• 18 May, 2024

সাধারণ জনগণ অগ্নিসন্ত্রাসের শিকার হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী

সাধারণ জনগণ অগ্নিসন্ত্রাসের শিকার হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আন্দোলনের নামে আবার শুরু হওয়া অগ্নিসন্ত্রাসের শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। তিনি বলেন, আমি জানি না এসব থেকে কে কতটা লাভবান হয়। তবে কিছু লোক, বিশেষ করে সাধারণ মানুষ এসব ঘটনার শিকার হচ্ছেন।

প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার গণভবনে তার ত্রাণ তহবিলের জন্য বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে অনুদান গ্রহণের সময় এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঘুমন্ত কর্মীকে গাড়ির ভেতরে রেখেও বাসে আগুন দেওয়া হয়। আমি জানি না কেন এমন ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। তিনি বলেন, অনেক মহল শেখ হাসিনার সাফল্যকে ইতিবাচকভাবে নেয় না। শেখ হাসিনা বলেন, আমি একজন নারী হয়েও টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থেকে দীর্ঘদিন ধরে দেশ পরিচালনা করছি। আমি সফলতার সঙ্গে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পেরেছি। আমি দেশকে (আমূল) বদলে দিয়েছি। সবাই এটিকে (এই সাফল্য) ইতিবাচকভাবে দেখবে না।

প্রধানমন্ত্রী দেশের ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছরে বাংলাদেশের অগ্রগতি সবার কাছে দৃশ্যমান হওয়ায় সবাই এখন বাংলাদেশকে সম্মান করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের বাংলাদেশ ১৫ বছর আগে যা ছিল তার থেকে বদলে গেছে। এখন সবাই এটাকে সম্মান করে। বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসাবে স্বীকৃত। বাংলাদেশের অগ্রগতি সবার চোখে পড়ার মতো। প্রধানমন্ত্রী সবাইকে কাজ করতে বলেন, যাতে ভবিষ্যতে দেশের অগ্রগতির ধারা বজায় থাকে।

আসন্ন শীত মৌসুমে শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল ও অন্যান্য গরম কাপড় বিতরণের জন্য এ অনুদান গ্রহণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী অতীতের মতো আসন্ন শীত মৌসুমের আগেই তার ত্রাণ তহবিলের জন্য অনুদান দেওয়ার উদ্যোগের জন্য বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ ব্যাংকসকে (বিএবি) আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি বৈদেশিক মুদ্রার ভালো রিজার্ভ বজায় রাখতে, উচ্চ মূল্যস্ফীতি রোধ করতে এবং বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার মতো পরিস্থিতির মধ্যে অর্থনীতিকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে বিএবির কাছে সহযোগিতা কামনা করেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএবির প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম মজুমদারসহ বিভিন্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিচালকরা।

‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’ উদ্বোধন : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ঘিরে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’ উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর এই ভাস্কর্যটি নিছক একটি ভাস্কর্য নয়। এটি একটি ইতিহাস। এটি আমাদের দেশকে জানার ইতিহাস। শুক্রবার সকালে রাজধানীর বিজয় সরণিতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।

মৃত্যুঞ্জয় প্রাঙ্গণে জাতির পিতার ‘মৃত্যুঞ্জয়’ নামে একটি ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে, যা ২০২১ ও ২০২২ সালের বিজয় দিবসের প্যারেডে প্রদর্শিত হয়েছিল। এই চত্বরের কেন্দ্রস্থলে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে দেওয়ালে ম্যুরালও স্থান পেয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক নির্মিত এই চত্বরের সাতটি দেওয়ালে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে অন্যান্য আন্দোলন, বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামে জাতির পিতার নেতৃত্ব ও অবদান চিত্রিত করা হয়েছে।

উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’ পরিদর্শন করেন এবং পরে সেখানে উপস্থিত ছাত্রছাত্রী এবং সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে ছবি তোলেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান ও আত্মত্যাগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সংগ্রাম ছিল বাঙালি জাতির আর্থ-সামাজিক মুক্তির জন্য। বঙ্গবন্ধু এ দেশের মানুষের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৪৮ সালে যখন মাতৃভাষা বাংলার অধিকার হরণ করার চেষ্টা হয়েছিল তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র ছিলেন। এরপর থেকে বঙ্গবন্ধু এর প্রতিবাদ এবং আন্দোলন শুরু করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, এর ধারাবাহিকতায় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয় এবং মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার সংগ্রাম শুরু হয়। আমরা সেই সংগ্রামের মাধ্যমে আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করেছি। জাতির পিতা তার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে এই স্বাধীনতা ও যুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের জনগণ সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে অস্ত্র তুলে নিয়েছে, যুদ্ধ করেছে এবং বিজয়ী হয়েছে।

গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের বাংলাদেশ একটি উন্নত, সমৃদ্ধ এবং একটি উন্নয়নশীল জাতির মর্যাদা পেয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশকে সমুন্নত রেখে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

সেখানে উপস্থিত শিশুদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আজকের শিশুরাই আগামী দিনের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার সৈনিক। আমাদের শিশুরাই স্মার্ট বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবে, বাংলাদেশ পরিচালনা করবে। এভাবেই তোমরা নিজেদের গড়ে তুলবে।

শিক্ষার্থীদের শিক্ষা অর্জনে মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, একটি কথা মনে রাখতে হবে যে, জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ শিক্ষা। অর্থ, সম্পদ কিছুই সম্পদ নয়। (আসল) সম্পদই একমাত্র শিক্ষা। শিক্ষা ভালোভাবে গ্রহণ করলে, কেউ তার কাছ থেকে কেড়ে নিতে পারবে না। ছিনতাইও করতে পারবে না, এটা তোমার কাছেই থাকবে। আর শিক্ষা থাকলে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ করা যায়।

অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সেনাপ্রধান জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ। মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারেক আহমেদ সিদ্দিক, ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র মো. আতিকুল ইসলামসহ সামরিক-বেসামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।