সোমবার (০৮ মে) যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় দিবাগত রাত ১২টার দিকে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি ইন্তেকাল করেন।
অধ্যাপক নুরুল ইসলাম মৃত্যুর আগ পর্যন্ত খাদ্য নীতি বিষয়ক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনষ্টিটিউটের (ইফপ্রি) ইমেরিটাস ফেলো হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ১৯৮৭ সালে তিনি সংস্থাটির মহাপরিচালকের জ্যেষ্ঠ নীতি পরামর্শক হিসেবে যোগ দেন।
বিশ্বের বিভিন্ন স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ভিজিটিং একাডেমিক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ইয়েল, অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ এবং লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস । দেশে-বিদেশে ২৫টির বেশি বই প্রকাশিত হয়েছে । প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে ‘করাপশন’, ‘ইটস কন্ট্রোল অ্যান্ড ড্রাইভারস অব চেঞ্জ’ (২০১৬); ‘অ্যান ওডেসি : দ্য জার্নি অব মাই লাইফ’ (আত্মজীবনী, ২০১৭) এবং ‘ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, বাংলাদেশ : আ প্রাইমার অন পলিটিক্যাল হিস্ট্রি’ (২০১৯)।
সর্বজন শ্রদ্ধেয় এই ব্যক্তিত্বের প্রয়াণে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি গভীর শোক প্রকাশ করছে। তাঁর স্নেহময় স্মৃতি অর্থনীতিবিদদের কাছে আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক দায়বদ্ধতার প্রতীক হিসেবে অমর হয়ে থাকবে।
১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগের রিডার এবং পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য বিভাগের প্রধান জাতীয় অধ্যাপক ড. হোসেন আবুল ফজল আতোয়ার-এর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা পাকিস্তান অর্থনীতি সমিতি (১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি) গঠনে প্রয়াত অধ্যাপক নুরুল ইসলাম বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছিলেন। ১৯৫৬ সালের আগস্টে সমিতির উদ্যোগে অর্থনীতিবিদদের সম্মেলনে ‘দ্বৈত অর্থনীতি’র রূপরেখা প্রকাশে প্রতিথযশা অন্য অর্থনীতিবিদদের মধ্যে তিনি অন্যতম ছিলেন।
তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিসংগ্রামের পথনির্দেশক দলিল ৬-দফা প্রস্তুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সতীর্থ ছিলেন। পাকিস্তানি শাসকদের এ অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর প্রতি সীমাহীন বৈষম্য ও শোষণের মুখোশ উম্মোচনে অধ্যাপক নুরুল ইসলামের ভ‚মিকা চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি ১৯৭৪ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে অর্থনীতিশাস্ত্রের মানুষদের নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসমৃদ্ধ ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি’ গঠনের অন্যতম উৎসাহদাতা ও পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। ২০০৭ সালের ১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ইস্কাটনস্থ ভবন উদ্বোধনকারী অধ্যাপক নুরুল ইসলাম বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকালে বাংলাদেশের উন্নয়নের ‘ক্লাসিক দলিল’ হিসেবে বিবেচিত ‘প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (১৯৭৩-১৯৭৮)’-এর প্রণেতা ছিলেন।
অধ্যাপক নুরুল ইসলাম একজন আদর্শবাদী পণ্ডিত ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি বরাবর তাঁর আদর্শের প্রতি ছিলেন নিরাপস। দীর্ঘ প্রায় পাঁচ দশক প্রবাসজীবনে থাকলেও তিনি বিভিন্ন খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় ও সংগঠনের আমন্ত্রণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে মূল্যবান বক্তব্য রেখেছেন। তিনি অর্থনীতিশাস্ত্র ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে অসংখ্য মৌলিক গবেষণাকর্ম ও গ্রন্থের রচয়িতা।
বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদদের একমাত্র পেশাজীবী সংগঠন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি ও তার সাড়ে চার হাজার সদস্যের নির্বাচিত প্রতিনিধি ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির কার্যনির্বাহক কমিটি’ অধ্যাপক ড. নুরুল ইসলাম-এর মৃত্যুতে তাঁর পরিবারবর্গের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছে এবং তাঁর বিদেহি আত্মার মাগফিরাত কামনা করছে। তাঁর মতো একজন অভিভাবকের শূন্যতা বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি সবসময় অনুভব করবে।