দেশকে আগের মতো ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত করতে এ সহিংসতা
দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়ে আগের মতো ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত করতে এমন সহিংসতা চালানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম সেরা দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা এখন ডেঙ্গু মোকাবিলায় হাই অ্যালার্টে কাজ করছি। আমরা ক্যান্সার, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের জন্য উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু করছি। মানবিক ও শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে চিকিৎসা সেবায় বাংলাদেশ অসাধারণ মান অর্জন করেছে।’
বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে স্থানীয় সময় দুপুরে ‘জলবায়ু ন্যায্যতা প্রদান : ত্বরান্বিত উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং অভিযোজন ও সবার জন্য প্রাথমিক সতর্কবার্তা বাস্তবায়ন’ শীর্ষক এক অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী এ কথা জানান।
বাংলাদেশে স্বাস্থ্যখাতে নানা অগ্রগতির তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি এক লাখ থেকে ১৬৩-তে কমিয়ে এনেছি। নবজাতক মৃত্যুহার প্রতি হাজারে ১৫ এবং পাঁচ বছরের কম বয়সী মৃত্যুর হার ২৪-এ নেমে এসেছে। শিশু টিকাদানে শতভাগ সার্বজনীন কভারেজ রয়েছে। আমাদের গড় আয়ু এখন ৭৩ বছরের কাছাকাছি। বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্যখাতে নানামুখী উদ্যোগের ফলে এসব অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।’
অধিবেশনে বিশ্বকে অজানা হুমকির হাত থেকে বাঁচাতে এবং প্রাকৃতিক সুরক্ষায় বিশ্বের শীর্ষ ধনী দেশগুলোকে জলবায়ু তহবিলে ‘সমানভাবে’ অর্থ বিনিয়োগ করার পরামর্শ দেন শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে তিনি প্রধান এ অর্থনীতির দেশগুলোকে তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার আহ্বান জানান।’
জলবায়ু উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে অনুষ্ঠিত ওই সামিটে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আসন্ন সংকট মোকাবিলায় বিশ্বের প্রধান অর্থনীতির দেশগুলোর জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে সততার সঙ্গে কাজ করতে হবে। আমরা আশা করি, বিশ্বের প্রধান অর্থনীতির দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তন এবং আসন্ন সংকট এড়াতে তাদের ন্যায্য অংশীদারত্বের বিষয়ে স্বচ্ছ ও সৎ থাকবে।’
সভায় প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের মহাসচিবের বিশেষ দুটি উদ্যোগের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেন। এর মধ্যে ‘আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম ফর অল’ উদ্যোগের লক্ষ্য হলো- ২০২৫ সালের মধ্যে সবার জন্য আগাম সতর্কতা নিশ্চিতকরণ। এ উদ্যোগের অধীনে প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা প্রদানের জন্য জাতিসংঘ প্রথম যে ৩০টি দেশকে বাছাই করে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।’
আজ ছিল জাতিসংঘের ৭৮তম অধিবেশনের চতুর্থ দিন। এদিন সম্মেলনে জলবায়ু উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে একটি সামিট অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া সম্মেলনের ফাঁকে এদিন উচ্চ পর্যায়ের আরও কয়েকটি বৈঠকে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জলবায়ু উচ্চাকাঙ্ক্ষা বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের ওই বৈঠকে অংশ নেওয়া অন্যান্য দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা বলেন, ‘জলবায়ুর ন্যায্য অংশীদারীত্বের বিষয়ে উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে বরবরাই প্রশ্ন উঠছে।’ এ বিষয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। একইসঙ্গে জলবায়ু তহবিলে শীর্ষ ধনী দেশগুলোর সমান অর্থ বিনিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তারা।
বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে পাঁচ প্রস্তাব
এদিকে, উচ্চ পর্যায়ের আরেকটি অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘মহামারি প্রতিরোধ ব্যবস্থা’ শীর্ষক ওই সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারি হতে আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় শিক্ষণীয় বিষয় হলো ‘যতক্ষণ পর্যন্ত সবাই নিরাপদ নয়, ততক্ষণ পর্যন্ত কেউই নিরাপদ নয়। কোভিড অতিমারি প্রমাণ করেছে যে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করলে যেকোনো সংকট থেকে পুনরুদ্ধার সম্ভব। আমরা কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বিশ্বসূচকে পঞ্চম স্থান লাভ করেছি।’
এময় তিনি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সামগ্রিক উন্নয়ন এবং ভবিষ্যতে যেকোনো স্বাস্থ্য বিষয়ক জরুরি অবস্থা মোকাবিলার জন্য জাতিসংঘের কাছে পাঁচটি প্রস্তাব করেন। প্রস্তাবগুলো হলো- উন্নয়নশীল দেশগুলোতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য সহজলভ্য অর্থায়ন; বিজ্ঞান-ভিত্তিক পদ্ধতিতে অতিমারি নজরদারি, প্রতিরোধ, প্রস্তুতি সংস্থান ইত্যাদি।
এর আগে, জাতিসংঘ সদর দপ্তরের দ্বিপাক্ষিক বুথে মা, নবজাতক ও শিশু স্বাস্থ্যের জন্য অংশীদারিত্বের (পিএমএনসিএইচ) চেয়ার হেলেন ক্লার্কের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারি, ইউক্রেন যুদ্ধ এবং জলবায়ু সংকটের কারণে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশ সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস (এসডিজি) বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দ শতকরা ২৭ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা আমাদের এ খাতে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের যে প্রচেষ্টা তারই প্রতিফলন।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে সবার জন্য স্বাস্থ্যের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে বিশেষায়িত মেডিকেল হাসপাতাল পর্যন্ত একটি দেশব্যাপী স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছি। আমরা তৃণমূলে বেসরকারি অংশীদারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করি।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘মানসিক স্বাস্থ্য এবং স্নায়বিক ব্যাধিগুলোর বিষয়ে আমাদের নীতির পদক্ষেপ ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়। অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সের বিরুদ্ধে আমরা ‘এক স্বাস্থ্য পদ্ধতি’ প্রচার করছি। আমাদের ফোকাস প্রশিক্ষিত কর্মীবাহিনীর সঙ্গে তাদের সেবার মান উন্নত করা। আমাদের পরবর্তী টার্গেট হলো খরচ পরিশোধের জন্য একটি কার্যকর অর্থায়ন মডেল তৈরি করা।’ বাংলাদেশে ওষুধের চাহিদার ৯৮ শতাংশ অভ্যন্তরীণ উৎপাদন হয়ে থাকে বলে জানান তিনি।
জাতিসংঘে নারী মহাসচিব নিয়োগের দাবি
এদিন জাতিসংঘ সদর দপ্তরে প্রতিনিধি ডাইনিং রুমে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে ইউএনজিএ প্ল্যাটফর্ম অব উইমেন লিডারদের বার্ষিক সভায় বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় তিনি জাতিসংঘে নারী মহাসচিব নিয়োগের মাধ্যমে লিঙ্গ সমতা আনার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নারীদের জীবনে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব ফেলতে তাদের অবশ্যই নেতৃত্বের অবস্থানে থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের কর্মকাণ্ডকে অংশগ্রহণ থেকে নেতৃত্বে উন্নীত করতে হবে এবং নেতৃত্বের ক্ষেত্রে জাতিসংঘকে অবশ্যই উদাহরণ সৃষ্টি করতে হবে। এটা দুঃখজনক যে জাতিসংঘের মহাসচিব হিসেবে এখন পর্যন্ত কোনো নারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। সময় এসেছে, আমরা শিগগিরই একজনকে পাব।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই নিজেদের অংশীদারিত্বের ভিত্তি বাড়াতে হবে, যাতে সব ক্ষেত্রে লিঙ্গ সমতা একটি আদর্শ হয়ে ওঠে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘নারীর অংশগ্রহণকে উচ্চতর পর্যায়ে এগিয়ে নিতে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসতে হবে। নেতা হিসেবে, আমাদের তাদের সঙ্গে জড়িত থাকতে হবে এবং তাদের এ বিষয়ে সাহসী উদ্যোগ নিতে উৎসাহিত করতে হবে।’
দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়ে আগের মতো ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত করতে এমন সহিংসতা চালানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী ধ্বংসযজ্ঞে যারা আহত হয়েছেন তাদের দেখতে আজ শনিবার(২৭ জুলাই) সকালে পঙ্গু হাসপাতাল নামে পরিচিত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ট্রমাটোলজি অ্যান্ড অর্থোপেডিক রিহ্যাবিলিটেশন (নিটর) পরিদর্শন করেছেন।
কারফিউ জারি করার পর দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। এ জন্য চলমান কারফিউ শিথিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আজ শনিবার রাজধানীতে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কাউফিউ শিথিল থাকবে। দেশের অন্যান্য স্থানে স্থানীয় প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন সময়ে শিথিল করা হয়েছে কারফিউ।