময়ে ঢাকায় অবস্থান করেন ও তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ থাকে বলে অনেকের অভিযোগ রয়েছে।

বর্তমানে তিনি ছাড়াও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা এসএম কামাল হোসেন।এসএম কামাল হোসেন একসময় খুলনায় দাপটের সঙ্গে ছাত্ররাজনীতি করেছেন। সিটি কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক থেকে ছিলেন মহানগরের শীর্ষপদের দায়িত্বে। পরবর্তী সময়ে ঢাকায় অবস্থান করে নিজের অবস্থান আরও বেশি পোক্ত করেছেন। টানা দুবার দলের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ ধরে রেখেছেন নিজের কর্মগুণেই। কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় দলীয় কর্মকাণ্ডে রয়েছে তার সরব উপস্থিতি। তিনি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মোবাইলে যোগাযোগ রাখেন মাঠ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার সময় মানবঢাল তৈরি করে যারা শেখ হাসিনাকে রক্ষা করেছিলেন তিনিও তাদের মধ্যে একজন। এ জন্য স্পিন্টারের ক্ষত এখনও তাকে বয়ে বেড়াতে হচ্ছে।

এ ছাড়া রয়েছেন খুলনার রাজনীতিতে নিজের যোগ্যতা ও রাজনৈতিক অধ্যবসয়ের দ্বারা যে কয়েকজন ব্যাক্তি নিজেকে জনগনের সেবক ও আস্থার মানুষ হিসাবে খুলনাবাসীর মনে স্থান করে নিয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম ও সর্বকনিষ্ঠ শেখ ফারুক হাসান হিটলু। তিনি খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে তিনি খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।

গতবার এই আসনের ১১৭টি কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের মন্নুজান সুফিয়ান ১ লাখ ৩৪ হাজার ৮০৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির রকিবুল ইসলাম বকুল পেয়েছিলেন ২৩ হাজার ৬০৬ ভোট। ওই নির্বাচনে আরও অংশ নিয়েছিলেন বাসদের তৎকালীন জেলা সমন্বয়ক জনার্দন দত্ত নান্টু, ইসলামী আন্দোলনের মুজ্জামিল হক এবং জাকের পার্টির এসএম সাব্বির হোসেন।

 

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, আমি দলের জন্য রাজনীতি করি। ছাত্রজীবন থেকে খুলনায় রাজনীতি করছি। তবে প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি নির্ভর করবে দলীয় সভানেত্রীর সিদ্ধান্তের ওপর। দলের পক্ষ থেকে তিনি যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেই অনুযায়ী কাজ করব।

অন্যদিকে আসন পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন থাকায় এ আসনের জন্য বিএনপি কাণ্ডারী বলে মনে করে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি রকিবুল ইসলাম বকুলকে। গত নির্বাচনের আগে থেকেই তিনি খুলনার রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন। দলের অনেকে মনে করেন রকিবুল ইসলাম বকুল এখন খুলনা জেলা এবং মহানগরের বিএনপির রাজনীতিতে অন্যতম চেঞ্জমেকার। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী হয়েছিলেন।

রকিবুল ইসলাম বকুল বলেন, ছাত্রজীবন থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সুখে-দুঃখে পাশে ছিলাম, আছি। দল চাইলে নির্বাচনে অংশ নেব তবে আগে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করি, তারপর নির্বাচনের কথা ভাবব।

এ ছাড়া মহানগর বিএনপির সাবেক প্রথম যুগ্ম সম্পাদক, আশির দশকের ছাত্রনেতা অধ্যক্ষ মো. তারিকুল ইসলামও দল সুযোগ দিলে নির্বাচন করতে প্রস্তুত। তারিকুল ইসলাম বলেন, আমরা দল ও গণমানুষের জন্য রাজনীতি করি। তাই দল নির্বাচনে অংশ নিলে এবং দল চাইলেই নির্বাচনে অংশ নেব। বর্তমানে খুলনার বিএনপির রাজনীতিতে একটা সংকট চলছে। আশা করি এটা ক্ষণস্থায়ী। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আবার আমরা এক হব এবং মানুষের জন্য কাজ করব।

আর জাতীয় পার্টি থেকে প্রার্থী হতে পারেন দলের মহানগর শাখার সদস্য সচিব আবদুল্লাহ আল মামুন অথবা কেন্দ্রীয় শ্রমিক পার্টির সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হোসেন জাহাঙ্গীর। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের খুলনা মহানগর শাখার নির্বাহী সদস্য শেখ হাসান ওবায়দুল করিম এবং বাসদের জেলা কমিটির আহ্বায়ক জনার্দন দত্ত নান্টুও প্রার্থী হওয়ার তালিকায় রয়েছেন।

জাতীয় পার্টির মহানগর শাখার সদস্য সচিব আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, খুলনা হচ্ছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর শিল্পনগরী। সেই শিল্প এখন রুগ্ন দশায় পরিণত হয়েছে। তাই আমি যদি দলীয় মনোনয়ন পাই এবং যদি জয়লাভ করি তা হলে সেই পুরোনো ঐতিহ্য আবার ফিরিয়ে আনব। আমি এই আসনের মানুষের সঙ্গে ছিলাম এবং আগামীতেও থাকতে চাই।