• 19 May, 2024

নড়াইলে জাতীয় তামাকমুক্ত দিবস উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন

নড়াইলে জাতীয় তামাকমুক্ত দিবস উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন

“দেশব্যাপী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘন : তামাক কোম্পানী বেপরোয়া” এই শ্লোগানে নড়াইলে জাতীয় তামাকমুক্ত দিবস উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

নড়াইলের বেসরকারি উন্নয়ন ও মানবাধিকার সংগঠন স্বাবলম্বী’র নির্বাহী পরিচালক কাজী হাফিজুর রহমানের সঞ্চালণায় বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট ও স্বাবলম্বীর যৌথ আয়োজনে শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) সকাল ১০টায় ‘প্রিন্ট ও অনলাইন নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’ কার্যালয়, নড়াইল সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্বাবলম্বী’র নির্বাহী পরিচালক কাজী হাফিজুর রহমান এবং প্রবন্ধের উপর প্রধান আলোচক হিসেবে আলোচনা করেন নড়াইল প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক ওশানের সম্পাদক অ্যাডভোকেট আলমগীর সিদ্দিকী।  

স্বাবলম্বী’র নির্বাহী পরিচালক কাজী হাফিজুর রহমান প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, সরকার ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করতে নানা কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। অথচ তামাক কোম্পানিগুলো সরকারের জনস্বাস্থ্য রক্ষার এই মহৎ উদ্যোগকে ব্যাহত করতে নানা অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এ অপচেষ্টার মূল উদ্দেশ্য দেশের তরুণ সমাজকে ধূমপানের দিকে আকৃষ্ট করা। তারা আইন ভঙ্গ করে বিজ্ঞাপন করার পাশাপাশি, প্রণোদনা, রেষ্টুরেন্টে ধূমপানের স্থান তৈরি, বিশ^বিদ্যালয়ে দূত নিয়োগ করছে। আপনার সন্তানকে ধূমপায়ী বানিয়ে বাণিজ্য করাই তাদের উদ্দেশ্য। দেশে ব্যবসা করা ২টি বিদেশী সিগারেট কোম্পানি এই বেআইনী কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিচ্ছে।

প্রবন্ধে আরও বলা হয়, তামাক ব্যবহারজনিত রোগে প্রতিবছর বাংলাদেশে ১ লক্ষ ৬১ হাজার মানুষ মারা যায় এবং ১৫ লক্ষাধিক মানুষ তামাক ব্যবহারজনিত নানা জটিল রোগে ভুগছে। প্রতি বছর ৬১ হাজারের অধিক শিশু পরোক্ষ ধূমপানের কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। এইসব অকাল মৃত্যু এবং জটিল রোগ ভুক্তভোগী পরিবারকে সম্পূর্ণ এলামেলো করে দেয়। দেশের অর্থনীতিতেও তা ভয়ংকর নেতিবাচক প্রভাব রাখে।

২০১৮ সালে বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি কর্তৃক পরিচালিত গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে তামাক ব্যবহারজনিত রোগের চিকিৎসা ব্যয় এবং কর্মক্ষমতা হ্রাসের কারণে সরকারের বাৎসরিক ব্যয় হয় ৩০ হাজার কোটি টাকা । বিগত ৫ বছরে তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে এই ব্যয় যে আরো বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।


সম্প্রতি দেশের ৫টি সিটি কর্পোরেশন, ১৬টি জেলা ও ৩২টি পৌরসভায় পরিচালিত জরিপে ২২,৭২৩ টি বিক্রয়কেন্দ্রে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা কার্যক্রমের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এই বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রায় সাড়ে ২৭ হাজার লঙ্ঘন চিহ্নিত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মীরা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক তামাকের বিজ্ঞাপন অপসারণ করেছে।

অতি সম্প্রতি নড়াইল জেলার ১৪টি এলাকায় (রূপগঞ্জ বাজার, মুচিরপোল, পুরাতন বাসর্টামিনাল, এড়েন্দা বাজার, লোহাগড়া বাসটার্মিনাল, লোহাগড়া বাজার, মহাজন বাজার, দিঘলিয়া বাসট্যান্ড, কালিয়া বাজার, মাইজপাড়া বাজার, নাকশী বাজার, নলদী বাজার, মিঠাপুর বাজার, লাহুড়িয়া বাজার) পৃথক এক পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে নানাভাবে তামাক কোম্পানিগুলো তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘন করে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।

পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশেপাশে, বাজার, বাস স্টেশন ও জনবহুল এলাকায় তামাকের বিজ্ঞাপন ও প্রচারণার হার বেশি। বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতে হঠাৎ তামাক কোম্পানীর কর্মচারীর উপস্থিত হয়ে দোকানে একটি ডেমো প্রদর্শন করে ছবি তুলে সেটা আবার গুটিয়ে নেয়, এছাড়া অভিনব ও আকর্ষণীয় উপায়ে প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

এছাড়াও ক্রেতা ও বিক্রেতাকে লোভনীয় সামগ্রী উপহার হিসেবে দেওয়া। সিগারেট সরবরাহের বাহনসমূহেও (ভ্যান, পিকাপ ভ্যান) সিগারেট কোম্পানীর নাম বড় করে লিখে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করছে। আইনে অপ্রাপ্ত বয়স্কদের কাছে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও বিক্রেতারা শিশু-কিশোরদের কাছে অবাধে সিগারেট বিক্রি অব্যাহত রয়েছে।

এখানে শুধুমাত্র নড়াইল জেলার তথ্য উপস্থাপন করা হলেও সারাদেশের চিত্র প্রায় একই রকম। উক্ত বিষয়টি অবহিত করে ইতিমধ্যে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য প্রশাসনের বরাবর অনুরোধ জানিয়ে তামাক বিরোধী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে।

তামাক কোম্পানির প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় ‘বিক্রয়কেন্দ্র’গুলোতে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন ও প্রচারণার পাশাপাশি বিক্রেতাদেরকে ‘পার্টনার’ হিসেবে চুক্তিবদ্ধ করে আর্থিক প্রণোদনা দিচ্ছে। ‘পার্টনার’ বিক্রেতা হিসেবে প্রায় ৪৮টি দোকান রয়েছে।

প্রবন্ধের উপর অন্যান্যের মধ্যে আলোচনা রাখেন, আরটিভি ও দৈনিক সময়ের আলোর প্রতিনিধি মোস্তফা কামাল, এখন টেলিভিশন ও দৈনিক বণিকবার্তার প্রতিনিধি মো. ইমরান হোসেন, দৈনিক আমার সংবাদ এর কাজী আনিচুজ্জামান, একুশ টেলিভিশন ও দৈনিক সংবাদের প্রতিনিধি ফরহাদ খান, এডাব নড়াইল জেলা শাখার সভাপতি ও নড়াইল নারী উন্নয়ন সংস্থার পরিচালক কোহিনূর আক্তার, স্বাবলম্বীর সমন্বয়কারী স্বপ্না রাণী রায় প্রমূখ।  

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে গাজী টিভির মীর্জা মাহমুদ হোসেন রন্টু, সাংবাদি সুলতান মাহমুদ, বাসস ও দেশ টিভির প্রতিনিধি শরিফুল ইসলাম বাবলু, স্বপন বিশ্বাস, আবদুল কাদের, সাপ্তাহিক ও অনলাইন সংস্কার নড়াইলকণ্ঠ এর ফটো সাংবাদিক মাসুম জব্বারী, রুবেল হুসাইন, সৈয়দ স¤্রাট আলীসহ  প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।  

সংবাদ সম্মেলন সাংবাদিকদের মাধ্যমে আয়োজকদের পক্ষ থেকে কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়:
সুপারিশের মধ্যে রয়েছে- দ্রুততম সময়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনী চূড়ান্ত করা; তামাক কোম্পানির প্রভাব থেকে নীতি সুরক্ষায় এফসিটিসি এর অনুচ্ছেদ ৫.৩ অনুসারে ‘কোড অব কন্ডাক্ট’ গ্রহণ; ‘জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি’ দ্রুত চূড়ান্ত এবং দেশব্যাপী যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণ করা; টাস্কফোর্স কমিটিসমূহ সক্রিয় করা, কমিটির ত্রৈমাসিক সভা নিয়মিতকরণ, সভার সিদ্ধান্তসমূহ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা; আইন লঙ্ঘনের দায়ে তামাক কোম্পানি/প্রতিনিধিকে আর্থিক জরিমানার পাশাপাশি জেল প্রদান; আইন লঙ্ঘনকারী তামাক কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা; তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন মনিটরিং কার্যক্রমের সাথে বেসরকারী সংস্থাগুলোকে সম্পৃক্ত করা;মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুসারে একটি শক্তিশালী তামাক কর নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা।