• 23 Jan, 2025

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য দেশের মন্তব্য সমীচীন নয়

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য দেশের মন্তব্য সমীচীন নয়

বাংলাদেশ অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য থেকে বিরত থাকে এবং অন্যান্য দেশেরও একই ধরনের শ্রদ্ধাবোধ বাংলাদেশের প্রতি দেখানো উচিত বলে দিল্লিকে মনে করিয়ে দিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন।

ভারতের মিডিয়ায় বাংলাদেশ নিয়ে বিভিন্ন মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর খবর প্রকাশিত হচ্ছে এবং এর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে বাংলাদেশ। সেই বার্তা ঢাকা সফররত ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রিকে সোমবার (৯ ডিসেম্বর) দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের (এফওসি) বৈঠকে দেওয়া হয়।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বাংলাদেশে জুলাই-আগস্ট বিপ্লব এবং বিপ্লব-পরবর্তী সংখ্যালঘুদের প্রতি কথিত বৈরী আচরণ নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে অপপ্রচার, মিথ্যা তথ্য এবং বিভ্রান্তিকর বয়ান রয়েছে; সে বিষয়ে আমরা ভারত সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছি। সেই সঙ্গে আমরা জোর দিয়ে বলেছি, বাংলাদেশে বসবাসরত সব ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে স্বাধীনভাবে ধর্ম চর্চা করে আসছে এবং এ বিষয়ে কোনো ধরনের বিভ্রান্তি ও অপপ্রচারের সুযোগ নেই। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার সরেজমিন বাস্তব অবস্থা দেখার ও পর্যবেক্ষণ করার জন্য বিদেশি সাংবাদিকদেরও আহ্বান জানিয়েছে। 

জসীম উদ্দিন বলেন, সেই সঙ্গে আমরা এটাও বলেছি, এটি আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য দেশের মন্তব্য সমীচীন নয়। এটাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছি, বাংলাদেশ অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য থেকে বিরত থাকে এবং অন্যান্য দেশেরও একই ধরনের শ্রদ্ধাবোধ আমাদের প্রতি দেখানো উচিত।

এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এ বিষয়ে যদি কোনো সমস্যা থাকে বাকি যে কোনো দেশের মতো তারাও আমাদের দেশে এসে দেখতে পারেন বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের সঙ্গে কী আচরণ হচ্ছে।

সম্পর্কে বিশ্বাসের ঘাটতি তৈরি হয়েছে

৫ আগস্টের পর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিশ্বাসের ঘাটতি তৈরি হয়েছে এবং সেটিকে কমানো যাবে বলে আশা করেন পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন।

 

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বলেছেন, বর্তমান সরকারের সঙ্গে তারা যুক্ত হতে চায়। তারা যে উচ্চারণ করেছে যে, এটাকে আমরা গুরত্বের সঙ্গে দেখতে চাই। আমরা সামনের দিকে এই সদিচ্ছা দেখতে চাই এবং আমাদের মধ্যে যে ঐকমত্য হয়েছে এটার প্রতিফলন ঘটে কি না দেখব।

মিশনের নিরাপত্তায় জোরালো আওয়াজ তুলেছে বাংলাদেশ

সম্প্রতি ভারতের কলকাতায় এবং আগরতলায় বাংলাদেশর মিশনে হামলা ও ভাঙচুরের মতো নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের কাছে উদ্বেগ জানিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব।

এ প্রসঙ্গে জসীম উদ্দিন বলেন, দুই দেশের দূতাবাস নিয়ে যে উদ্বেগ এ বিষয়ে আমি খুব জোরালোভাবে বলেছি। আগরতলায় এবং কলকাতায় সাম্প্রতিক সময়ে যে ঘটনা ঘটেছে তা আজকে জোরালোভাবে বলেছি। আমরা বলেছি, এই দুই মিশনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে। তারা জানিয়েছে, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

ভিসা ইস্যু

ভিসা ইস্যুতে আলোচনার বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, প্রতি বছর পর্যটন এবং চিকিৎসা উপলক্ষ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি ভারত সফর করে। তাদের ভিসা প্রাপ্তি সহজীকরণসহ অন্যান্য কনস্যুলার সেবা সহজীকরণের জন্য আমরা অনুরোধ জানিয়েছি।

তিনি বলেন, যেসব বাংলাদেশি নাগরিক ভারতের আদালতের দেওয়া সাজা ভোগ করছে, তাদের সাজা মওকুফের বিষয়ে ভারতের যথাযথ বিবেচনার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ ছাড়া, ভারতে আটক বাংলাদেশের জেলেদের মুক্তির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

পানি ইস্যু

আলোচনায় আন্তঃনদী বিষয়সমূহ গুরুত্ব পেয়েছে। তিস্তা নদীর পানি চুক্তি সম্পন্ন করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে বাংলাদেশ।

এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, গঙ্গা-পানি চুক্তির মেয়াদ ২০২৬ সালে উত্তীর্ণ হয়ে যাবে। সে পরিপ্রেক্ষিতে তা নবায়নের প্রক্রিয়া শুরু করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। এছাড়া, আরও যে কয়টি আন্তঃসীমান্ত নদীর পানি বন্টন সংক্রান্ত চুক্তি দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনাধীন, সেসব সম্পন্ন করার জন্য বিশেষ জোর দিয়েছি। বন্যা পূর্বাভাস, উপাত্ত/ডাটা আদান-প্রদানসহ বন্যা প্রতিরোধে আমরা ভারতের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করি এবং এ বিষয়ে একটি উচ্চ-পর্যায়ের মেকানিজম গঠন করার বিষয়ে আলোচনা করি।