• 25 Dec, 2025

নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে বিতর্ক: পিআর পদ্ধতি কী? বাংলাদেশে তা বাস্তবসম্মত কিনা?

নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে বিতর্ক: পিআর পদ্ধতি কী? বাংলাদেশে তা বাস্তবসম্মত কিনা?

লেখক: কাজী হাফিজুর রহমান, সম্পাদক, নড়াইলকণ্ঠ: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশজুড়ে নানা আলোচনা চলছে। কেউ বলছেন, আওয়ামী লীগ পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন করলে সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবে। আবার কেউ মনে করেন, এতে বিরোধীদলের অংশগ্রহণ আরও সংকুচিত হতে পারে। কেউ কেয়ারটেকার সরকারের কথা তুলছেন, আবার কেউ উচ্চকক্ষের প্রয়োজনীয়তা দেখছেন। এইসব বিতর্কের ভেতরে, অনেকেই যেমনটি বলছেন, “আমি তো জানিই না পিআর পদ্ধতিটা কী?

পিআর পদ্ধতি আসলে কী?

পি আর মানে ‘Proportional Representation’ বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে জনগণের দেয়া ভোট সরাসরি একটি রাজনৈতিক দলের প্রাপ্ত আসনের সঙ্গে আনুপাতিকভাবে সম্পর্কযুক্ত। অর্থাৎ, যদি একটি দল মোট ভোটের ৩০% পায়, তবে তারা সংসদের আসনেরও প্রায় ৩০% পায়যদিও তারা কোনো নির্দিষ্ট আসনে সংখ্যাগরিষ্ঠ না-ও হতে পারে।

 

উদাহরণ: ১০০ আসনের একটি সংসদে যদি একটি দল মোট ভোটের ২৫% পায়, তবে তারা প্রায় ২৫টি আসন পাবে। এতে বড় দল ও ছোট দলগুলোর মাঝে ভারসাম্য থাকে এবং সংখ্যালঘু দলের প্রতিনিধিত্ব বাড়ে।

 

বাংলাদেশের সংবিধানে কী বলা আছে?

 

বাংলাদেশ সংবিধানের ৬৬ থেকে ৭১ নম্বর অনুচ্ছেদ সংসদ ও সদস্য নির্বাচনের পদ্ধতি নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে অনুচ্ছেদ ৬৬(১) অনুযায়ী, সংসদ সদস্য হতে হলে নির্বাচিত হতে হবে নির্বাচনী এলাকা থেকে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে।

 

অর্থাৎ, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রচলিত পদ্ধতি হচ্ছে "First Past the Post" (FPTP)—যেখানে যেই প্রার্থী সবচেয়ে বেশি ভোট পান, তিনিই জয়ী হন, বাকি ভোট বিবেচনায় আসেনা।

 

তবে সংবিধানে পিআর পদ্ধতি সরাসরি নিষিদ্ধ নয়, কিন্তু তা প্রয়োগ করতে হলে জাতীয় রাজনৈতিক ঐকমত্য ও আইন সংশোধনের প্রয়োজন রয়েছে।

 

পিআর পদ্ধতি কি বাংলাদেশে বাস্তবসম্মত?

সুবিধা:

 

ছোট দলগুলোর সুযোগ বাড়ে।

 

সংখ্যালঘু ও নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা সহজ হয়।

 

ভোটের মূল্যায়ন বেশি হয়হারানো ভোট কমে।

 

অসুবিধা:

সরাসরি এমপি আর থাকেন না, তাই জনগণের সঙ্গে সরাসরি জবাবদিহিতা কমে।

 

জোটভিত্তিক রাজনীতিতে বিশৃঙ্খলা বাড়তে পারে।

 

দুর্নীতিপরায়ণ বা ব্যবসায়িক প্রভাবশালী দলেরাও দলীয় প্রার্থীতার মাধ্যমে পার পেতে পারেন।

 

আগামী নির্বাচন ও জনগণের করণীয়

আগামী নির্বাচনের আগে ‘নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা প্রয়োজন। আমরা কেবল কে জিতলো, কে হারলো, সেই আলোচনায় না গিয়ে ‘কীভাবে আমরা সবাই মিলে প্রতিনিধিত্বমূলক ও স্বচ্ছ নির্বাচন চাই’—সে আলোচনায় প্রবেশ করাই শ্রেয়।

 

উপসংহার

পি আর হোক বা “কেয়ার টেকার, “উচ্চকক্ষ হোক বা “নতুন কমিশন”—সবকিছুই বাস্তবতার নিরিখে, গণতন্ত্রের মূলনীতিকে অক্ষুণ্ন রেখেই হওয়া উচিত। আমাদের জানা দরকার, কেবল পদ্ধতি নয়মনোভাব, নৈতিকতা ও রাজনৈতিক সদিচ্ছাই একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ভিত্তি।