• 26 Apr, 2024

বাজেট ২০২৩-২৪: করজাল বাড়াতে এজেন্ট নিয়োগের চিন্তা

বাজেট ২০২৩-২৪: করজাল বাড়াতে এজেন্ট নিয়োগের চিন্তা

করজাল বাড়াতে ‘এজেন্ট’ নিয়োগের পরিকল্পনা করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

এসব এজেন্ট দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে করযোগ্য আয় এবং টিআইএন (করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর) আছে-এমন করদাতা খুঁজে বের করবে। একই সঙ্গে তাদের রিটার্ন জমা দিতে উদ্বুদ্ধ ও সহায়তা করবে।

বিনিময়ে করদাতার প্রদেয় করের একটি অংশ এজেন্টকে কমিশন হিসাবে দেওয়া হবে। এ লক্ষ্যে বাজেটে ‘ট্যাক্স রিটার্ন প্রিপারার’ (আয়কর বিবরণী প্রস্তুতকারী বা টিআরপি) নামে একটি বিধিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআর-এর একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে।

সূত্রগুলো জানিয়েছে, আমেরিকার মতো উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করদাতাদের সহায়তার জন্য এজেন্সি নিয়োগ দেওয়া হয়। যারা কেন্দ্রীয় রাজস্ব আদায়কারী সংস্থার কাছ থেকে কমিশনের বিনিময়ে নতুন করদাতা খুঁজে বের করতে এবং তাদের রিটার্ন পূরণে সহায়তা করে থাকে। এক্ষেত্রে প্রথমে এজেন্ট নিয়োগ দেওয়া হয়। ওইসব এজেন্টের আওতায় শিক্ষিত তরুণদের করসংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে সেসব তরুণ নতুন করদাতাদের রিটার্ন পূরণে সহায়তা করে থাকে। বাংলাদেশেও সেই মডেল ফলো করে এজেন্ট নিয়োগের চিন্তাভাবনা চলছে। এ লক্ষ্যেই নতুন বিধিমালাটির খসড়া করা হয়েছে। ১৪ মে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এনবিআর-এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বাজেট বৈঠক আছে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বিধিমালার বিষয়ে ইতিবাচক সম্মতি দিলে অর্থবিলে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

সূত্রগুলো আরও জানায়, বিধিমালায় প্রদত্ত যোগ্যতা অনুযায়ী আগ্রহী প্রতিষ্ঠানকে এজেন্ট হিসাবে তালিকাভুক্তির জন্য এনবিআর-এ আবেদন করতে হবে। আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে যোগ্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এনবিআর চুক্তি করবে। এদের তৈরি সব রিটার্ন আয়কর অধ্যাদেশের ৭৪ ধারায় এবং অনলাইনে জমা দিতে হবে। এর বিনিময়ে এজেন্টকে প্রদেয় করের ১০ শতাংশ কমিশন দেওয়া হবে, যার বড় অংশই টিআরপিরা পাবেন। নতুন করদাতা খোঁজার বিনিময়ে আগামী ৫ বছর এজেন্টদের কমিশন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। মোটা দাগে অনেকাংশে টিআরপিরা বিমা কোম্পানির এজেন্টের মতো কাজ করবে।

এদের সহায়তায় করজাল বৃদ্ধির মাধ্যমে আয়কর আদায় বাড়ানো হবে। দেশের উপজেলা-পৌরসভা পর্যায়ে করযোগ্য আয় থাকা সত্ত্বেও অনেকে কর দিচ্ছে না। লোকবলের অভাবে এনবিআর সেই জায়গা পৌঁছাতেও পারছে না। তাই কাঙ্ক্ষিত মাত্রা রাজস্ব আদায় হচ্ছে না। বর্তমানে প্রায় ৮৮ লাখের বেশি টিআইএনধারী থাকলেও চলতি করবর্ষে রিটার্ন জমা দিয়েছে ২৯ লাখ করদাতা।

এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর  জানান, নতুন করদাতা খুঁজে বের করতে বা রিটার্ন জমা বাড়াতে এজেন্ট নিয়োগের দরকার নেই। এনবিআরই এ কাজ করতে পারে। বিদ্যমান জনবল দিয়েই এটা সম্ভব। একজন ব্যক্তি যখন টিআইএন নেন, তখন তার ঠিকানা, নাম, ফোন নম্বর দেওয়া থাকে। সেই তথ্যের সূত্র ধরে এনবিআর টিআইএনধারীতে চিঠি দিতে পারে, আয়কর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থাও নিতে পারে।

অন্যদিকে ঢাকা ট্যাক্সেস বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুফী মোহাম্মদ আল মামুন বলেন, এ চিন্তা করজাল ও আদায় বৃদ্ধি সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারবে না। বরং সামাজিক অসন্তোষ দেখা দিতে পারে। কারণ, এজেন্টের দায়িত্ব-কর্তব্য ও ক্ষমতা কখনোই কর কর্মকর্তাদের মতো হবে না।

করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ছে : মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিয়ে দুই অর্থবছর পরে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর। এটি বাড়িয়ে সাড়ে ৩ লাখ অথবা ৪ লাখ টাকা করা হবে। এ বিষয়ে ১৪ মে বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে এনবিআর করমুক্ত আয়ের সীমা সাড়ে ৩ লাখ টাকা রাখতে চাচ্ছে। কারণ, এ সীমা ৪ লাখ টাকা করা হলে অনেক করদাতা করজালের বাইরে চলে যাবেন। এতে কর আদায় কমে যাবে।

১০টি অর্থবছরের বাজেট বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে করমুক্ত আয়ের সীমা ছিল দুই লাখ ২০ হাজার টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আড়াই লাখ টাকা করা হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে করা হয় ৩ লাখ টাকা। গত ২ অর্থবছর ধরে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতারা সে হিসাবে আয়কর দিয়ে আসছেন।

এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করে এনবিআর-এর ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো-কমানো রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই করমুক্ত আয়ের সীমা কত হবে, সেটা সরকারের সর্বোচ্চ মহলের সিদ্ধান্তের ওপরই নির্ভর করে। তবে এনবিআর চায় এটি সাড়ে ৩ লাখ টাকা করা হোক। এতে উভয় পক্ষই (করদাতা-এনবিআর) লাভবান হবে।

করপোরেট কর এ সুখবর নেই : আগামী অর্থবছরে করপোরেট করহার অপরিবর্তিত রাখা হচ্ছে। করোনা মহামারি ও বৈশ্বিক মন্দা মোকাবিলায় টানা ৩ অর্থবছর করপোরেট কর কমানো হয়েছিল। এবার করহার না কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর।

তথ্যমতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট করহার ছিল ২৫ শতাংশ এবং তালিকাবহির্ভূত কোম্পানির ৩৫ শতাংশ। এর পরের অর্থবছরে (২০২০-২১) তালিকাবহির্ভূত কোম্পানির করহার আড়াই শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২১-২২ অর্থবছরে তালিকাভুক্ত ও তালিকাবহির্ভূত কোম্পানির করহার আড়াই শতাংশ কমিয়ে যথাক্রমে ২২ দশমিক ৫ শতাংশ ও ৩০ শতাংশ করা হয়।

সর্বশেষ চলতি বাজেটে কোম্পানির ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার আইপিওর মাধ্যমে অফলোড করলে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার আড়াই শতাংশ কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়। আর ১০ শতাংশের কম শেয়ার অফলোড করলে করহার ২২ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। সাধারণ কোম্পানির করহারও আড়াই শতাংশ কমিয়ে ২৭ দশমিক ৫ করা হয়।