উভয়পক্ষের হামলা-পাল্টা হামলায় ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে লেবানন-ইসরায়েল সীমান্তে। হিজবুল্লাহর সাথে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর এই উত্তেজনা মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত সৃষ্টি করতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহ বলেছে, শনিবার ভোরের দিকে সীমান্তের কাছে গুলি চালিয়ে ইসরায়েলি একটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে তারা।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে, ইসরায়েলি ড্রোন লক্ষ্য করে হিজবুল্লাহর ছোড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র আটকে দিয়েছে সৈন্যরা। তবে উভয়পক্ষের দাবিই স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করা যায়নি বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
লেবাননের কর্মকর্তারা বলেছেন, ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান থেকে লেবাননের দক্ষিণের নাবাতিহ শহরের কাছের শিল্প এলাকার একটি ভবনে আঘাত হানা হয়েছে। গত মাসে হামাসের সাথে-ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সীমান্ত থেকে লেবাননের ভূখণ্ডের সবচেয়ে দূরবর্তী এলাকায় এই হামলা হয়েছে। তবে এই হামলার বিষয়ে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।
নাবাতিহ শহরের আক্রান্তস্থল পরিদর্শনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেছেন লেবাননের আইনপ্রণেতা হানি কোবেইসি। এতে তিনি বলেছেন, নাবাতিহ শিল্প এলাকার অ্যালুমিনিয়াম সরবরাহের একটি দোকানে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
শনিবার ভোরের দিকে ইসরায়েলের হামলা চালানোর বিষয়ে একাধিক বিবৃতি প্রকাশ করেছে হিজবুল্লাহ। এতে বলা হয়েছে, সীমান্তবর্তী এলাকার ইসরায়েলি সামরিক স্থাপনা ও সৈন্যদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে তারা। এতে ইসরায়েলি অনেক সৈন্য হতাহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে ইরান-সমর্থিত এই গোষ্ঠী।
গত ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের সাথে ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলে অব্যাহত হামলা চালিয়ে আসছে লেবাননের হিজবুল্লাহ। ফিলিস্তিনের সমর্থনে ইসরায়েলে হিজবুল্লাহর ক্রমবর্ধমান হামলায় নতুন রণক্ষেত্র তৈরির ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। যুদ্ধ শুরুর পর ইসরায়েলের হামলায় গাজায় ১২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছেন এক হাজার ২০০ জনের বেশি।
গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে লেবাননের সীমান্তে ইসরায়েলি সৈন্যদের ওপর হামলা করছে হিজবুল্লাহ। ইসরায়েলও দক্ষিণ লেবাননে বিমান থেকে বোমা নিক্ষেপ ও কামানের গোলা ছুড়ছে।
লেবাননের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বলেছেন, লেবানন সীমান্তে ইসরায়েলি বাহিনীর সাথে সহিংসতায় এখন পর্যন্ত ৭০ জনেরও বেশি হিজবুল্লাহ যোদ্ধা এবং ১০ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। আর হিজবুল্লাহর সাথে সংঘর্ষে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর অন্তত সাত সদস্যসহ ১০ বেসামরিক নিহত হয়েছেন। উভয় সীমান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছেন।
ইসরায়েল-লেবানন সীমান্ত এলাকায় এবারের এই সংঘাত ২০০৬ সালের ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধের চেয়েও ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। এর ফলে এই সংঘাতে ইরান এবং যুক্তরাষ্ট্রের জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
সূত্র: রয়টার্স।