জন্ম মৃত্যু এস-ব হিসেব নিকেশের কোন বালাই নাই। তাঁর জীবন চলার পথে ছিল শুধু জন্ম - সৃষ্টিতে এগিয়ে চলার ধ্যান. চিন্তা ও গভীর অনুশীলন। কূটনীতিতে, মানব-সম্পদ, গ্রাম-গ্রামান্তরে ক্ষেতে খামারে, ধ্বংস-সৃষ্টিতে, মুক্তি-স্বাধীনতা, সংস্কার-পরিবর্তনের আপোষহীন ও বঞ্চিতের একজন পথিকৃত-সমন্বয়ক সংগঠক ছিলেন। পাহাড়-সমুদ্র-উপকূলীয় প্রভাবেই লেখাপড়ার ছন্দ।
পাকিস্তান-ভারত ভাগাভাগির তরঙ্গ, সেই কলকাতার বেকার হোস্টেলের আবাসিকে ইসলামিয়া কলেজ থেকে ¯স্নাতক শেষ করেন, ১৯৪৬-’৪৭। ঢাকায় এসএম হলে থেকে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীতে ও পরে সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তান (সিএসপি) প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সিভিল সার্ভিসে ২য় স্থান অধিকার করেন। প্রশাসনিক সার্ভিসে যোগ না দিয়ে কূটনীতিক সার্ভিস চয়েজ করে নূতন অভিযানের জন্ম দিলেন, প্রথম ব্যাচ ১৯৪৯। সোনালী স্বপ্নের দেশে অফার থাকা সত্ত্বেও কম্যুনিষ্ট চীনে একমাত্র বাঙালী, পোষ্টিং নিলেন। চীন, জাপান, ইউকে, ্আমেরিকা, করাচী শেষে পূর্র্ব-পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকায় ‘পাকিস্তান’র প্রথম রিজিওনাল ফরেন সার্ভিস অফিস প্রধান হয়ে ১৯৬৫-’৬৬ সালে নুতনভাবে আবির্ভূত হলেন। পাকিস্তান সরকারের বৈষম্য বঞ্চনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী হয়ে আর না পেরে ক্ষোভে প্রতিবাদে ভিক্ষার হাতের লজ্জা ও অপমানের প্রতিবাদে, দীর্ঘ ১৮ বছরের বাহ্যিক গ্লেমারের চাকচিক্য ছেড়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হতে পদত্যাগ করেন। পাক -প্রেসিডেন্ট আয়ূব সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভূট্টোর সঙ্গে হট টক বিনিময়ের মধ্য দিয়ে আমলা থেকে মুক্তির - নব সূত্র পথ বেছে নিলেন। নিজ পৈতৃক চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানার গুমাই বিলে চাষাবাদ উৎপাদন যুদ্ধে আসীন হলেন। পাহাড়ী টিলা, নালা, জঙ্গল কেটে ‘চাষী ফার্ম’ স্থাপন করেন। রাঙ্গুনিয়া সমবায়ী, গুমাই বিল চাষীদের সঙ্গে কাজ করেন এবং তাদের কর্তৃক ‘চাষী’ নামে ভূষিত হলেন। এভাবেই মাহবুব আলম ১৯৬৮-’৬৯ থেকে চাষী নামে রূপান্তরিত হন।
১২ নভেম্বর ১৯৭০, জলোচ্ছ্বাসে চট্টগ্রাম থেকে মণতোষ দাশসহ সমবায় ফেডারেশনের দলবলসহ অবর্ণনীয় ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় নোয়াখালী জেলার উপদ্বীপ রামগতি থানার আলেকজান্ডারে সমবায় পতাকা হাতে স্থানীয় ওয়াপদা গেষ্ট হাউজে ফ্লোরে চট বিছিয়ে আস্তানা গাড়েন। স্থানীয় ‘মিতালী’ ক্লাব’র ইনফরমেশন সেন্টারের সুবাদে আমার সঙ্গে এক সমবায় - পাবলিক সভার মাধ্যমে পরিচয়। তখন থেকেই আমার পরিবর্তন-জন্মের পাড়ি ১০ ডিসেম্বর ১৯৭০। শুরু হয় কৃষি, মৎস্য, পুনর্বাসন, উৎপাদন, গৃহহীন বেঁচে থাকাদের জন্য পরিকল্পিত দেশের ১ম গুচ্ছগ্রাম-বিশ^গ্রাম’র জন্ম। যেখানে চাষী সাহেব নিজে মাটি কাটা শ্রমিকদের ‘সঙ্গে’ ওড়া কোদাল নিয়ে একটানা শ্রমিকের ‘সঙ্গে’ কাজ করেছেন। রামগতিতে তিনি ত্রাণকে সম্পদ ও পুনর্বাবসন জগতে ‘বিশ^গ্রাম’ জন্ম-সৃষ্টির এক মাইলস্টোন স্থাপন করলেন।
১৯৭১ এর ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা হলো। মাহবুব আলম চাষী ভূমিহীন বন্যার্তদের জন্য খাসজমি খোঁজার কাজে সুবর্ণরচর ‘ভাটিরটেক’ এ রাতে চরবাসীর সাথে সভা করতেছিলেন। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্বাধীনতা ঘোষণার কথা শুনলে চরবাসীকে সাহস দিয়ে জানান দেন, ‘আজ থেকে এই গ্রামের নাম হবে ‘স্বাধীন গ্রাম’। নোয়াখালী জেলা মাইজদিতে এসে স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হয়ে নূতন দেশ - স্বাধীন দেশের জন্ম বাস্তবায়ন পথে পাড়ি জমালেন। রামগতি-নোয়াখালী-ফেনী-বেলুনিয়া বর্ডার দিয়ে ভারতের আগরতলা পৌঁছেন।
তাঁর লিখা বই In Quest of Shawnirvar এ লিখেন: It, however, appeared that the MNAs and MPAs alone could furnish a sort of legal authority, as they were duly elected people’s representatives. So, a meeting of the elected representatives in Agaratala was arranged and I was given responsibility to establish an office and to conduct negotiations with Indian Government and others. The Indian authorities gave us a house at Colonel Choumunhani, wherein we established the first Secretariat in exile. I was designated as Secretary General of the Government; some of the other officers who had defected were made Secretaries. (পৃ: ১১৬-১১৭)।
এভাবে আঁতুড়-ঘরে জন্ম হলো ‘বাংলাদেশ’। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে দেশ মুক্তি পেলো। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ দেশে ফেরৎ এসে তাঁর পূর্বের গ্রাম-উন্নয়ন কাজে থাকবেন জানিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার থেকে পদত্যাগ করেলেন ১৯ নভেম্বর ১৯৭১। পাকিস্তান কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু মুক্তি পেয়ে দেশে প্রত্যাবর্তন করলে মাহবুব আলম চাষীকে এনে প্রথম স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন, সমবায় মন্ত্রণালয়ে ও পরে তাঁর কাজের ধাঁচ অনুযায়ী বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড) কুমিল্লায় দায়িত্ব দেন। ১৯৭৪’র দূর্ভিক্ষ ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ‘বার্ড’র সমন্বয়ে ‘সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন’ (TVD) কর্মসূচি উৎসারিত হয়। তদথেকে ‘গ্রাম সরকার’র জন্ম হয়। এর মধ্যে ১৯৭৫ এর ২৫ সেপ্টেম্বর ‘স্বনির্ভর বাংলাদেশ’র সংগঠনের উদ্ভব হয়। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ‘স্থানীয় সরকারই, আসল সরকার’ ঘোষণা দিলেন। তিনি এর বিধিবদ্ধতা, জবাবদিহিতা ও প্রাতিষ্ঠানিক ‘বটম আপ এপ্রোচে’র ঢাকার সাভারে ‘স্বনির্ভর গ্রাম সরকার’ রাষ্ট্রীয় ভাবে চালু করলেন। ফলে দেশ উন্নয়ন কাঠামোতে জনসম্পৃক্তা ও জনঅংশগ্রহণের বিরাট বৈপ্লবিক এক ‘সংস্কার’ কর্ম জন্ম নিল, ২০ এপ্রিল, ১৯৮০।
মাহবুব আলম চাষীর ব্যাক্তি, রাষ্ট্র, দেশ, পারিবারিক, সামাজিক, মুক্তি, স্বাধীনতা ও স্ব-নির্ভরতার অনুশীলন’র প্রকৃষ্ট উদাহরণ - তথ্যবহুল বিবরণ তাঁর দু’টো বই ÔIn Quest of ShawnirvarÕ এবং ‘মুক্তি পথের সন্ধানে’ ও আত্মশুদ্ধির ‘স্বনির্ভরে পাঁচসাথী’ প্রবন্ধটি পাঠ করলে তাঁকে নিবিড়ভাবে জানা যাবে। এত্তসব জন্ম -সৃষ্টি দিবস’র হিসাব নেয়ার কি কেউ আছে? তিনি অবশ্য কোনদিন এরকম কামনা-বাসনাও করেন নি। বরং তিনি চাষী ফার্মের উঁচু টিলায় তাঁর ‘কবর’ দেয়ার কথা বলে যান যাতে এখান থেকে গুমাই বিল দেখতে পান। বাবা মা আত্মীয় স্বজনসব গ্রাম-শহরের পারিপাশির্^কতা ত্যাগ ও বাদ দিয়ে সাধারন-বঞ্চিত কৃষক জনগণের কোলে কাঁধে কাছে থেকেই নিজকে পরার্থে ও স্বনির্ভর চেতনার আর এক জন্ম নজির রেখে গেলেন-মৃত দেহ দিয়ে।
১লা অক্টোবর ১৯২৭, এই শস্য শ্যামল বাংলার মাটিতে তাঁর জন্ম। আজ তাঁর ৯৯তম জন্ম দিবস। হজ¦ পথে তৃষ্ণার্থ মরুভূমিতে সড়ক দূর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু ৪ সেপ্টেম্বর ১৯৮৩। পিতা ছিলেন আদর্শ বিচারবান জেলা জজ মরহুম আবুল কাশেম। তিন মেয়ে, এক ছেলে ও ধৈর্য-গুনী সহধর্মিনী রেখে গেছেন।
মেধাবী কুটনীতিক ‘চাষী’ স্বাধীনতা, মুক্তি, উৎপাদন - ঢেঁকিঋণ-ক্ষুদ্রঋণ, নিরক্ষরমুক্ত, স্বনির্ভর গ্রাম সরকার এ-সকল ‘ধারাপাত’ই তাঁর, ‘আপনি করিয়া কাজ পরকে শিখাও’ - হলো আমাদের পথ নকশা। সরকার, প্রশাসন-সেবক ও রাজনীতিকদের দাবী রাখি, এর পরিচর্চা, মূল্যায়ন, আত্মশুদ্ধি, আত্ম-মর্যাদা তথা স্বনির্ভরতার পথ ধরা অনুশীলন যা রেখে গেছেন মরহুম মাহবুব আলম চাষী। ‘জন্মই যাঁর জন্ম সৃষ্টি। একই সঙ্গে ৩৬ জুলাই ’২৪’র গ্রাফিতী, সংস্কার ও পরিবর্ত্তনের সূর ধরে, ‘শুন মহাজন, আমরা বহুজন’ এগিয়ে যাওয়ার নতুন বাংলাদেশ গড়ার উন্মাদনার পথ দেখে যেতে চাই। গাইতে চাই, ‘জন্ম দিনে দিতে এলাম শুভ তোমার জয়ন্তী।’
জনগণ, জনপ্রশাসন-সেবক ও জনপ্রতিনিধি এই তিন ‘জ’ এর সম্মিলনী শক্তিই হবে, রাজনীতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্ম-কর্মের অন্তর্ভূক্তিমূলক ঐক্যবদ্ধতার স্বনির্ভর বাংলাদেশ বিনির্মাণ, ফলশ্রুতিতে হবে সাম্যতা, ন্যায্যতা ও বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ। আজকের দিনের এই কামনা। আল্লাহ্ সহায় হউন।
এএইচএম নোমান, প্রতিষ্ঠাতা র্ডপ ও কলামিষ্ট। গুসি আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কার বিজয়ী -২০১৩। Mobile: 01711520351, Email: nouman@dorpbd.org
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, আপনারা জানেন পূজা বিঘ্ন করতে পাহাড়ে এক ধরনের ষড়যন্ত্র হয়েছে। তবে এই ষড়যন্ত্র কার্যকর হয় নাই। একজনকে ধরা হয়েছিল, তিনি কিন্তু ওই কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। ওনাদের উদ্দেশ্য সফল হতে পারে নাই। লক্ষীপূজা আরও ভালোভাবে হবে।
খাগড়াছড়ি জেলার গুইমারা উপজেলায় দুষ্কৃতকারীদের হামলায় তিন জন পাহাড়ি নিহত এবং মেজরসহ ১৩ জন সেনাসদস্য, গুইমারা থানার ওসিসহ তিন জন পুলিশ সদস্য এবং আরো অনেকে আহতের ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গভীর দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে।