কোটা বাতিলের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সারাদেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিকে ঘিরে বন্ধ ৪ দিনেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ ছিল ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ। চলেনি মোবাইল ডাটাও। যার ফলে মুখ থুবড়ে পড়েছে দেশের আইটি খাত। দেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন এমন ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের ঘটনায় পুরোপুরি অচল ছিল দেশের আইটি সংশ্লিষ্ট সবগুলো খাত।
সরকারের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে প্রায় ৭ লাখ আইটি ফ্রিল্যান্সার, প্রায় ৩ লাখের বেশি সফটওয়্যার ডেভেলপার রয়েছেন। আবার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রায় ১ লাখ হার্ডওয়্যার, ই-কমার্সে ৩ লাখের বেশি তরুণ-তরুণীসহ প্রায় ২০ লাখ তরুণ-তরুণী আইটি সেক্টরে কাজ করছেন। এর মাধ্যমে দেশ প্রতিমাসে ১ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় অর্জন করছে। একইসঙ্গে এই খাতকে ঘিরে কয়েক লক্ষাধিক নারী ই-কমার্স উদ্যোক্তা, কয়েক হাজার আইটি ও আইটিইএস কোম্পানিও তৈরি হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘসময় ইন্টারনেট বন্ধ থাকার ফলে ফ্রিল্যান্সার এবং এই খাত সংশ্লিষ্টদের যে ক্ষতি হয়েছে সেটি কখনো কাটিয়ে ওঠার মতো নয়। বাংলাদেশের আইটি ফ্রিল্যান্সাররা খুবই বড় ধরনের ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের বাজার অন্যরা দখল করে নিয়েছে। এমন অবস্থা কীভাবে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে সেটির ব্যাপারে সবাই দুশ্চিন্তায় রয়েছে।
তারেক আজিজ নামের এক ফ্রিল্যান্সার বলেন, ৪ দিন ধরে ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ এরই মধ্যে বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারদের অনুপস্থিতিতে অন্য দেশের ফ্রিল্যান্সাররা জায়গা করে নিয়েছে। আমরা বায়ারদের আস্থা হারিয়েছি। কারণ এই সময়ের মধ্যেই অনেকের কাজ ফেরত দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে কাজ ডেলিভারি দেওয়া সম্ভব হয়নি। আর্থিক ক্ষতিতো হয়েছেই। এখন আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। জানি না কবে নাগাদ এই খাত আবারও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে।
অপরদিকে এমন সংকট ফ্রিল্যান্সারদের ভবিষ্যৎ ঝুঁকিতে ফেলবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার সোসাইটির চেয়ারম্যান তানজিবা রহমান। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, এখন যতটা না সংকট চলছে তারচেয়েও বেশি সংকট কয়েকদিন পরে তৈরি হবে। কারণ আমরা কাজ শেষ করার পর একটা রিভিউ হয়। যার ভিত্তিতে র্যাংকিং হয়। এখন যেহেতু কোনো কাজ বাংলাদেশ থেকে হচ্ছে না, সেহেতু নিঃসন্দেহে আমরা র্যাংকিংয়ে নিচে পড়ে যাবো। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে।
বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সারদের অনুপস্থিতিতে অন্যরা মার্কেট দখল করে ফেলেছে এমন শঙ্কা জানিয়ে তানজিবা আরও বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রতিযোগী হচ্ছে ভারত ও পাকিস্তান। তারা সবসময়ই আমাদের পেছনে ফেলার চেষ্টা করে। এখন যেহেতু আমাদের কোন অর্ডার ডেলিভারি হচ্ছে না, তাই র্যাংকিংয়ে আমরা পেছনে পড়ে যাবো। শঙ্কা করছি ভবিষ্যতে আমরা কাজই পাবো না।
এমন অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য কী উপায় অবলম্বন করতে হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবিষয়ে কর্তৃপক্ষের নীতিমালা থাকা দরকার। প্রয়োজনবোধে তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দিতে পারে। কিন্তু আমাদের জন্য অন্তত ইন্টারনেট পরিষেবা চালু রাখুক। কেননা এমন অবস্থায় ই-মেইল চালু রাখলেও অন্তত বায়ারদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়। কিন্তু একেবারে ব্ল্যাকআউট হয়ে গেলে সবকিছু স্থবির হয়ে পড়ে।