শহরের টাউন কালিবাড়ি দুর্গামন্দিরে চলছে প্রতিমা সাজানোর শেষ মুহূর্তের কাজ। মূল মঞ্চে রং তুলির ছোঁয়ায় প্রাণ পাচ্ছেন মা দুর্গা ও তাঁর সন্তানরা। মন্দির প্রাঙ্গণে দেয়ালে স্থাপন করা হয়েছে মহাভারতের চরিত্র ও কৈলাশ পর্বতের দেব-দেবীর মোট ১৫টি ভাস্কর্য। খুলনার পাইকগাছা থেকে আসা তিনজন ভাস্কর প্রায় তিন মাস ধরে প্রতিমা নির্মাণে ব্যস্ত রয়েছেন। ভাস্কর নিশিকান্ত রায় জানান, “রংয়ের কাজ শেষ হলেই মহালয়ার আগে প্রতিমা হস্তান্তর করা হবে। এরপর শুরু হবে আলো ও সাজসজ্জার কাজ।”
মন্দির কমিটির সভাপতি অশোক কুমার কুন্ডুু বলেন, “এবারের পূজায় আমাদের বাজেট প্রায় ৬ লাখ টাকা। বৃহৎ আকারে এই আয়োজন সম্পন্ন করতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছি।”
শুধু টাউন কালিবাড়ি নয়, জেলার প্রতিটি পূজামন্ডপেই এখন চলছে প্রতিমা সাজসজ্জার কাজ। কোথাও মাটি লেপনের কাজ শেষ, কোথাও প্রতিমায় সংযোজিত হচ্ছে কাপড়, সিংহ-ময়ূরের অলংকার। শীতলাতলা মন্দিরের ভাস্কর অরিন্দম বিশ্বাস বলেন, “এখন খাওয়া-দাওয়ার সময় নেই, হাতে মাত্র কয়েকদিন। তাই ফিনিশিং আর রংয়ের কাজে দিনরাত এক করে যাচ্ছি।”
প্রতিমা দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন ভক্ত-দর্শনার্থীরা। গৃহবধূ চম্পা দাস বলেন, “এবার অনেক বড় করে প্রতিমা হচ্ছে, প্রতিদিন দেখতে আসি। আমাদের খুব আনন্দ লাগছে।”
পঞ্জিকা মতে, ২১ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। এ বছর দুর্গার আগমন ঘটছে গজে (হাতি) এবং গমন হবে দোলায় (পালকি)।
উৎসব নির্বিঘ্ন করতে প্রশাসনও নিয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন ইতিমধ্যে একাধিক বৈঠক করেছে। র্যাব ও সেনাবাহিনীও থাকছে নিরাপত্তা তৎপরতায়। আনসার বাহিনী মাসখানেক আগে থেকেই প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রস্তুত।
জেলা আনসার কমান্ড্যান্ট মো: নূরুল আবছার জানান, “অধিক গুরুত্বপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ মন্ডপগুলোতে থাকবে ৮ জন করে আনসার সদস্য, সাধারণ মন্ডপগুলোতে ৬ জন। পাশাপাশি পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনী ভ্রাম্যমাণ টহলে থাকবে।”
জেলা পূজা উদযাপন ফ্রন্টের সভাপতি মিলন ঘোষ বলেন, “গতবার প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও শান্তিপূর্ণভাবে পূজা সম্পন্ন হয়েছিল। এবারের প্রশাসনিক সহযোগিতা ও নিরাপত্তা আরও শক্তিশালী, আশা করছি জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশে পূজা সম্পন্ন হবে।”
জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার জাহান জানান, “প্রতিটি মন্ডপের নিজস্ব কমিটি উদযাপন পরিচালনা করবে। পাশাপাশি প্রশাসনের সব শাখাই নিরাপত্তায় থাকবে। এবারের দুর্গোৎসব অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে আরও সুন্দরভাবে উদযাপিত হবে।”
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এ বছর নড়াইল জেলায় মোট ৫৩৪টি মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ২৪১, লোহাগড়ায় ১৪৬, কালিয়ায় ৯১ এবং নড়াগাতিতে ৫৬টি মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ১২৩টি অধিক গুরুত্বপূর্ণ, ২২৩টি গুরুত্বপূর্ণ ও ১৮৮টি সাধারণ মন্ডপ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
উৎসবমুখর সাজে সেজে উঠছে নড়াইলের প্রতিটি পূজামন্ডপ। প্রতীক্ষার প্রহর গুনছে ভক্ত-দর্শনার্থীরা। মা দুর্গার আগমনে আলোকিত হবে নড়াইল।