গতকাল রোববার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু প্রকল্প অফিস সূত্র জানায়, ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সেতু নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০২১ সালের মার্চে সেতুর পিলার নির্মাণে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়। সমান্তরাল ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের এ রেলসেতুর নির্মাণকাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে।
ডব্লিউডি-১ ও ডব্লিউডি-২ নামে দুটি প্যাকেজে জাপানি ৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। ডব্লিউডি-১ প্যাকেজটি বাস্তবায়ন করছে জাপানি আন্তর্জাতিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওবাইসি, টোআ করপোরেশন ও জেইসি (ওটিজে) জয়েন্ট ভেনচার। টাঙ্গাইলের ভুয়াপুর প্রান্তে সেতুর ২৪ থেকে ৫০ নম্বর পিলার পর্যন্ত কাজ করছেন তারা।
ডব্লিউডি-২ প্যাকেজটি বাস্তবায়নে রয়েছে জাপানের আইএইচআই ও এসএমসিসি জয়েন্ট ভেনচার। সিরাজগঞ্জ প্রান্তে ২৩ থেকে ১ নম্বর পিলার পর্যন্ত সেতুর নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছেন তারা। সেতুটি নির্মাণে জাপান, ভিয়েতনাম, নেপাল, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইন ও বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে ৭ হাজার কর্মী নিয়োজিত আছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু প্রকল্পের সাব স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার রবিউল আলম বলেন, এ সেতুতে ৫০টি পিলার, দুটি পিলারের মাঝে একটি করে অর্থাৎ ৪৯টি স্প্যান বসানো হবে। প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য ১০০ মিটার। ইতোমধ্যে ৩১টি পিলার বসানো শেষ হয়েছে। বাকি ১৯টি বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। স্প্যান বসানো হয়েছে ২২টি।
প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী তানভীরুল ইসলাম বলেন, ইতোমধ্যে ডব্লিউডি-১ প্যাকেজের ৭৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ এবং ডব্লিউডি-২ প্যাকেজের ৫৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। সেতুর ২ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৃশ্যমান হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে ৭ হাজার ৩৬০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিক কাজ করছে। এর মধ্যে কনসালট্যান্ট রয়েছেন ১২০ জন। ডব্লিউডি-১ প্যাকেজে ৮৫০ জন স্টাফ ও ২ হাজার ২০০ জন শ্রমিক এবং ডব্লিউডি-২ প্যাকেজে ১ হাজার ৮৫০ জন স্টাফ এবং ২ হাজার ৩৪০ জন শ্রমিক কাজ করছেন।
তিনি বলেন, প্রতিটি স্প্যানের ওপর জাপানিদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির রেললাইন বসানো হচ্ছে। ফলে সেতুর ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলাচল করতে পারবে। ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত এ প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে। নির্ধারিত সময়েই সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।
১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পরই ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। তবে ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় কমিয়ে দেওয়া হয় ট্রেনের গতিসীমা। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পারাপার হওয়ায় সময়ের অপচয়ের পাশাপাশি ঘটছে সিডিউল বিপর্যয়। বাড়ছে যাত্রী ভোগান্তি। এসব সমস্যা সমাধানে সরকার যমুনা নদীর ওপর আলাদা রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। নির্মাণের পর সেতুটি দিয়ে প্রতিদিন অন্তত ৮৮টি ট্রেন চলাচল করবে।