৫ জুলাই দাবা খেলতে খেলতেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছিলেন দেশের দ্বিতীয় গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান। আজ (৩০ আগস্ট) তার পরিবারের পক্ষ থেকে মিলাদের আয়োজন করা হয়েছিল। এতে জিয়ার আত্মীয়-স্বজনের পাশাপাশি দাবা অঙ্গনের অনেকেই এসেছিলেন।
জিয়ার আকস্মিক মৃত্যুতে শোকে কাতর ছিল ক্রীড়াঙ্গন। জিয়ার পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার করেছিলেন ক্রীড়াঙ্গনের অনেকেই। এক মাস পেরিয়ে গেলেও জিয়ার পরিবার সেই সাহায্য এখনও পাননি। তাই আজ মিলাদ মাহফিলে জিয়ার স্ত্রী তাসমিন সুলতানা লাবণ্যর আকুল নিবেদন, ‘তাহসিন তার বাবার স্বপ্ন পূরণে সুপার গ্র্যান্ডমাস্টার হতে চায়। এজন্য আমাদের আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন। জিয়া সারাজীবন দাবাই খেলেছে। আমাদের এখন অনেক শূন্যতা। সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করছি পাশে এসে দাঁড়ানোর জন্য।’
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জিয়া ছোট্ট একটি ফ্ল্যাট কিনেছিলেন। সেই ফ্লাটই তাদের সম্বল। দুই ভাই, মা, স্ত্রী ও একমাত্র ছেলে তাহসিনকে ছেড়ে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন জিয়া। ছেলের মিলাদে শোকার্ত মা বেশ আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, ‘আমার ছেলে এই ঘরেই সারাদিন দাবা খেলত। দাবাই তার ধ্যানজ্ঞান। আমার খুব আদরের ছেলে। সরকার ও ফেডারেশন জিয়ার স্ত্রী ও ছেলের পাশে দাঁড়ালে খুবই উপকৃত হত।’
ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শাহাবুদ্দিন শামীম আজ এসেছিলেন জিয়ার মিলাদ মাহফিলে। তিনি জিয়ার পরিবারকে সহায়তা প্রসঙ্গে বলেন, ‘ফেডারেশনের আর্থিক সামর্থ্য নেই। আমাদের ফেডারেশনের দুই জন সহ-সভাপতি ও ব্যক্তিগতভাবে আমিও সহায়তা করব। জিয়ার মৃত্যুর সময় আন্দোলন, এরপর সরকার পরিবর্তন এবং বন্যা পরিস্থিতি চলছে। পরিস্থিতির উন্নয়ন হলে আমরা ফেডারেশনের পক্ষ থেকে চেষ্টা করব প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এই বিষয়ে জিয়ার পরিবারকে সাক্ষাৎ করানোর।’
মিলাদ মাহফিলে এসেছিলেন জিয়ার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু আরেক গ্র্যান্ডমাস্টার রিফাত বিন সাত্তার। জিয়ার পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস এই গ্র্যান্ডমাস্টারের, ‘জিয়া শুধু আমাদের সতীর্থই নয়, বন্ধুও। জিয়ার পরিবারের পাশে আমি সব সময়ই রয়েছি। আশা করছি ক্রীড়াঙ্গনের অনেকেই দাঁড়াবে। দাবা তো বটেই, সমগ্র ক্রীড়াঙ্গনে মিলিয়ে ধরলেও জিয়ার যে সাফল্য এরকম অন্য কোনো ক্রীড়াবিদের নেই বললেই চলে।’
জিয়ার একমাত্র সন্তান তাহসিন তাজওয়ার জিয়া। ৯ সেপ্টেম্বর হাঙ্গেরিতে যাচ্ছেন দাবা অলিম্পিয়াডে খেলতে। বাবা ছাড়া তাহসিনের অলিম্পিয়াড প্রস্তুতি অন্য রকমই, ‘বাবা ছিলেন আমার সকল প্রেরণার উৎস। বাবা নেই, আমার পৃথিবীও নেই। এরপরও চেষ্টা করব যেন বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে পারি।’জিয়া শুধু দাবাড়ুই ছিলেন না, ছিলেন উপমহাদেশের অন্যতম সেরা কোচ। বিশেষ করে ভারতের কলকাতার অনেক দাবাড়ুর গুরু ছিলেন জিয়া। জিয়ার বাসাতেই কলকাতার অনেকে এসে ট্রেনিং নিয়েছেন। এদের অনেকেই জিয়ার জন্য ভারত থেকে টাকা পাঠিয়েছেন, ‘জিয়া নেই শুনে ভারত থেকে অনেক দাবাড়ু টাকা পাঠিয়েছে। অনেকের কাছে জিয়া অর্থ পেত। তারা সেটা পরিশোধ করেছে। সেই পরিশোধের চেয়েও বড় বিষয় প্রতিদিনই ভারত থেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করছে। বিদেশি ছাত্র-অভিভাবকদের কাছে জিয়া এতটাই জনপ্রিয় ছিল ভেবে খুব গর্ব হয়, আবার পরক্ষণেই কষ্ট লাগে আমার জিয়া যে নেই।’